স্বকৃত নোমানের গদ্য ‘যিহূদা: যিশুখ্রিষ্টের বিশ্বাসঘাতক’

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০২১

যিশু বললেন, আমি প্রকৃত দ্রাক্ষালতা। আমার পিতা কৃষক। আমার যে শাখায় ফল ধরে না, তা তিনি কেটে ফেলেন। যে শাখায় ফল ধরে তা তিনি পরিষ্কার করেন, যেন তাতে আরো বেশি ফল ধরে। তোমরা আমার মধ্যে থাকো, আর আমি তোমাদের মধ্যে। দ্রাক্ষালতায় না থাকলে শাখায় যেমন নিজ থেকে ফল ধরে না, তেমনি আমাতে না থাকলে তোমরাও ফলবান হবে না। আমি দ্রাক্ষালতা, তোমরা শাখা। যে আমাতে থাকে এবং যার মধ্যে আমি থাকি, সেই ব্যক্তি প্রচুর ফলে ফলবান হয়। কেননা আমি ছাড়া তোমরা কিছুই করতে পারো না। কেউ যদি আমাতে না থাকে, শাখার মতো তাকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। সে শুকিয়ে যায় এবং লোকে তাকে আগুনে ফেলে দেয়।

যিশু খ্রিষ্টের বারোজন শিষ্যের একজন যিহূদা, যে ছিল খুব রাগী আর ভুগছিল হতাশায়। সে চেয়েছিল যিশু যেন রোমীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। অথচ তিনি তা করছেন না। তাই তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার পরিকল্পনা করল যিহূদা। এক সন্ধ্যায় খাওয়া শুরুর আগে যিশু এক বালতি জল ও গামছা নিলেন। জল দিয়ে শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিলেন। চাকরের কাজ তাকে করতে দেখে পিতর তো অবাক। যিশু বুঝিয়ে বললেন, তিনি যেমন শিষ্যদের সেবা করলেন, তেমনি শিষ্যরাও যেন একে অন্যের সেবা করতে প্রস্তুত থাকে।

যিশু জানতেন যে আর বেশিক্ষণ তিনি শিষ্যদের সঙ্গে থাকবেন না, তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। তার কালো হয়ে ওঠা মুখখানা দেখে শিষ্যরা বুঝতে পারছিল মারাত্মক কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তিনি বললেন শিষ্যদের মধ্য থেকেই একজন তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে যাচ্ছে। সবাই অবাক। নিশ্চুপ। যোহন, যে সবসময় যিশুর কাছে বসতেন, জিজ্ঞেস করলেন কে সেই বিশ্বাসঘাতক? যিশু বললেন, আমি আঙুর রসে ডুবিয়ে যাকে এই রুটির টুকরোটি দিচ্ছি সে।

রুটির টুকরোটি তিনি যিহূদাকে দিয়ে বললেন, যাও, তোমার যা করার তা করো। অন্ধকার রাতে বেরিয়ে গেল যিহূদা। যিশু তার শিষ্যদের বললেন অনেক কথা। সেসব কথা মনে গেঁথে নিল শিষ্যরা। তিনি বললেন, আমি তোমাদের এতই ভালোবাসি যে তোমাদের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। আমি তোমাদের ছেড়ে যাব না। ঈশ্বর তার আত্মা তোমাদের জন্য পাঠাবেন। তিনি তোমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং সাহায্য করবেন। আমি তোমাদের জন্য জায়গা প্রস্তুত করতে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ছি। আবার ফিরব আমি। ফিরে এসে তোমাদের নিয়ে যাব আমার কাছে, যাতে তোমরা আমার সঙ্গে থাকতে পারো। তোমরা হতাশ হয়ো না, ভয় পেয়ো না।

তারপর যিশু একটি রুটি নিলেন। রুটির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে শিষ্যদের খেতে দিলেন। বললেন, এই যে দেখ আমার দেহ। দেহটিকে এই রুটির মতোই ভাঙা হবে।

খাওয়া শেষ করে সবাইকে নিয়ে বের হলেন তিনি। হাঁটতে লাগলেন গেৎশিমানী জলপাই বাগানের দিকে। কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে শিষ্যদের সাবধান করলেন। বললেন, আর কয়েক ঘণ্টা পরেই তোমরা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। পিতর বললেন, অসম্ভব। আমি কখনোই যাব না। যিশু বললেন, ভোরে মোরগ ডাকার আগেই তুমি তিনবার বলবে যে তুমি আমাকে চেন না। পিতর বললেন, কখনোই বলব না। আমি আপনার সঙ্গে মরতেও রাজি। বাকি শিষ্যরাও বলল একই কথা।

গেৎশিমানী বাগানে পৌঁছে শিষ্যদের একটা জায়গায় রেখে পিতর, যোহন ও যাকোবকে নিয়ে একটু ভেতরের দিকে গেলেন যিশু। তিনজনকে যিশু বললেন, আমার সঙ্গে এখানেই থাকো আর জেগে থাকো। তিন শিষ্য একটি গাছের নিচে গেল। একটু দূরে গিয়ে যিশু হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করলেন। মনে খুব কষ্ট হতে লাগল তার। প্রার্থনায় বললেন, পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে আমাকে এই কঠিন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করো। কিন্তু যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে তাই হোক।

তিনবার প্রার্থনা করলেন তিনি। প্রতিবার প্রার্থনা শেষে পিতর, যোহন ও যাকোবের কাছে গিয়ে দেখলেন তারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তৃতীয়বার তিনি তাদের ঘুম থেকে জাগালেন। তারা শুনতে পেল লোকজনের পদশব্দ। মশাল হাতে তাদের দিকে আসছে একদল লোক। মন্দিরের পুরোহিত ও সৈন্যদের নিয়ে যিশুকে ধরতে আসছে যিহূদা। সৈন্যদের সে বলেছিল যাকে সে চুমু দেবে সৈন্যরা যেন তাকেই ধরে। যিশুর কছে গিয়ে সে তাকে চুমু দিল। সৈন্যরা বন্দি করল যিশুকে। যিশু বাধা দিলেন না, পালানোর চেষ্টা করলেন না।

কিন্তু পিতর ছোরা খুলে প্রধান পুরোহিতের চাকর মল্কের ডান কান কেটে ফেললেন। পিতরকে যিশু বললেন, তোমার ছোরা খাপেই রাখো। বলেই তিনি মল্কের কান ছুঁয়ে তাকে সুস্থ করে তুললেন। প্রধান পুরোহিতকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে ডাকাতের মতো কেন আমাকে ধরতে এসেছেন? পুরোহিত কোনো উত্তর দিল না। সৈন্যরা বেঁধে নিয়ে গেল যিশুকে। যিশু যেমন বলেছিলেন ঠিকই তেমনই ঘটল, শিষ্যরা ভয়ে পালিয়ে গেল তাকে ছেড়ে। এবং যিশুকে করা হলো ক্রুসবিদ্ধ।

বাইবেল থেকে সরল লিখন