স্বকৃত নোমানের গল্প ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গল্প’
প্রকাশিত : জুলাই ২৪, ২০১৯
ছেনিটা ধারালো ছিল। সজীবের ধড় থেকে কল্লাটা আলাদা করতে তিন পোঁচের বেশি লাগল না। কচি মাংস, এর বেশি লাগার কথাও নয়। চুলগুলো মুঠোয় ধরে কল্লাটা তুলে কমোডের ওপর রাখলাম। জিন্দা মানুষের মতো চোখ দুটির পলক পড়ছে। আমি চমকে উঠলাম। পলক পড়ছে বলে নয়, তার মুখটা দেখে। এমন মায়াময় মুখ! এমন মায়াময় চোখ! মানুষের চোখে-মুখে এমন মায়া থাকতে পারে! আগে তো কখনো খেয়াল করিনি! আমার বুকটা কেঁপে উঠল। মনে পড়ে গেল সীমারের কথা। বহু বছর আগে, আমি যখন সজীবের বয়সী, দাদির মুখে শুনেছিলাম সীমারের গল্প। এজিদ বাদশার হুকুমে কারবালার ময়দানে হোসেনের কল্লা কাটল সীমার। কাটা কল্লাটা নিয়ে সে রওয়ানা হলো এজিদের দরবারে। দাদি বলেছিল, পাষাণ মানুষের বুকে নাকি রোম থাকে না। সীমারের বুকেও ছিল না। চট করে গেঞ্জিটা তুলে আমি বুকের দিকে তাকালাম। ঘন কালো রোমে ঢাকা বুক; যেন ছোটখাট একটা জঙ্গল। দাদির কথা সত্যি নয়, পাষাণ মানুষের বুকেও রোম থাকে।
দ্রুত সিঁড়ি টপকে দোতলায় উঠে ছেনিটা আবার রুমের কোণায় বালির স্তুপে ঢুকিয়ে রাখলাম। কাপড়ের থলেটা নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ডানে-বাঁয়ে তাকালাম সতর্ক চোখে। কেউ নেই। দ্রুত পশ্চিমের জানালাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাস্তাটাও ফাঁকা। এমন ভরদুপুরে এই রাস্তায় মানুষের চলাচল খুব একটা থাকে না। বাড়িটা পাড়ার মকবুল বেপারির। চার তলা ফাউন্ডেশন। তিন তলা পর্যন্ত তুলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। সাত-আট মাস ধরে এভাবেই পড়ে আছে। দরজা-জানালাও এখনো লাগানো হয়নি। হয়ত টাকা ফুরিয়ে গেছে, হাতে টাকাপয়সা এলে আবার শুরু করবে।
সজীবকে জবাই করার জন্য এর চেয়ে নিরাপদ জায়গা পাড়ার কোথাও খুঁজে পাইনি। বাড়িটা সজীবদের বাসার কাছেই। উত্তরে একটা পুকুর, তারপর রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত একটা ঘুমটি দোকান, তারপরেই সজীবদের বাসা। কয়েক বাড়ি পরেই আমাদের বাসা। সজীবকে এই বাড়িতে আনতে আমার কষ্ট হয়নি। দোতলার একটা রুমে ঘুঘু পাখি বাসা বেঁধেছে শুনেই সে আমার সঙ্গ ধরে। তাকে নিয়ে সোজা উঠে পড়ি দোতলায়। উত্তর কোণার রুমটায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে গামছা দিয়ে তার মুখটা বেঁধে ফেলি। সজীব ভেবেছিল আমি বুঝি তার সঙ্গে দুষ্টুমি করছি। বাচ্চা ছেলে, সাত-আট বছর বয়স, মৃত্যু কী জিনিস এখনো বোঝে না, এই বয়সে তো সব কিছুকেই দুষ্টুমি ভাবে। রুমের কোণায় রাখা দড়িটা নিয়ে ঝটপট বেঁধি