সায়ন্থ সাখাওয়াৎ’র গল্প ‘চোখ’

প্রকাশিত : আগস্ট ২২, ২০১৯

ডায়েরির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ চোখ আটকে যায় রায়হানের। কোনো লেখা নেই। শুধু একজোড়া চোখের ছবি আঁকা। ষোল বছর আগের এই শ্রাবণে কার চোখ গেঁথেছিল বুকে! দুই ছেলেকে নিয়ে বাইরে গেছে শিউলি। শেষ বিকেলে শুরু হয়েছে ঝুম বৃষ্টি। রায়হানের এই এক সমস্যা। বৃষ্টি হলেই কেমন একা একা লাগে। বৃষ্টির সঙ্গে একাকিত্বের সম্পর্কটা যে কী, তা সে জানে না। কিন্তু একা লাগে।

একাকিত্ব কাটাতেই সেল্ফ খুলে পুরনো ডায়েরি নিয়ে বসে রায়হান। এই সেল্ফটা অন্য কারো খুলতে মানা। শিউলির জন্য তো এই সেল্ফে ১৪৪ ধারা জারি করা আছে। কারণটা সোজা। রায়হানের পুরনো প্রেমিকাদের নিয়ে অনেক লেখা আছে ডায়েরির পাতায় পাতায়। কিছুটা তার সত্য কিছুটা কাল্পনিক। একটা বয়স থাকে না যখন প্রেমিকাকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে ভালো লাগে? সে ভাবনাগুলোই লিখে রাখতো রায়হান। কিন্তু এমনভাবে লিখতো যে, পড়লে মনে হবে এটা শুধু কল্পনা নয়। সত্যিই ঘটেছিল ওসব। পুরনো প্রেমিকাদের নিয়ে এমন লেখা পড়তে কোন স্ত্রীর ভালো লাগে! তাই পথ দুটো। হয় এই ডায়েরিগুলো ধ্বংস করে দেয়া অথবা শিউলির নাগালের বাইরে রাখা।

এতগুলো ডায়েরি। কত কথা! কত অনুভূতি! রাগ, অভিমান, সময়, চিন্তা, ভালোবাসা কত কী ধারণ করে আছে! এটা ধ্বংসের চিন্তা করাও পাপ। তাই রায়হানের এই তালা সিদ্ধান্ত। সেল্ফটা তালাবদ্ধ থাকবে। কেউ হাত দিবে না এতে। শিউলি তো নয়ই। চৌদ্দ বছরের সংসার জীবনে শিউলি সত্যিই ধরে দেখেনি এই সেল্ফটা। নিষিদ্ধ গন্ধমকে সে নিষিদ্ধই মেনে নিয়েছে। রায়হানই মাঝে মধ্যে তালাটা খোলে। জমে থাকা ধুলো ময়লা পরিষ্কার করে। প্রতিবারই এই তালা খোলার সময় রায়হানের মনে হয়, সে তার হৃদয়ের তালাটা খুলল। সে যৌবনের স্রোতের শব্দ শুনতে পায়।

আজকের এই পাতাটা গত ষোল বছর কোনো দিনই চোখে পড়েনি! অবাক কাণ্ড। রায়হান সত্যিই অবাক হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। পেন্সিল স্কেচ। এত সুন্দর ছবি সে নিজে এঁকেছে! দেখে বিশ্বাস হতে চায় না। কার চোখ এঁকেছিল! সাদা কালো পেন্সিল স্কেচটায় আজ যেন রঙ লেগেছে। পেন্সিল রঙ। চোখ দুটো বেশ জীবন্ত লাগছে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না এই চোখে কি এঁকেছিল রায়হান। ভালোবাসা? আনন্দ? বেদনা? একবার মনে হয়, গভীর প্রেমের দৃষ্টি। তাতে আনন্দ ঝিলিক দিয়ে উঠছে। আবার মনে হয়, দৃষ্টির গভীরে লুকানো কী এক দুঃখবোধ!

