সিরিয়া নিয়ে আমাদের রাজনীতি

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৭, ২০১৮

সিরিয়া নিয়ে আমরা কি করতে পারি? শুধু সিরিয়া না, নির্লজ্জ সৌদি আরব ইয়েমেনের উপর অমানবিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের উপর ইজরায়েলের নির্মম আচরণ। অন্যদিকে আফ্রিকা অথবা কাশ্মীরসহ মধ্যপ্রাচ্যের অসংখ্য দেশ নানাভাবে আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। মানুষ না খেয়ে ধুকে ধুকে মরছে, বিশেষ করে শিশুরা। স্বাভাবিকভাবেই দুনিয়ার অসংখ্য মানুষ তাদের মানবীয় সত্ত্বার কারণে এসব মেনে নিচ্ছে না, তারা নানা কায়দায় প্রতিবাদ করছে। কিন্তু যুদ্ধের কারণ এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করা সম্ভব, সেটা অধিকাংশের কাছে স্পষ্ট নয়। ফলে এত প্রতিবাদের পরেও যুদ্ধ হচ্ছে, শিশুরা মরছে, নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, দেশের পর দেশ ভেঙে পড়ছে।

এসব দেশের অমানবিক পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি একটা চলমান প্রক্রিয়া অর্থাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত তার অবস্থান পরিবর্তন করছে, নতুন দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনো একদিনের জন্যও যুদ্ধ বন্ধ হয়নি দুনিয়ার বুকে। এই যুদ্ধের কারণ কি এবং কিভাবে যুদ্ধ আরো দানবীয় হয়ে উঠবে? অনেক আগেই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন দার্শনিক কার্ল মার্ক্স। যার অধিকাংশই প্রমাণিত।

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামো এবং তার আরেক রূপ সাম্রাজ্যবাদের কারণেই যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের কারণ, বাজার ব্যবস্থা। অর্থাৎ দুনিয়ার এক অংশের মানুষ বিলাসী জীবনযাপন করবে তাই অধিকাংশ মানুষ অমানবিক নিপীড়নের শিকার হবে। দুনিয়ার একটা অংশ ফার্স্ট-ওয়াল্ড কান্ট্রি হবে আর বাকিরা হবে থার্ড-ওয়াল্ড কান্ট্রি। কিছু রাষ্ট্র পুরো দুনিয়ার শাসক হবে, বাকিরা হবে দাস। পুরো দুনিয়ার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে কয়েকটা রাষ্ট্র আর বাকিরা নিয়ন্ত্রিত হবে তাদের দ্বারা- এটাই পুঁজিবাদের সারকথা।  ফলে এই হাজার মাইল দূরে বসে সিরিয়ার জন্য আমরা যা করতে পারি, তা হলো পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে বয়কট করা। একটা নতুন অর্থনীতির দাবি তুলতে পারি, যা অর্থনৈতিক আগ্রাসী যুদ্ধকে বাধা দেবে। যার ফলে সিরিয়ার মতো আর কোনো দেশ নির্মমভাবে ভেঙে পড়বে না। মার্কিন-রাশিয়া-ইজরায়েলের মতো সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের শক্তি হারাবে। আর তখনই আমাদের প্রতিবাদ আরো বড় ভূমিকা রাখবে মানবিক দুনিয়া গড়ার পক্ষে।

পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে বয়কট করার সবচেয় আধুনিক বিজ্ঞানের নাম মার্ক্সবাদ। মার্ক্সবাদ একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। মার্ক্সবাদ ধর্ম না, মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান। দুনিয়ার সচেতন মানুষ যদি এই যুদ্ধবাজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং নিজ দেশে মার্ক্সবাদের চর্চা করে তবেই পরিবর্তন সম্ভব। মার্ক্সবাদের দাবি যত জোরালো হবে, পুঁজিবাদ ততই দুর্বল হতে থাকবে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। সিরিয়ার মতো আর নতুন কোনো দেশ আক্রান্ত হবে না ভবিষ্যতে। হ্যাঁ, মার্ক্সবাদের সমালোচনা কম না। অনেকেই তার ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়েও কথা বলতেই পারে। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, মার্ক্সবাদ ধর্ম না, একটা বিজ্ঞান। তাই সেটা সময়ের সাথে এগিয়েছে অনেকটা। মার্ক্সবাদকে নতুন উপরিস্থিতর জন্য নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছে লেনিন এবং মাও। মার্ক্সবাদ নিয়ে লেনিন বা মাওয়ের যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে, মার্ক্স ঠিকঠাকভাবেই সমস্যা এবং সমাধানের আলাপ করেছেন।


মার্ক্সবাদ সকলের পছন্দের বিষয় না হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সকলেই মার্ক্সবাদের সাথে একমত হবে, তেমন মানেও নাই। কিন্তু মার্ক্সবাদই সমাধান। মার্ক্সবাদী অর্থনীতি ছাড়া এই যুদ্ধবাজ দুনিয়ার অবস্থা পরিবর্তন সম্ভব না। তাই শুধু সিরিয়ার শিশুদের জন্য কেঁদে খুব বেশি লাভ হবে না, যদি না এই পুঁজি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়াতে না পারি। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং কর্পোরেট সাম্রাজ্যবাদ আমাদের ঘরের শিশুদের দিকেও ধেয়ে আসছে। দুনিয়ায় আরো হাজার নতুন শিশু আসছে, আমাদের ঘরে আসা নতুন অতিথিদের স্বাগতম জানানোর আগে তাদের জন্য একটা মানবিক সমাজ গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। তাদের জন্যই এই পুঁজিবাদের পতন জরুরি। নিরাপদ দুনিয়ার জন্যই পুঁজিবাদের পতন জরুরি।

লেখক: কলামিস্ট, কার্টুনিস্ট ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী