সুফী মোতাহার হোসেনের গল্প ‘নেশা’
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
কবি সুফী মোতাহার হোসেনের আজ ১১২তম জন্মদিন। ১৯০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার ভবানন্দপুর গ্রামে তার জন্ম। তার জন্মদিনে ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে তার রচিত ‘নেশা’ গল্পটি বানান-রীতি অপরিবর্তিত রেখে পুনর্মুদ্রণ করা হলো। গল্পটি ১৩৩৬ সনে ‘সওগাত’ পত্রিকায় (৭ বর্ষ, ৮ সংখ্যা, চৈত্র) প্রকাশিত হয়েছিল।
মাতালের মতো টলতে টলতে সমস্ত সিঁড়ি অতিক্রম করে মজীদ অবশেষে একেবারে উন্মুক্ত আকাশের নিচে এসে দাঁড়াল। দ্বিতলের কোন্ এক দীপালোকিত কক্ষ থেকে তখনও ক্ষণে ক্ষণে নারীকণ্ঠের তীব্র হাস্যধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। মজীদ এক দৃষ্টিতে সেদিকে কিয়ৎকাল তাকিয়ে রইল, তারপর আপন মনেই কি সব বিড় বিড় করে বক্তে বক্তে পথে পা বাড়াল।
মজীদ সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিল। যার কাছে সে আপনার সমস্ত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হেলায় বিলিয়ে দিয়েছে, আজ তার একি মূর্তি! তাকে না বলে একটা দিনও যার চলত না, নিতান্ত সহায়হীনের মতো যে তাকে সর্বক্ষণ কাছে কাছে রাখতে চাইত, এ শক্তি সে আজ কোথায় পেল? তবে কি সমস্তই মিথ্যা? ওই রূপ, যৌবন- ওকি শুধু ছলনা মাত্র?
কিন্তু নেশার আতিশয্যে তখনও তার শিরায় শিরায় রিণ্ রিণ্ করে ফিরছে। অতএব ভাববার মতো অবস্থা তার ছিল না। নিষ্ফল আক্রোশে শূন্য পকেট দুটো হাতড়াতে হাতড়াতে মজীদ সন্মুখের গলিটা অতিক্রম করে মস্ত এক গেটওয়ালা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। মজীদ ইতস্তত করছিল, ঢুকবে কি না ঢুকবে কিন্তু টাকা তার আজ চাই-ই। আস্তে আস্তে সে ভিতরে ঢুকে পড়ল।
রাত তখন প্রায় আটটা। সুসজ্জিত বৈঠকখানায় বসে মাহমুদ তার তিন চার জন বন্ধুর সাথে গল্প গুজব করছে। মজীদকে দেখেই সে সোৎসাহে ডাকল, ‘আরে মজীদ মিঞা যে, এসো এসো। তারপর কি মনে করে?’ মজীদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘বিশেষ একটু কথা আছে ভাই, একবার বাইরে আসতে যদি।’
‘এখানেই বলো না ভাই, এরা সবাই আমার আপন লোক।’ মজীদ ঢোক গিলে মাহমুদের কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচুস্বরে বলে, ‘কিছু টাকা ধার দিতে পার? কালই আবার দিয়ে দেবো!’ মাহমুদ একটুখানি ইতস্তত করে ম্লানমুখে বলে, ‘টাকা তো ভাই এখন দেওয়া অসম্ভব। বড্ড টানাটানি যাচ্ছে আজকাল।’
‘টানাটানি? এত বড় জমীদার তুমি, তোমার টানাটানি?’ মাহমুদ খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে রইল। পরে ধীরে ধীরে বলল, ‘দেখ মজীদ মিঞা, অনেক টাকাই তোমাকে আজ পর্যন্ত দিয়েছি, একটি পয়সাও তুমি ফেরৎ দাওনি। বাধ্য হয়ে সেদিন টাকার বদলে তোমার বাড়িখানই আমার নিতে হয়েছে। ব্যাংকে যা ছিল সমস্তই উড়িয়েছ, দেশের জমিজমা তো কবেই নিলাম হয়ে গেছে, শুনলাম স্ত্রীর গয়নাও নাকি সব শেষ করেছ।’