দুই.
রায়হান এই চোখ প্রথম দেখেছিল মানিকগেঞ্জ। তখন ভোরের কাগজের সাংবাদিক সে। অফিস থেকে এসাইনমেন্ট দেয়া হলো। একজন বিখ্যাত নারী উদ্যোক্তা তার ফ্যাক্টরি ভিজিট করাতে নিয়ে যাবেন। ছিন্নমূল অসহায় নারীদের তিনি কিভাবে শক্তিতে পরিণত করেছেন তা জানাতে চান সবাইকে। দেশি-বিদেশি বেশ কিছু অতিথি, উদ্যোক্তা ও ডোনার সংস্থার সদস্য যোগ দিয়েছেন অনুষ্ঠানে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রায়হান যেখানটাতে বসেছিল তার পাশেই ছিল সেই সুনয়না। তার দিকে বারবার তাকাতে লজ্জা লাগছিল। কিন্তু এই চোখ উপেক্ষা করাও কঠিন। গল্প উপন্যাস কবিতায় পড়া সুন্দর চোখগুলো সামনে হাজির করে রায়হান। মনে মনে বলে, দেখ কবি, তোমার কল্পনার সে চোখের থেকেও বাস্তবের এই চোখ কত সুন্দর, কতটা গভীর। সাগরের গভীরতা যদিও মাপা যায়, আকাশের ওপারে আকাশ, তার রহস্য যদিও বা ভেদ করা যায়, কিন্তু এই চোখের গভীরতা, তার রহস্য মাপার যন্ত্র পৃথিবীতে আজো আবিষ্কৃত হয়নি। এই হরিণী চোখ, এই পাখির নীড়ের মতো চোখ, এই মায়ার আধার জীবনানন্দও কি দেখেছে কোন দিন!

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সবাই অতিথিদের সঙ্গে উঠে যায় নারী কর্মীদের বানানো বিভিন্ন হস্তশিল্প দেখতে। রায়হানও যায়। তবে তার চোখ কোন হস্তশিল্পে পড়ে না। সে ঘুরেফিরে দেখে বিধাতার নিখুঁত এক শিল্প। আহা, চোখ! চোখে চোখ পড়তেই রায়হান কেমন হিপনোটাইজড হয়ে গেছে মনে হয়। চোখ সরাতে পারে না। রায়হানের হঠাৎ মনে পড়ে, দুপুর একটার মধ্যে তার ঢাকায় পৌঁছতেই হবে। এক সিআইপির সঙ্গে এপয়েনমেন্ট। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তার সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগটা এসেছে। এটা কিছুতেই মিস করা যাবে না।

যাওয়ার আগে রায়হান কথা বলার উছিলা খোঁজে। আসলে এমন প্রোগ্রামে কথা বলার জন্য কোন উছিলা লাগে না। কিন্তু এইবার রায়হান কেমন জানি নার্ভাস ফিল করে। তাই এতক্ষণ কোনো কথাই বলা হয়নি। কিন্তু এবার বলতেই হবে। নিজের কার্ডটা বের করে দিয়ে বলে, আমি রায়হান। ভোরের কাগজে আছি। আপনি?

মেয়েটি চোখ তুলে তাকায়। ভেতরে ভেতরে খুন হয়ে যায় রায়হান। বিধাতা কেন মানুষকে এত সুন্দর বানাবে! স্রষ্টা নাকি কোনো মানুষকেই সব দিক দিয়ে পূর্ণতা দেন না। কিছুটা হাতে রেখে দেন। এই মেয়েটির বেলায় সম্ভবত কিছুই নিজের হাতে রাখেননি। স্রষ্টা তার সবটুকু দরদ দিয়ে গড়েছেন তাকে।

