স্বাধীন খসরু

স্বাধীন খসরু

স্বাধীন খসরুর খুদে গল্প ‘খেয়া পারাপার’

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪

শিক্ষক: ও মাঝি, রহিমরে নিয়া কি ছিন্তা করলা? কয়েকদিনের মধ্যেই তো এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট আউট হইবো।
মাঝি: হো মাস্টার সাব, রহিম কইছে। এহনো কিছু ছিন্তা করি নাই। রিজাল্ট আগে বাইর হউক, হের পর দেখবো নে।
শিক্ষক: শুনো মাঝি, আগে থাইকা ছিন্তা করণ লাগবো। কোন কলেজে ভর্তি করাইবা? টাকা পয়সারও তো যোগাড় করণ লাগবো।
মাঝি: হো মাস্টার সাব, কথা ঠিকই কইছেন। দেহি রহিমের মার লগে আইজকাই শলা পরামর্শ করুম।
শিক্ষক: আইচ্ছা মাঝি বলো তো, লেখাপড়া শিখাইয়া ছেলেরে কি বানাইবার ছাও?
মাঝি: আমারতো ইছ্ছা আছিল মাস্টার সাব, আমার রহিমরে ডাক্তার না-হয় আপনের মতো মাস্টার বানামু। গরিব মানুষ খালি অসুখ বিসুখ লাইগাই থাহে। ডাক্তার হইলে ছিকিৎসা করবো। আর না-হয় আপনের মতো মাস্টার, গেরামের গরিব বাচ্ছা গো পড়াইব। কিন্তু ওর মায়ের ইচ্ছা, ওরে ইঞ্জিনিয়ার বানাইব। ইঞ্জিনিয়ার হইলে নাকি বেশি টেকা-পয়সা কামান যায়। আমাগো গেরামের বাজারে রইস আলী ভাঙাড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং দোকান দিয়া দুইখান পাকা দালান তুলছে গত বছর।

শিক্ষক: শুনলাম, বুঝলাম, তোমার বউ আর তোমার ইচ্ছার কথা রহিমেরে নিয়া। ও কি চায় সেইটা কি ওরে জিগাইছো?
মাঝি: ও আগে বলতো লেখাপড়া শেষ কইরা মাস্টারি করব। কিন্তু ওর মায় না করতো। বলতো, মাস্টারি করলে সারা জীবনে একখান টিনের চাল দিয়া ঘর তুলতে পারবা না। মাসেও একবার গরুর মাংস পাতে জুটবো না।
শিক্ষক: ওহ, তাহলে?
মাঝি: মাস্টার সাব, তয় অহন রহিম কয় লেখাপড়া শেষ কইরা কি লাভ? তার আগেই হে কিছু একটা হইতে পারবো।
শিক্ষক: তাই নাকি?
মাঝি: জানতে চাইলাম কি সেইটা? সে কইলো, হয় সমুন্নুক না-হয় শহিদ! কইলাম, বাপধন এইগুলা কি আর আমি বুঝি। তুমি তুমার ভালা বুঝলেই হইবো। কইলাম, আপনের লগে কথা কইতে এই বিষয় নিয়া। হে কইলো, এইগুলা আপনেরে কয়ন যাইবো না। আপনে এইগুলা বুঝবেন না। কইলো, আপনের কাজ স্কুলে বাচ্ছা পড়ানো, তার বেশি কিছু না। কইলাম, বাপধন আমারে আরও একটু খুইলা বুঝাইয়া কও। কইলো, সমুন্নুক হইলো অফছেষ্টা না উফদেষ্টা হওয়ন যাইবো। তখন খালি টেহা আর টেহা। পুলিশ গাড়ি দিয়া পাহারা দিব। শহিদ হইতে পারলে সোজা বেহেশতে ঢুকন যাইবো। আর সত্তইরটা পরিটরি কি কইলো, বুঝবার পারি নাই মাস্টার সাব।

শিক্ষক: হুম যাই মাঝি।
মাঝি: আসসালামুয়ালাইকুম মাস্টার সাব।

লেখক: অভিনেতা