ফেলি তার হাত দুটি। সজীব এবার চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু মুখ তো বাঁধা। শব্দটা মুখের ভেতরেই ঘুরপাক খেতে থাকে। বালির স্তুপ থেকে চেনিটা বের করার সঙ্গে সঙ্গে সে আবার চিৎকার করে ওঠে। আমি তার গলাটা চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাই নিচতলার বাথরুমে। ধাক্কা মেরে ফেলে দিই মেঝেতে। এক মুহূর্তও দেরি না করে তার বুকে পা দিয়ে ঠেসে ধরে গলায় চালিয়ে দেই ছেনিটা।
বাইরের টিউবওয়েল থেকে হাতমুখ ধয়ে এলাম। ততক্ষণে কল্লাটা থেকে রক্ত পড়া থেমে গেছে। পড়লেও কিচ্ছু করার নেই, এখুনি সরে পড়তে হবে। বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। কেউ আসে না তাতে কি, আসতে কতক্ষণ? কল্লাটা একটা পলিথিনের ঠোঙায় ঢোকালাম। রক্ত পড়লে ঠোঙায় পড়ুক। ঠোঙার মুখে শক্ত করে একটা গিঁট দিয়ে কল্লাটা ঢোকালাম কাপড়ের থলেটায়। থলেটা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দ্রুত আঙিনা পেরিয়ে রাস্তার ধারে আমগাছটার তলায় দাঁড়িয়ে ডানে-বাঁয়ে তাকালাম। একটা রিকশা আসছে। চট করে পিছু হটে লুকিয়ে পড়লাম আমগাছটার পাশে ঝোঁপের আড়ালে। রিকশা চলে গেল। আমি আবার হাঁটা ধরলাম।
হাঁটছি না, যেন আনন্দসমুদ্রে সাঁতার কাটছি। আমাকে আর পায় কে? আমি এখন পাঁচ লাখ টাকার মালিক। পাঁচ লাখ কেন, কল্লাটার দাম দশ লাখও হতে পারে। আরো বেশিও হতে পারে। হবে না? চল্লিশ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা নদীর উপর সেতু বানাচ্ছে সরকার। কাজ প্রায় শেষের পথে, আর মাত্র একটা পিলার বাকি। মানুষের কল্লার জন্য ঠেকে আছে পিলারের কাজ। কয়েক শ কল্লা দেওয়া হয়েছে, আরো কয়েক শ নাকি লাগবে। সারাদেশ থেকে ছেলেপিলেদের কল্লা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকার নাকি বলেছে যত কল্লা লাগে দেওয়া হোক। যত দ্রুত সম্ভব সেতুর কাজ শেষ করতে হবে।
কল্লাটা বিক্রি করে সোজা চলে যাব গাজীপুর। কত দিন হেরোইন খাই না! শেষবার খেয়েছিলাম বছর দুই আগে। কোরবানির হাটে বাবা তখন বলদ দুটি ষাট হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল। টাকাগুলো রেখেছিল বালিশের ওয়ারের ভেতর। গভীর রাতে একটা বাণ্ডিল নিয়ে আমি দিলাম চম্পট। বাণ্ডিলে ছিল দশ হাজার টাকা। চলে গেলাম ময়মনসিংহ। হেরোইন কারবারি সোহাগের কাছ থেকে সাড়ে আট হাজার টাকায় কিনলাম এক পুরিয়া হেরোইন। পাঁচ শ টাকা কম নিতে তাকে কত করে বললাম, সে পাঁচ পয়সাও কম নিল না। কল্লাটা বেচে গাজীপুরের আতর আলীর কাছ থেকে এক কেজি হেরোইন কিনে আনব। কয়েক পুরিয়া সোহাগ শালার বেটার মুখে ছুঁড়ে মারব। নে মাদারচোদ, নে। কয় পুরিয়া লাগবে, নে। তারপর ট্রেন ধরে সোজা চলে যাব ঢাকায়। আর চালাব না রিকশা। শালার রিকশা! গরুর মতো সারাক্ষণ কেবল টানো আর টানো। কোন বাইঞ্চোত যে এই জিনিস আবিষ্কার করেছে।