মজীদ বাধা দিযে সসব্যস্তে বলে, ‘আঃ কি সব যা তা বলছ ভদ্র লোকদের সামনে! টাকা না দিতে পার বেশ, কিন্তু ওসব কথা তুলছ কেন?’ কিন্তু মাহমুদ সে কথায় কান না দিয়ে বলে যেতে লাগল, ‘তুমি ভাই দয়া করে আমায় ক্ষমা করো। একদিন যখন তোমার সবই ছিল তখন তোমার ইচ্ছা মতনই তোমাকে সাহায্য করেছি, কিন্তু এখন…’
মজীদ আর দাঁড়াতে পারল না। মাহমুদের কথা শেষ হবার পূর্বেই সে বৈঠকখানার সীমা পার হয়ে গেটের কাছে এসে পৌঁছাল। অভাব ও অপমানের তীব্র দাহে তার সর্ব্বশরীর তখন জ্বলে উঠছে। বড় দুঃখে মজীদের আজ মনে পড়ল, সত্যি সত্যিই একদিন সব কিছুই তার ছিল। পিতার মৃত্যুর পরে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, দেশের জমিজমা ও কলিকাতার দু’খানা বাড়ি শুদ্ধ সে যা পেয়েছিল ছোটখাট একজন জমীদারের পক্ষে তা যথেষ্ট। কিন্তু কুক্ষণে সে সস্ত্রীক কলিকাতায় বাসা করতে এসেছিল, কুক্ষণে মাহমুদের মতো বড় লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল, আর তারই প্ররোচণায় কুক্ষণে সে এক সর্ব্বনেশে পথে পা দিয়েছিল। আজ তাই কিছুই তার নেই; আজ সে রিক্ত, নিঃস্ব, কপর্দকহীন ভিখারী। অনুতাপে আত্মধিক্কারে মজীদের সমস্ত অন্তঃকরণ বিষিয়ে উঠল। শহরের দীপালোকিত রাজপথের এক পাশ দিয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত, অবসন্ন দেহে সে বাড়ির দিকে চলল।
সাজু,-মজীদের এককালের অতি আদরের সাজুরাণী স্তিমিত গৃহদীপের সামনে বসে বসে স্বামীর আশু অমঙ্গল আশঙ্কায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ‘এই একটু ঘুরে আসছি’ বলে মজীদ বেরিয়েছে আজ সাত দিন। বাড়িতে সাজু একাকী, বছর পাঁচেকের একটি মাত্র ছেলে বই দ্বিতীয় আর কেউ নেই। মজীদ অবশ্য এমন ধারা আরও অনেকবারই করেছে। কিন্তু এবার সাজুর উদ্বেগের অন্য কারণ ছিল। সামনেই ঈদ পর্ব্ব, মজীদ তাই যাবার সময় বলে গিয়েছিল যে, দেখি যদি বাড়ি ভাড়ার দু’মাসের বাকী টাকাটা আনতে পারি…। কিন্তু এক এক করে সাত সাতটি দিন কেটে গেল, মজীদের দেখা নেই। এদিকে কালকেই ঈদ, মধ্যে মাত্র একটি রাত। তাই সাজুর সমস্ত চিন্তা ভাবনা মথিত করে একটি কথাই শুধু বার বার প্রবল হয়ে উঠছিল-‘হায়, হায়, কি সর্ব্বনাশ যেন হয়েছে।’
ওদিকে আজ তিন দিন যাবৎ ঘরে খাবার কিছুই নেই। চাল, ডাল সমস্তই ফুরিয়েছে। চেনা একটি ফেরিওয়ালাকে পেয়ে সেদিন সাজু বাকীতে তার কাছ থেকে কিছু রুটি রেখেছিল। তাই খেয়ে খেয়েই সাজু কোন রকমে রোজা রেখে আসছে, কিন্তু ছেলেটা ত আর কিছুতেই পারছে না। আজ সমস্ত দিন সে ক্ষুধার তাড়নায় কেঁদে কেঁদে সন্ধ্যার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটি পয়সা নেই কিছু কিনবে, একটি লোক নেই একটু সাহায্য করবে।