মেয়েটি বলল, আমি অজন্তা। আছি এক জায়গায়। সেটা না হয় আজ অজানাই থাক।
রায়হানের মনে হল পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে অজন্তা জানতে চাইল, এতদিন কোথায় ছিলেন!
রায়হানও আর কথা বাড়ায়নি। বলল, আমাকে আরেকটা এসাইনমেন্টের পেছনে দৌড়াতে হবে। আমার জন্য একটু কষ্ট করবেন?
শুধু মুচকি হাসল অজন্তা।
রায়হান বলল, ক্লোজিং সেশনে কে কে থাকেন তা একটু জানাবেন প্লিজ? কার্ডে আমার নাম্বার আছে।
দেখি পারি কিনা, বলেই আবারো হাসল অজন্তা।
মেয়েটি যখন হাসে, শুধু তার মুখ হাসে না। হাসে তার চোখ। শুধু চোখই বা কেন! তার সারা শরীর হেসে ওঠে।

বিকেল পাঁচটার দিকে রায়হানকে ঠিকই ফোন করেছিল অজন্তা। একটা টিএন্ডটি নাম্বার থেকে রায়হানের মোবাইলে কল করে প্রয়োজনীয় সব তথ্যই দিয়েছিল সে। রায়হান কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জিজ্ঞেস করল, আবার কবে দেখা হবে?
অজন্তা বলেছিল, হয়ে যাবে কোনও একদিন।
রায়হানের কয়েকটা দিন অস্থির লেগেছিল। চোখ দুটো যেন সারাক্ষণ তাকে ফলো করছে। ভুলতে পারছিল না। প্রতিদিন বাসায় গিয়ে ডায়েরি উল্টে তার চোখ দুটো দেখে। নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হয় রায়হান। এত চমৎকার করে এঁকেছে চোখ দু`টো! এই ছবিটা দেখলেই অজন্তাকে দেখা হয়ে যায়।

একদিন সেই টিএন্ডটি নাম্বারে কলও দিয়েছিল রায়হান। না, অজন্তা নামে কেউ সেখানে নেই। ওটা খান এন্ড খান গ্রুপ অব কম্পানির চ্যারিটি ডিপার্টমেন্টের নাম্বার। রায়হান দ্বিধান্বিত হয়। তবে কি অজন্তা মিসেস খানের অফিসের এমপ্লয়ি? নামটাও ভুল বলে দিয়েছে? হয়তো বেশি সুন্দর বলে রায়হানের আবেগ নিয়ে খেলেছে। একটু অভিমান হয়।

এমন তো হতেই পারে। এমন অপরূপা মেয়ে। তার জন্য অনেকেই ফিদা হয়ে থাকে। তার সুযোগও অনেকে নেয়। হয়তো অজন্তাও নিয়েছে। এক সময় মাথা থেকে নেমে যায় অজন্তা। স্বস্তি বোধ করে রায়হান। এই তিন মাসের ব্যস্ততায় যখন অজন্তা নামের মেয়েটি স্মৃতি থেকে প্রায় হারাতে বসেছে তখন রায়হানের মোবাইলে আবার অজন্তার ফোন, আমি অজন্তা। কেমন আছেন?
রায়হান অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অজন্তা! সেই চোখ! কেন আবার? কী চায়? কেন হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!

