৭১ এর চেতনা খেয়ে মানুষ বাঁচে না

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৭, ২০১৯

ছবিটা বালোচিস্তান বা বেলুচিস্তানের। আসছে ১ মে, সেখানে মে দিবস পালনের প্রস্তুতি চলছে। কোন সংগঠন এই প্রস্তুতি নিচ্ছে তা নিশ্চিত হতে পারি নাই। তবে তাদের একটা পরিচয় আছে, তারা শ্রমিক।

রুশ বিপ্লবের মহান নেতা লেনিন, ১৯১৭`র রুশ বিপ্লবকে ব্যাখ্যা করেতে গিয়ে যা বলেছিলেন, তার সারকথা কিছুটা এমন— পুরো দুনিয়ার পুঁজিবাদকে আলাদা করে দেখার চেয়ে একত্রে একটা শৃঙ্খল হিসেবে দেখা জরুরি।

একইভাবে শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। তাই বাংলাদেশে বসে, বাংলাদেশের শ্রমিকসহ পাকিস্তান বা বেলুচিস্তানের শ্রমিকদের প্রতিও সম্মান দেখানো অবান্তর হবে না। বেলুচিস্তান বা পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের শ্রমিকদের আলাদ করে দেখার খুব একটা সুযোগ নাই। পাকিস্তান এবং বেলুচিস্তানের শ্রমিকরা রাষ্ট্রীয় আইনে সর্বনিম্ন বেতন পান ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেই পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হলেও, এই অঞ্চলের শ্রমিকের বেতন ৫৩০০ থেকে ৮ হাজারের ঘরে। শুধু ৭১ এর চেতনা খেয়ে মানুষ বাঁচে না, ইনসাফ ছাড়া আদর্শও টেকে না।

বেলুচিস্তানে ফিরে আসা যাক, কারণ বাংলাদেশের মতো তারাও পাকিস্তান থেকে আলাদা হবে হয়তো দ্রুত। সে সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। বেলুচিস্তান দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম এই প্রদেশটির আয়তন ৩,৪৭,১৯০ বর্গকিলোমিটার এবং এটি পাকিস্তানের মোট আয়তনের প্রায় ৪৮% গঠন করেছে। সবচেয়ে বড় প্রদেশ হলেও এর জনসংখ্যা পাকিস্তানে সবচেয়ে কম। পাকিস্তানের ৪০ ভাগ মানুষ পশতুন।

১৯৪৭ থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের মতোই ভাগ্য বেলুচিস্তানের মানুষের। নানা লেখায় উঠে এসেছে সে কাহিনি— ১৯৪৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বেলুচিস্তানের পার্লামেন্ট পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রিতকরণের বিরোধিতা করে।

নানা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বৈষম্যের ইতিহাস। এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বেশিরভাগ পরমাণু পরীক্ষা বেলুচিস্তানে চালানো হয়। তাদের খনিজ সম্পদ ব্যবহৃত হচ্ছে পুরো পাকিস্তানের অগ্রগতিতে। এ বৈষম্যের সর্বশেষ নমুনা গোয়াদার বন্দর। প্রদেশটির হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে অথচ বালুচদের সেখানে সম্পৃক্ত করা হয়নি। প্রথম থেকেই বৈষম্য চলছে এই প্রদেশটির ব্যাপারে।

২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৪৮ সালে বেলুচি ভাষাকে দাবিয়ে রেখে উর্দুকে চাপিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা। এখনও সেখানকার প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বেলুচ ভাষায় পড়ানো হয় না। এমনকি বেলুচ ভাষা শিক্ষার ওপরও কোনো বই নেই স্কুলগুলোর শিক্ষা কারিকুলামে।

শের মোহাম্মদ মারির নেতৃত্বে ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত আন্দোলন করে বেলুচিস্তানের কয়েকটি উপজাতি। ১৯৬৭ সাল থেকে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে বালুচ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন। সম্প্রতি বেলুচদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানকার মাদ্রাসাগুলোতে ঢুকে পড়ছে তালেবান। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বেলুচিস্তানের ৪০ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছে এবং ১০ হাজার মানুষ খুন হয়েছে।

এই মানুষের মধ্যে শ্রমিক বা নিম্নবর্গের মানুষই বেশি। তাদের সংগ্রাম, ৭১ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ থেকে আলাদা কিছু না বরং তারা যেমন ৭১এর শিক্ষা নিতে পারে, একই সাথে ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশ থেকেও শিক্ষা নিতে পারে। আর আমরা শিক্ষা নিতে পারি তাদের সততা থেকে।

যদিও বেলুচিস্তান নিয়ে ভারত-পাকিস্তান-ইরান দ্বন্দ্ব/রাজনীতি জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সবার ঊর্ধ্বে মানুষের মুক্তি। বেলুচিস্তান মুক্তি পাক। পাকিস্তানের শ্রমিকরা ভাইরাও দেশটির দীর্ঘ সেনা শাসন থেকে স্বাধীন হোক, আন্দোলন আরো শক্তিশালী হোক। এই হোক মে দিবসের আশা। একই সাথে দুনিয়ার সকল শ্রমিক তাদের অধিকার ফিরে পাক।