বটতলা চৌরাস্তার মোড়ে যাওয়ার পর আমার মাথায় চেপে বসল ফেনসিডিলের নেশা। সজীবকে ডেকে আনার আগে মকবুল বেপারির দোতলায় বসে বসে দুই স্টিক গাঁজা টেনেছিলাম। এতক্ষণে জমে উঠেছে নেশাটা। চোখের সামনে জগত-সংসার ঘুরছে। গাঁজা খেলেই আমার ফেনসিডিল খেতে ইচ্ছে করে। ফেনসিডিলের পর চিনি বাড়িয়ে এক কাপ দুধ চা। তারপর একটা সিগারেট। আহ! টান দিলে মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা সার্থক। কিন্তু কোথায় পাব ফেনসিডিল? পকেটে আছে মাত্র আশি টাকা। হাবলু কি বাকিতে দেবে? মনে হয় না। আগেরও দেড় হাজার টাকা বাকি পড়ে আছে। দেখলেই টাকার জন্য চেপে ধরে। শালা একটা মাক্ষিচোষ। টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। বাকির কথা শুনলেই মাথায় ঠাটা পড়ে। আরে শাউয়ার বেটা, তোর টাকা কি আমি মাইরা খামু? ক’টা দিন ধৈর্য ধরলে কি তোর শাউয়া পোকায় ধরবে?
কিন্তু কিছু একটা তো খেতে হবে। আরো বাড়াতে হবে নেশা। সজীবের মুখটা এখনো চোখের সামনে ঘুরছে। মুখটা আমি ভুলে যেতে চাই। নেশার ঘোরে ডুব দিলে ভুলে যাব। ভুলতেই হবে। বালের মায়া! জগতে এসব মায়াটায়ার দাম নেই। কী করা যায়? ডোমপাড়ায় গিয়ে চোলাই খাব? মন্দ হয় না। নেমে পড়লাম ডানের পাকা রাস্তাটায়। রাস্তাটা গেছে ডোমপাড়ার দিকে। গঙ্গারাম গোপনে চোলাই বেচে। এক ঠোঙা এক শ টাকা। তার কাছেও পাঁচ শ টাকা বাকি পড়ে আছে। বলে-কয়ে আশি টাকায় রাজি করাতে পারি কিনা দেখি।
খানিক দূর গিয়ে থলেটার দিকে তাকিয় দেখি একটা কোণা লাল হয়ে উঠেছে। উঁচু করে দেখি ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে। আরে শালা! রক্ত পড়ছে কেন? ঠোঙাটা কি ফুটো ছিল? থলেটা খুলে দেখতে ইচ্ছে করল। কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে! ঝটপট রাস্তা থেকে এক খাবলা বালি নিয়ে থলের কোণাটায় মেখে দিলাম। না, এবার আর রক্ত পড়ছে না। লাল দাগটাও দেখা যাচ্ছে না।
একটা মোটর বাইক হর্ন বাজিয়ে শাঁই করে চলে গেল। দাড়িওয়ালা একটা লোক এগিয়ে আসছে। প্রথমে মনে হলো আমার বাপ। আমার বাপেরও এমন দাড়ি, শার্টটাও একই রঙের। ভালো করে খেয়াল করে দেখি কাটলির ইলিয়াছ মণ্ডল। ধুশ্ শালা! কাকে বাপ ভাবছি! মণ্ডল আরো কাছে এগিয়ে এলো। তার চোখ আমার থলেটার দিকে। আমি শিউরে উঠলাম। সহসা সে চোখ ফিরিয়ে নিল। সোজা হাঁটতে লাগল বটতলার দিকে। আমি ডানে বাঁক নিয়ে ঢুকে পড়লাম ডোমপাড়ায়। জোর কদমে হেঁটে গঙ্গারামের ঝুপড়ির সামনে দাঁড়ালাম।
গঙ্গাদা!