মজীদ মাতাল, মজীদ লম্পট, প্রতি মুহূর্তে সে দ্রুত দেউলিয়া হতে চলেছে, এ সমস্তই সাজু জানে। প্রথম প্রথম মজীদ সাজুর সতর্ক দৃষ্টি থেকে নিজেকে যথাসম্ভব লুকিয়ে লুকিয়ে রাখত, কিন্তু লজ্জা ও সঙ্কোচের সে আড়াল আজ আর নেই। সাজু মেয়েটি কেমন একটু চাপা প্রকৃতির। মজীদের এ সন্বন্ধে সে অল্পই কিছু বলে থাকে। শুধ দুঃখের, দুর্দিনের, অভাবের ও অনটনের কালবৈশাখী যখন মাঝে মাঝে সাজুর সমস্ত সংযমের বাঁধ ভেঙে চুরে দিয়ে যায় তখনই স্বামীকে কিছু সে বলে। এই নিয়ে প্রতিদিন সে শুধু খোদাকেই ডেকেছে, নারী হৃদয়ের সমস্ত প্রার্থনা একই উদ্দেশ্যে নিবেদন করে নিয়ে বলেছে-‘খোদা, আর কতো?’ কিন্তু তার সকল প্রার্থনা চরম ফলাফল মজীদ স্বয়ং।
রাত প্রায় দশটার সময় মজীদ এসে দরজায় ঘা দিল। সাজু লন্ঠনের আলোটা উজ্জ্বল করে নিয়ে তাড়াতাড়ি দোর খুলে দিয়ে এক পাশে সরে দাঁড়াল। মজীদ নত মুখে ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে একটা চৌকি টেনে ঝপ করে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ উভয়ই চুপ করে রইল। মজীদের দৃষ্টি উদাস, বিশুষ্ক মুখে কেমন একটি অসম্ভব অবসন্নতার গাঢ় ছায়া, ধুলিমলিন সর্ব্বদেহের দিকে চাইলে মনে হয়, বুঝিবা এই মাত্র তার উপর দিয়ে একটি প্রবল ঝংকা বয়ে গেছে। সুপ্ত ছেলেটির গা ঘেঁষে সাজুও নীরবে বসে রইল, সহসা তার মুখে কোন প্রশ্ন জোগাল না। কিন্তু এমন ভাবে অধিক্ষণ চলে না; মজীদই অবশেষে জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন আছ সাজু, কি খেয়েছ এ ক’দিন?’
মজীদের কণ্ঠে কেমন একটু করুণ সহানুভূতির সুর। এ সুর সাজু অনেকদিন শোনেনি, বুকের ভিতরটা তার সহসা আর্দ্র হয়ে এল। সুদীর্ঘ তিন বৎসর কাল ভুলেও কখনও যে জিজ্ঞেস করেনি, ‘কেমন আছ?’ বা ‘কি খেয়েছ?’ আজ আর এ প্রশ্নের কি উত্তর দিবে কিছুই সাজু ঠিক করতে পারে না। অনাহারে, অনিদ্রায়, আশংকায়, উদ্বেগে কি নিদারুণ ভাবেই যে এ ক’টি দিন সে কাটিয়েছে তার কিছুই বলা হলো না। গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাজু শুধু বলল, ‘নিজে আমি একরকম আছি কিন্তু ছেলেটা হয়ত বা না খেয়ে খেয়ে মারাই পড়বে।’
মজীদ ত্রস্তে উঠে গিয়ে ছেলেটার শিয়রের কাছে চলল। ওর নিদ্রিত শুকনো মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে, অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘আজ কি কিছুই খেতে পায়নি?’ সাজু ধীরে ধীরে সমস্তই খুলে বলে। শুনে শুনে মজীদ নীরবে নতমস্তকে আপন অদৃষ্টকে পুনঃ পুনঃ ধিক্কার দিতে লাগল। এমনি ভাবে আবার কিছুক্ষণ কাটল, তারপর সে নীরবতা ভঙ্গ করে সাজু শুধোল, ‘জান কাল ঈদ?’