অজন্তা সরাসরি বলে, আপনাকে একটা খবর দিতে ফোন করেছি। কাল আমার বিয়ে। উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরে বিয়ে সেন্টারে অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাতটায়। আপনি আসবেন। আসবেন মানে অবশ্যই আসবেন। এসাইনমেন্ট আছে, অফ ডে না এই সব বলবেন না প্লিজ।
রায়হানের মাথা মুহূর্তের জন্য কেমন ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। অজন্তার বিয়ে!
সত্যি সত্যিই আপনার বিয়ে? কেন? জিজ্ঞেস করে রায়হান ।
অজন্তার ঝটপট উত্তর, ওমা। এতদিন খোঁজ না নিলে বিয়ে হবে না? এত সুন্দর মেয়েকে বউ করার লোকের কি অভাব?
কি করে খোঁজ নেব? আপনি যে টিএন্ডটি নাম্বার থেকে কল করেছিলেন সেটিও তো খান এন্ড খান কম্পানির নাম্বার ছিল। আপনাকে তো পেলাম না।
হ্যাঁ ফুপির অফিসের নাম্বার।
মানে মিসেস খান...
হ্যাঁ। আমি তার ছোট ভাইয়ের বড় মেয়ে।
আমি তো কল করেছিলাম। ওরা তো অজন্তা নামে কাউকে চিনেই না।
চিনবে কী করে? আমি তো ওখানে জব করি না। আমি এনএসইউ থেকে বিবিএ করলাম। সেদিন ফুপির প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম দেখার জন্য। পরে ফুপির অফিস থেকেই কল দিয়েছিলাম।
তাহলে আপনার খোঁজ নেব কী করে?
চাইলেই নেয়া যেত। প্রয়োজনে হাজার বছর ধরে খুঁজবেন। জীবনানন্দ পড়েননি? হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,/সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে/অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে/সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;/আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,/আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। আমি কি বনলতা সেনের চেয়ে কম কিছু! চুড়ির শব্দের মতো ঝনঝনিয়ে হেসে উঠল অজন্তা।
তারপরই বলল, রাত পোহালেই যে মেয়ের বিয়ে তার অন্য ছেলের সঙ্গে এত কথা বলা ঠিক। রাখি। কালকে আপনি আসছেন। এটাই ফাইনাল। বলেই ফোন রেখে দিল অজন্তা।

আড়ং থেকে একটা গিফ্ট কিনে ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় হাজির হয়েছিল রায়হান। তখনো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। কনের স্টেজে বসা অজন্তা। রায়হানকে দেখে উঠে এলো। রায়হানকে সামনের চেয়ারে বসিয়ে কয়েকজন বান্ধবীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, আমার স্পেশাল গেস্ট। খেয়াল রাখবি যেন কোনো অযত্ন না হয়।
অজন্তা গিয়ে তার আসনে বসল। রায়হানের অস্বস্তি লাগছে। এমন সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে বসে থাকা কঠিন। কিছুই করার নেই। শুধু তাকিয়ে ছিল অজন্তার চোখের দিকে। অজন্তাও স্থির দৃষ্টিতে দেখছিল রায়হানকেই।

মেকআপের আড়ালে অজন্তার ফেস ঢেকে গেলেও চোখ দুটো ঢাকতে পারেনি। অক্ষুণ্ণ রয়ে গেছে সেই চোখ। কিন্তু আজ সে চোখে হাসির ঝিলিক নেই। কেমন যেন দুঃখের জোড়া সাগর চেয়ে আছে অপলক। রায়হানের মনে পড়ে জীবনানন্দের শঙ্খমালা, `বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ`। শুধু এই একটা লাইনই বারবার তার মনে আসছে। মনে হয় চোখ নিয়ে জীবনানন্দ ছাড়া আর কেউ কোনো দিন কিছুই লেখেনি।

রায়হানের এই এক সমস্যা। যখন যেটা মাথায় ঢুকে সেটা সহজে বের হয় না। এককেন্দ্রিকভাবে চলতেই থাকে। কোন একটা গান মাথায় ঢুকলো, সেদিন সারাক্ষণ মনে মগজে ওই গানটাই চলতে থাকে। আজ যেমন জীবনানন্দ ঢুকেছে। মনে হয় চোখবন্দনা জীবনানন্দ ছাড়া আর কেউ করেনি। রায়হানের অস্বস্তি বাড়তে থাকে। হঠাৎ অজন্তার সামনে হাজির মিসেস খান। মিসেস খানের স্থুল শরীর আড়াল করে দেয় অজন্তার চোখ। এই সুযোগ। আর নয় এখানে। রায়হান বেরিয়ে পড়ে।

