সাঈফ ইবনে রফিক
সাঈফ ইবনে রফিকের ৭ কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ২৪, ২০২০
তারকা
কক্ষচ্যুত হলেই তারকা হয়ে ওঠা যায় না।
হাজার বছর সাধনার পরও
গ্রহটি নক্ষত্র হয়ে উঠবে না
যদি জ্বলে ওঠার উপাদানই
না থাকে ভেতরে।
এরপরও উপগ্রহ আর গ্রহাণুকে
ফলোয়ার ভেবে যেসব গ্রহ
নিজেকে স্টার দাবি করছে
সোশাল মিডিয়ায়—
তারা সৌরজগৎ বোঝে না,
বোঝে না পতনের ক্ষত।
তাদের জন্য এক বদনা সমবেদনা—
যারা নিজেই সূর্য হয়ে ওঠার আশায়
বার্ষিক গতি থামিয়ে
আমাকে প্রদক্ষিণ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
কবিতা
অনেক কবিতাই আমার নামে ছাপা
যা আমি লিখি নাই।
আমার হাত দিয়ে
অন্য কেউ লিখিয়ে নেন।
তখন আমি ঘোরে থাকি
অজ্ঞান, অবচেতন অথবা মৃত!
লেখা কবিতাটি পড়ার সময় ভাবি—
কী আশ্চর্য! এসব কী লিখলাম
কিভাবে, কখন আর কেনই বা!
আমি না লিখলে কে লিখলো এসব?
হে আল্লাহ,
শয়তান যেন আমার মগজে বাসা না বাধে।
শয়তান যেন তার কথা
আমার কবিতা বলে চালিয়ে না দেয়!
এরপর থেকে যিনি আমার নামে লিখবেন
আমি যেন তার পরিচয় জানতে পারি।
প্রকৃত লেখকের পরিচয় নিশ্চিত না হলে
তা যেন প্রকাশিত না হয়।
আমিন!
প্রভুকে বললাম
প্রভুকে বললাম,
আমাকে মুক্ত করে দিন।
আবদারে আবদারে বিরক্ত হয়ে
প্রভু বললেন, ‘পালিয়ে যা।
তোকে বেঁধে রেখেছে কে?`
পালালাম। অনভ্যস্ত দুনিয়ায়
ঘুরপাক খেয়ে
আবারও ফিরতে চাইলাম খাঁচায়।
এসে দেখি, দরজা বন্ধ!
৯৯ নামে ডেকে ডেকে
যখন প্রভুর সাড়া পেলাম—
তিনি বললেন, ‘তওবা ছাড়া
এ দরজা খুলবে না!’
বললাম, `এভাবে হবে না।
পালিয়ে প্রশান্তি নেই।
আপনি বরং আমাকে
স্বাধীন করে দিন।`
একটা দাস মুক্ত করে দিলে
আপনার শ্রেষ্ঠত্বে ঘাটতি হবে না!
প্রভু বললেন, ‘সম্ভব নয়।
আমি নিজেও
আমার ওয়াদার কাছে
পরাধীন। তোর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার
কোনো অস্তিত্বই নেই!’
আমি বসে আছি
আমি বসে আছি
আত্মা দেহ ছেড়ে বেরিয়ে গেল
বেড়াতে গেছে
আবারও ফিরবে।
আমি বসে আছি
অথচ আমার মধ্যে আমি নেই।
শ্বাসের ওঠানামা আছে
রক্তের দৌড়ঝাপ আছে
ব্রিদিং ব্লাড প্রেশার
সব ঠিকঠাক।
শুধু আমি নেই।
আমার আত্মা যখন
এভাবে ঘুরে বেড়ায় পাড়াময়
মন তখন অবচেতন
তোমরা বলো অজ্ঞান
অথচ আমি বসে আছি।
মুসলমানরা একে মোরাকাবা বলছে
হিন্দুরা বলছে, ধ্যান। ইউরোপীয় জ্ঞান
একে মনোনিয়ন্ত্রিত মেডিটেশন বলে
চালিয়ে দিচ্ছে কিছু না বুঝেই।
বিশ্বাস করো, আমি স্রেফ বসে আছি।
আত্মা বেড়িয়ে এসেছে কাবাঘর
নবির রওজা
নায়েবে রাসুলের দরবার
আর দাদাজানের মাজার।
আমি বসে আছি—
শরীরী ঠোঁট আত্মার সাথে যেতে পারেনি
তাই চুমু খেতে পারেনি হাজরে আসওয়াদ।
এ কথা শুনে তিনি হাসলেন!
বললেন, মানসিক রোগের ডাক্তার দেখাও।
বললাম, বেশ। এরপর এভাবে বসলে
আত্মাকে ডাক্তারের কাছে পাঠাবো।
হায়, আত্মা যদি
এই দুনিয়াবি আমার কথা শুনতো!
ভূমিপুজো
ভূমিপুজো নেবে না পৃথিবী
তাই কেঁপে ওঠে লেবানন
প্রাণশিকারি বারুদে
বোমায় ধোঁয়ায়
রক্তে। আমার-তোমার
বললেই সব
আলাদা হয়ে যায় না।
অশ্রু, তোমার মৃত্যুর আগে
হজরত মুহাম্মদের (সা.) সমসাময়িক আরবীয় নারী কবি Al-Khansa’র কবিতা অবলম্বনে
অশ্রু, তোমার মৃত্যুর আগে
যাকে আমি বুকে ধরেছি।
মৃত্যুর পর সব অশ্রুতো তোমারই।
সান্ত্বনা দিতে আসা মানুষকে
কান ধার দিয়েছি; আর
হৃদয়ের কাছে ব্যথাটা বসে গেছে।
কসাইখানা
শহরটা কসাইখানা হয়ে যাবে।
মনের পশুরা জবাই করবে
নিরীহ পশুদের।
শিক্ষিত গরুরাও সেদিন কসাই—
আমানবিকতা শিক্ষার স্কুলে
চলবে হত্যার আনুষ্ঠানিক
নান্দনিক নানা আয়োজন!
মাংস উৎসব!
অথচ তারা ত্যাগের গল্প ফাঁদবে—
স্রেফ মাংস খাওয়ার জন্য
ইব্রাহিমকে কুরবানি দেবে।
মাংসাশী মন এও জানে,
এই মাংস, এই রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছাবে না।
তাকওয়া নিয়ে কোনো আলাপ হবে না।