‘কাল ঈদ?’ মজীদ অস্ফুট চিৎকার করে উঠল। মুহূর্তে তার মনে পড়ে গেল আনন্দের ও উৎসবের প্রাচুর্য্য নিয়ে এ জীবনে যে ক’টি ঈদ তার কাছে এসেছে তার একটিও ত ব্যর্থ ফিরে যায়নি। এক বৎসর পূর্ব্বেও সমস্ত বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সে তার দেশের বাড়িতে ঈদের কতো আনন্দই না উপভোগ করেছে। আর আজ? মজীদ ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল, ‘সব গেছে সাজু, সব গেছে! একটি পয়সাও আজ আর নেই যা দিয়ে তোমাদের হাতে, তোমাদের মুখে কিছু তুলে দেব। কোন আশা, কোন অবলম্বনও নেই যার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে পারি। ওঃ আজ যদি আমার মৃত্যু হোত।’
সাজু স্তম্ভিত হয়ে গেল। এমন ধারা কথা ত মজীদ কোন দিনই বলেনি। তবে কি তার সত্যিই কিছু হয়েছে? ভয়ে, সহানুভূতিতে, করুণায় সাজুর সমস্ত অন্তঃকরণ ব্যাকুল হয়ে উঠল। তার ইচ্ছে হল মজীদের দুটি হাত ধরে সে বলে, ওগো, অমন করে যা তা কথা তুমি বলো না। কিন্তু গোপন অশ্রুতে সাজুর কণ্ঠ তখন রুদ্ধ।
সাজু উঠল। ধীরে ধীরে সে অপর একটি কক্ষে গিয়ে মস্ত একটি কাঠের সিন্দুক খুলে মাঝারী গোছের একটি বাক্স বের করল। পরে অন্য একটি চাবী দিয়ে সেটি খুলে ভেতর থেকে ছোট একটি রূপোর বাক্স বের করল। এই বাক্সটি মৃত্যুকালে সাজুর মা তাকে দিয়ে বলেছিল, ‘কি তোর অদৃষ্টে আছে, কে জানে মা। এটি তুই সব সময় খুব গোপনে রাখিস, আর নিতান্ত নিদেনে না পড়লে এতে হাত দিস্ নে। মনে রাখিস, এর মধ্যে যা আছে, সমস্তই তোর নানা, নানীর আমলের।’
সাজু কম্পিত হস্তে বাক্সটি খুলে ফেলে। বাক্সের মধ্যে শ’খানেক আকবরী মোহর, অত্যন্ত ভারী এক ছড়া হার, তেমনি এক জোড়া বালা, একটি সিঁথিপাটি, আর হীরের একটি নথ্। গোটা দশেক মোহর বাইরে রেখে সাজু বাক্স বন্ধ করে মজীদের কাছে ফিরল। মোহর দেখে মজীদ চমকে উঠল। বলল, ‘এসব কোথায় পেলে?’