সারা রাত ঘুম হয়নি রায়হানের। দুটো মায়াবি চোখ বুকে নিয়ে সারা রাত কেটেছে কেবল সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে। পাশের মসজিদের মাইক থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে, হাইয়া আলাস সালা....হাইয়া আলাল ফালা... আস সালাতু খাইরুম মিনান নাউম ....। ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম। রায়হানের চোখে ঘুম নেই। তবে তার মনে হয়, একটু ঘুমানো দরকার। সকাল দশটায় এডিটর`স মিটিং।

মাত্রই চোখের পাতা এক করেছে রায়হান। তখনই মোবাইলের রিং বেজে ওঠে। রায়হান নাম্বার না দেখেই কল রিসিভ করে কানে লাগালো মোবাইল সেট। ‘আমি অজন্তা। কালকে ওভাবে পালিয়ে গেলেন কেন?’
রায়হান চুপ। কোনো কথা বলল না। আসলে এর কোনো উত্তর হয় না।
অজন্তাও আর কোনো কথা বলল না। অনেক্ষণ ধরে শুধু কাঁদল। কারো কান্নার শব্দ যে এমন করে বুকে বিধঁতে পারে তা ছিল রায়হানের কল্পনার বাইরে। এই কান্নার মধ্যেও রায়হানের মনে ভিড় করে জীবনানন্দ, `তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে!`

কান্না থামিয়ে অজন্তা বলল, এটা আমার হাজবেন্ডের নাম্বার। এখানে কোনো দিন কল দিবেন না। কোনো দিন না। আমি মরে গেলেও না। সব ভুলে যান। অজন্তা নামে কোনো দিন কেউ ছিল না। রায়হানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল অফ করে দেয় অজন্তা।

রায়হান শুধু মনে মনে বলে, `তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।`

তিন.
এক সময় কবিতা লিখত রায়হান। স্কুল, কলেজ, ক্লাবের বার্ষিক স্মরণিকায় চেয়ে নিত তার কবিতা। কদাচিৎ দুয়েকটা লিটল ম্যাগেও ছাপা হয়েছে। তার সব কবিতাই ছিল প্রেম নিয়ে। ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কখনো কবিতা লিখেছে বলে মনে পড়ে না তার।

এক সময় কবিতা জিনিসটা ঠিক কবে থেকে কেন তাকে ছেড়ে গেল সে কথা মনে নেই রায়হানের। সেল্ফে তালাবদ্ধ ডায়েরির মতো কবিতার শব্দগুলো কে যেন বন্দি করে রেখেছে। আজ এই ভেজা বিকেল, একাকিত্বের সুর তোলা বৃষ্টি, এই চোখ রায়হানকে ভেঙে চুড়ে ফেলছে যেন। তার ইচ্ছে করে একটা কবিতা লিখতে। যেমনই হোক। শুধু নিজের জন্য। লিখে এই ডায়েরির পাতায়ই তালাবদ্ধ করে রাখবে!

সেই ডাগর কালো চোখ
তবে আবার দেখা হোক
চোখে চোখে হোক কথা নির্বাক
আসুক আবার সর্বনাশের ডাক।
মায়াবী চোখে এঁকে রেখো
মিষ্টি কাজল রেখা
ভুরু নাচিয়ে দুষ্টু হেসো
যখন আবার হবে দেখা।
সেই চোখে চেয়ে থেকে
চোখের কোণে জমুক জল
বুকের মাঝে হুহু করা
ভালোবাসার নামুক ঢল।
অদ্ভুত সেই ঘোর লাগা চোখ
কবিতায় তার বসবাস
আবার যদি হয়ই দেখা
আবারো হোক সর্বনাশ!

বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের মধ্যে একজোড়া চোখের দিকে উদাস মনে তাকিয়ে একটা সর্বনাশের প্রতীক্ষায় থাকে রায়হান।