সাড়া নেই।
ও গঙ্গাদা!
কেডা?
আমি রবিন।
মাল নাই।
টাকা কিন্তু নগদ।
কইলাম তো মাল নাই।
এমন কইরো না গঙ্গাদা। কালই দিয়া দিমু।
তোমার কাইলের মানে আমি বুঝি। মাল নাই, ভাগো।
আমার রাগ উঠল। শুরু করলাম খিস্তি। শালা মেথরের বাচ্চা। হোগায় বাঁশ ঢুকাইলে ঠিকই বাপ বাপ করে দিবি।
মুখ খারাপ করবি না রবিন।
মুখ খারাপের কী দেখছস মাদারচোদ? তাড়াতাড়ি মাল দে। তোর মায়েরে চুদি শালা।
গঙ্গারাম বুঝি একটু ভয় পেল। পাবে না? শালা মেথর। পরগাছা। কোথা থেকে উড়ে এসে এই শহরে জুড়ে বসেছে। ভয় না পেয়ে উপায় আছে? কিন্তু এ কী! ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে গঙ্গারাম কিনা দোকানের দিকে হাঁটা ধরল! আমিও তার পিছে পিছে হাঁটতে থাকি। রাস্তার মাথায় গিয়ে হুট করে তার একটা হাত ধরে মিনতি করলাম, আজই শ্যাষ গঙ্গাদা। কালই তোমার সব দেনা শোধ কইরা দিমু। জীবনে আর বাকি করুম না।
আমার কথা কানেই তুলল না গঙ্গারাম। হাতটা ছাড়িয়ে আবার হাঁটা ধরল। দোকানের বাইরের মাচাটায় বসল। ভেতরে মানুষজন টিভি দেখতে দেখতে চা-নাস্তা খাচ্ছে। বাইরে দাঁড়িয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে আমি চায়ের অর্ডার দিলাম। আর তখন পেছন থেকে এক লোক বলে উঠল, ব্যাগ থেকে রক্ত পড়ছে ক্যান ভাইজান?
আমি চমকে উঠে পেছনে তাকালাম। গঙ্গারামের বয়সী একটা লোক। থলেটা উঁচিয়ে দেখি সত্যি সত্যি রক্ত পড়ছে। আমার পায়েও পড়েছে কয়েক ফোঁটা।
লোকটি বলল, তোমার ব্যাগে কি কাটা মাছ?
হ হ, মাছ মাছ। বাজার থেকে কিন্যা আনতেছি। না না, মাংস মাংস। গরুর মাংস।
বুঝলাম না। লোকটি ভুরু কুঁচকে বলল।
আপনার বোঝার কী দরকার চাচামিয়া? আমি ধমকে উঠলাম।
কিন্তু চাচামিয়া নাছোড়। সে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। চেহারা দেখে মনে হলো আমার থলেটা সে চেক করবেই। না করে ছাড়বে না। আমি এবার ঘাবড়ে গেলাম। শুনতে পেলাম আজরাইলের পদধ্বনি। থলের ভেতরে যে কাটা কল্লা, সে কি টের পেয়ে গেল? তবু সাহস সঞ্চয় করে জোর গলায় বললাম, কী তাজ্জব কথা! আমার ব্যাগ আপনারে দেখামু ক্যান? কইলাম না এখানে খাসীর মাংস। তাজা মাংস। একটু আগে জবাই হইছে। দুই কেজি কিন্যা আনছি।
গঙ্গারাম চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাল। হয়ত ভাবছে, খাসীর মাংস কেনার টাকা আমি কোথায় পেলাম। সে আমাকে চেনে। একসঙ্গে দুই কেজি মাংস কেনার মুরোদ যে আমার নেই সে জানে।