একটুখানি ম্লান হেসে উত্তর দিল, ‘ছিল আমারই কাছে।’ তারপর মোহর ক’টি মজীদের হাতে দিয়ে বলে, ‘কাল খুব সকালেই এগুলো ভাঙ্গিয়ে যা পাও তাই দিয়ে যা যা আনতে হয় নিয়ে এসো। আমার জন্য কিছুই তোমার আনতে হবে না, ছেলেটার জন্য কিছু ভাল কাপড় জামা, খোরাকীর চাল, ডাল ইত্যাদি আর তোমার জন্য ভাল দেখে একটা টুপী; দোহাই তোমার, কাল কিন্তু তোমাকে ঈদগাহে যেতেই হবে।’
কিন্তু সাজু, এ আকবরী মোহর ত সহজে ভাঙ্গান যাবে না। একে গলিয়ে সোনার দামে বিক্রী করতে হবে, না কি করতে হবে ঠিক বুঝতে পারছিনে। ‘ওগুলো না হয় থাক তবে’ বলে সাজু ফের সিঁথিপাটিটি এনে দিয়ে বলল, ‘এটা কিন্তু বিক্রী করে ফেলো না, বন্ধক রেখে যা পাও তাই দিয়েই কাজ চালিও।’ মজীদ অবাক হয়ে গেল। সাজু এসব পেলো কোথায়? সে জানত সাজুর কাছে টাকা পয়সা বা গহনা কিছুই নেই। কত দিন কত অভাব অনটন গেছে, কিন্তু এসব জিনিসের আভাসও তো সাজু দেয়নি! খানিক পর মজীদ বলে, ‘এতে না হয় কদিন চলল, কিন্তু তারপর?’
‘তারপর যা হয় হবে’ বলে সাজু খানিক ভেবে বলে, ‘এক কাজ কর না? সুফিয়া স্ট্রীটের বাড়িটা তো কবেই গেছে, কড়োয়াতে যেটা আছে সেইটে বিক্রী করে চল আমরা এ কলকাতা ছেড়ে চলে যাই। দেশে বাড়িঘর তো সবই আছে, সেখানে গেলে আমাদের আর কোন অভাবই থাকবে না।’
সাজুর এ প্রস্তাবে মজীদের বুকের ভেতরটা ব্যথায় ভরে উঠল। বাড়িটি যে ইতিমধ্যেই টাকার পরিবর্তে মাহমুদকে দিয়ে দিতে হয়েছে এ কথা সে সাজুকে কিছুতেই বলতে পারল না। গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুধু বলল, ‘তাই চল সাজু, এ কলকাতাতে আর নয়।
রাত তখন অনেক। ক্লান্ত মজীদ গভীর নিদ্রায় মগ্ন, কিন্তু সাজুর চোখে ঘুম নেই। নৈরাশ্যের গহন তিমিরে আজ সে আলোর মুখ দেখতে পেয়েছে। আশায়, আনন্দের সুখ শিহরণে, ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন কুহকে সে তখন আচ্ছন্ন। মজীদের সুপ্ত মুখের দিক চেয়ে চেয়ে সুদূর অতীতের কত কথা সে তখন ভাবছে। ও প্রশান্ত উজ্জ্বল ললাট বিবর্ণ হয়ে গেছে।
কোটর প্রবষ্টি ওই বড় বড় চোখের দীর্ঘ পল্লব ঘিরে কালিমার ম্লান ছায়া ঘনিয়ে এসেছে। ও মুখের রেখায় ক্ষমতা ও প্রতিভার সে দীপ্ত ব্যঞ্জনা আর নেই। তবু মনে হয়, এখনও যেন সবই শেষ হয়ে যায় নি। জয়শ্রীর ক্ষীণ দ্যুতি, এখনও যেন ও মুখে লেগে আছে। ও চোখের দৃষ্টি, প্রাণ শক্তির আবেগে এখনও উজ্জ্বল, ও দক্ষিণকর স্পর্শ এখনও উষ্ণ, ও হাতে হাত রেখে আবার সাজু সোনার সংসার ফিরিয়ে আনতে পারে।
গরিবের প্রার্থনার এত দিনে যিনি কান দিয়েছেন তারই শুকুর করতে করতে সাজু কখন ঘুমিয়ে পড়ল।