হেমন্তের এক বিকেল
ফারুক ইমনপ্রকাশিত : নভেম্বর ৩০, ২০১৭
হেমন্তকালের বিকেলগুলো এমনিতেই সুন্দর হয়। এরমধ্যে উত্তর-পশ্চিম কোণের পড়ন্ত সূর্যের রোদ পড়লে তা আরও আবেগঘন হয়ে ওঠে। হেমন্তের বিকেলগুলোতে অনেকেই দলবেঁধে হেঁটে বেড়ায় এই উপত্যকায়। তেমনই একটা দল হাঁটতে বেড়িয়েছে।
প্রায় দুশো ফুট উঁচু পানির ট্যাংকিটার কাছে এসে দলের একজন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল, কে কে ওই পাতলা লোহার মই বেয়ে ট্যাংকির মাথায় উঠতে পারবে? পারবে কেউ?
দলে মোট রয়েছে সাতজন। এরমধ্যে দুজন এগিয়ে এলো। এ দুজনই দলের সবচে দুরন্ত আর ছটফটে। সারা পথ তারা পুরো দলটাকে মাতিয়ে রেখেছিল। এমন যে, দুরন্তপণায় দুজনের কেউ কাউকে এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ। বন্ধুতার খাতিরে তা সব সময়ই দলের অন্যান্যরা টের পাচ্ছিল।
ট্যাংকির মইয়ের নাগাল পাওয়াটা অত সহজ নয়। মাটি থেকে প্রায় আট ফুট ওপরে মই। অনেকক্ষণ লাফিয়ে চেষ্টা করেও দুজনের কেউই মই ছুঁতে পারল না। তবে তারা হাল ছেড়ে দেয়ার মতোও পাত্র নয়। পাশের বিল্ডিংয়ের কার্নিশে উঠে তার পাশে উঁচু হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা নিমগাছের ডাল ধরে তারা দুজনই ঝুলে পড়ল। এরপর ধরে ফেলল মই। আর কি, এবার তরতর করে তারা উঠতে লাগল মই বেয়ে। প্রথম ৩০-৪০ ফুট উঠতে খুব বেশি কষ্ট তাদের করতে হলো না। মইটা সোজা উঠে গেছে। কিন্তু মূল ট্যাংকির গায়ে ওঠার আগের সিঁড়ি পেছন দিয়ে ঝুলানো থাকায় অত ওপরে কোনও প্রটেকশন ছাড়া ঝুলে ঝুলে ওঠাটা খুবই রিস্কি। আর এত দূর ওঠার পরে দুজনেই বেশ ক্লান্ত। হাঁপাচ্ছিল তারা। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দলটি বেশ আতঙ্কিত তাদেরকে নিয়ে। দলের মেয়েরা তাদেরকে নেমে আসার জন্য বারবার বলছে। দুজনের সাহসের তারিফ করে নেমে আসতে বলছে আকুলভাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
এমন সময় শুরু হলো প্রবল হাওয়া। একসময়ে বইতে শুরু করল দমকা হাওয়া। ঝড়ের আগাম সংকেত। নিচের লোকগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ট্যাংকির ওপর দুজনের শার্ট পত পত করে উড়ছে। ফুলে উঠছে বাতাসে। দুজনই শক্ত করে ধরে আছে লোহার মই। তাদের হাতের পেশি লাল হয়ে উঠছে। এ মুহূর্তে নিচে নামাটাও প্রায় অসম্ভব। বেশ ঝুকিপূর্ণ। আবার ওভাবে ঝুলে থাকাটাও কিংবা ওপরে ওঠাও।
একসময়ে প্রবল বাতাস কিছুটা কমে এলো। ওরা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলো।
দলের অন্যরা এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ট্যাংকিতে ওঠার আইডিয়াটা যার ছিল, সে-ই সবচে বেশি ভয় পেয়েছে। প্রায় কাঁদো-কাঁদো অবস্থা তার। বেশ পরিশ্রম হয়েছে ওদের দুজনের। হাঁসফাঁস দম নেয়াতেই বোঝা যাচ্ছে।
কেউ কিছু না বলে নিরাপদ একটা ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো পুরো দলটি। অসময়ে তাণ্ডব দেখে দলের সবাই দারুণ বিস্মিত। এ তো ঝড় নয়, ঝড়ো হাওয়া, ধুলো উড়ছে এলোপাথারি, আকশের মেঘগুলো ছুটছে খুব বেগে। চমৎকার বিকেলটি দেখতে দেখতে হয়ে উঠল অন্ধকার এক ভয় জাগুরুক সন্ধ্যা।