লোকটা আমার হাত থেকে থলেটা টান দিল। আমি শক্ত করে ধরে রাখলাম। এবার এমন জোরে টান দিল, তোড়াটা ছিড়ে থলেটা ছিটকে পড়ল পাকা রাস্তায়। বেরিয়ে পড়ল সজীবের কাটা কল্লাটা। লোকটা পশুর মতো চিৎকার করে উঠল। আমি কি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি? তাড়া খাওয়া কুকুরের মতো দিলাম ছুট। ‘পোলাধরা পোলাধরা...ধর ধর’ বলে চিৎকার করে উঠল কেউ একজন। হয়ত গঙ্গারাম। কিংবা তার বয়সী লোকটা। দোকানের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো মানুষজন। আমি ছুটছি তো ছুটছিই। মানুষজন ছুটছে আমার পিছু পিছু। শত শত মানুষ। হাজার হাজার মানুষ। যেন গোটা কাটলি, গোটা ডোমপাড়া, গোটা শহর ছুটছে আমার পেছনে।
চৌরাস্তার মোড়ে বটতলায় আমাকে ধরে ফেলল একটা লোক। ঠেসে ধরল দেয়ালের সঙ্গে। তার নাক বরবার মরলাম একটা ঘুসি। সে পড়ে গেল। আমি আবার দিলাম ছুট। বটতলার পশ্চিমে অনন্তপুকুর পাড়ে গেলে পরে পেছন থেকে একজন টেনে ধরল আমার গেঞ্জিটা। আমি পড়ে গেলাম মাটিতে। মানুষজন শুরু করল রামধোলাই। চড় থাপ্পড় কিল ঘুসি লাথি সমানে পড়তে লাগল। আমি আর উঠতে পারি না। মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকি। একজন কাঠের একটা লাঠি দিয়ে আমার ডান পায়ে মারল জোরসে বাড়ি। হাড়গোড় বুঝি টুকরো টুকরো হয়ে গেল। মুহূর্তে আরেকটা বাড়ি পড়ল আমার অণ্ডকোষে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা বাড়ি পড়ল আমার মাথায়। মাথাটা বুঝি দুই ভাগ হয়ে গেল। অণ্ডকোষ ছেড়ে দিয়ে আমি দু-হাতে মাথাটা চেপে ধরলাম। আমি বুঝতে পারলাম এই পৃথিবীতে আমি আর বেশিক্ষণ নেই, একটু পর মরে যাব। হঠাৎ একটা লোক আমার তলপেটে মারল প্রচণ্ড একটা লাথি। আমার দমটা চলে এলো নাকের ডগায়। আমি মরে যাচ্ছি। আর খানিকক্ষণ। লোকজন এবার থামল। আমি চোখ বুজলাম। চোখের সামনে ভেসে উঠল সজীবের মুখটা। এমন মায়াময় মুখ! এমন মায়াময় চোখ! হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, আমি যে বেচার জন্য সজীবের কল্লাটা কাটলাম, এই কল্লা বেচব কোথায়? কার কাছে বেচব? এই কল্লার ক্রেতা কে?
ভুল হয়ে গেছে, আমি বুঝতে পারলাম, বিরাট ভুল হয়ে গেছে। বিরাট ভুল করে ফেলেছি আমি। চিৎকার করে ভুলের কথাটা মানুষজনকে জানাতে চাইলাম। পারলাম না। আমার বুকে পা দিয়ে কেউ একজন ঠেসে ধরল, যেভাবে আমি ঠেসে ধরেছিলাম সজীবের বুক। আর তখন বটগাছের মগডালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আজরাইল তার মস্ত হাতটাকে সাঁড়াশির মতো করে আমার গলাটা চেপে ধরল। জিবের ডগায় এসে থেমে গেল আমার চিৎকার।
রচনাকাল: ২৩.০৭.২০১৯