সাঈফ ইবনে রফিক
সাঈফ ইবনে রফিকের ৭ কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ০৬, ২০২৩
অ্যাকাউন্টিং
দৌড়ের ওপরে থাকো
মহাসাগরীয় স্রোত।
আমি শান্ত নদী, অসভ্য পাথরে প্রাণ
খুঁজে খুঁজে হয়রান পাখি।
কল্পনা বিলাস
আঠারো ক্যারট সোনা যেভাবে বাইশ
দামের হেরফেরে—
কার্বনের মারপ্যাচে কয়লার হীরে হয়ে ওঠা
অথবা প্রত্যাবর্তন।
মুদ্রানীতির হিসাব-নিকাশে
কখনও আরব্য ঘোড়া
ভারতীয় গরু
অথবা
ইউরোপীয় ইঁদুর।
তোমরা যারা আমাকে ইস্পাত ভাবো
হয়তো জানো না,
আমি সামান্য কথাতেই গলে যাই।
আমরা মৃত্যু বিক্রি করে খাই
আমরা মৃত্যু বিক্রি করে খাই
ওরা মৃত্যু কিনে খায়
ডিমান্ড সাপ্লাই চেইনে
চেইন অফ কমান্ড মেনে
আমরা পরস্পর রক্ত চুষে খাই।
আমাকে ঘিরে প্রত্যেকের
যে আলাদা আলাদা `আমরা`
সাপ্লাই চেইনে সেখানে `ওরা`ও আছে—
এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা।
আমরা বন্য শূকর, আমরা নীলগাই
আমরা পরজীবী, একে অপরকে খাই।
অমর
সদ্য প্রয়াত হাংরি জেনারেশনের সেনসেশন মলয় রায়চৌধুরীকে নিবেদিত
অথচ ভ্রমের টানে
নিজেকে পতঙ্গ ভেবে
আগুনে দিয়েছি ঝাপ,
আমার অভাব
অনুভব করবে কে, আমি ছাড়া?
সবাই আমাকে বোকা ভাবছে
কিন্তু আমি জানি,
মৃত্যু না হলে কবি অমর হবেন না।
ধুম-মাচালে ধুম
ঈশ্বর দেখলেন,
শয়তানকে হত্যা করে আদম
বিবি হাওয়াকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন
শহর ছেড়ে।
পেছনে পুলিশের গাড়ি
মোটরবাইকে অ্যাডাম-ইভ
ধুম-মাচালে! ধুম, ধুম, ধুম!
গাছপাকা গন্ধম মিসিং দেখে
জেসাস জেসাস বলে চ্যাঁচাচ্ছেন ঈশ্বর
দুনিয়া দেখেই তার উবে গেছে ঘুম!
ধুম-মাচালে ধুম।
শান্তির সংজ্ঞা
এভাবে হাত ভেঙেই ঋণের ডানা গজায়
মহান জাদুঘরে উড়ে যায় দারিদ্র।
দোয়া ইউনূস পড়তে পড়তে
মাছের পেট থেকে বেরুলো
বাংলাদেশ!
সুদে সুদে ধনী হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক
ডিনামাইটে শান্তির সংজ্ঞা পাল্টে দিলেন আলফ্রেড নোবেল।
মৃত্যু উপত্যকার গল্প
তোমাদের থেকে অনেক দূরে
সবখানে অন্ধকার।
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন কারাগারে আটক
শহরের প্রতিটি আত্মা।
নিষ্প্রাণ নগরে হারিয়ে গেছে ভবিষ্যৎ।
আতঙ্কিত কংক্রিট থেকে
উধাও হয়েছে প্রেম, হাসি-কান্না।
সন্তানের শবযাত্রায়
পাথর পিতার মতো প্রতিটি হৃদয়।
যে গোলচাঁদ হাইফা থেকে একটু হেলে
গাজা উপত্যকার দিকে চেয়ে আছে,
তার আলো ম্রিয়মাণ! অভিমানে লাল।
ভূমধ্যসাগরীয় বাতাসে আজ
যুদ্ধাপরাধী ঘ্রাণ।
ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া
ক্ষুধার্ত শিশুদের মা গল্প শোনাচ্ছেন,
`যেদিন মহান মেরাজের আকাশপথ
প্যারাগ্লাইডিংয়ে ঢেকে গিয়েছিল
ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল–
গুড়িয়ে দিয়েছিল
শ্বেতহস্তীর এয়ার ডিফেন্স অহংকার,
আল আকসায় সেদিনও
বোরাক এসেছে, তোমরা দ্যাখোনি।`
কান্না থামিয়ে শিশুটি বলে উঠলো,
`আমরা শুধু দেখেছি রক্ত
ছটফট করা কাটা হাত, বোমার আঘাত।
আমরা পূর্বপুরুষের গৌরবগাথা শুনিনি
আমরা জানি না, আমাদের বাবা কোথায়!`
অশ্রু মুছে মা বললেন,
`তোমাদের বাবা
একটা স্বাধীন ফিলিস্তিন কিনতে
জেরুসালেমের সবচেয়ে বড় বাজারে গিয়েছেন।`
বাপের নাম ভুলে গেছে ডায়াসপোরা পাখি
`আই হেইট কাতালান রেবেলস!`
বার্সার জার্সি পরা
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ তরুণী
বলে উঠলো!
আমি হেসে উঠলাম। বললাম,
তোমার বুকে যে কাতার এয়ারওয়েজ—
শুধু এরা চাইলেই একরাতের মধ্যে
একেকটা নিউইয়র্ক হয়ে উঠতে পারে
গাজা-রামাল্লা-জেরিকো-হেবরন!
আইবেরীয় উপদ্বীপে
অনারব অটোম্যানের হেরিকেন সাম্রাজ্যে
যতটা জাদু—
এর চেয়ে ঢের বেশি আলো
আরব্য রূপকথার ঝাড়বাতিতে!
কর্ডোভা থেকে বসনিয়া হয়ে আলবেনিয়ায়
অপরাধপ্রবণ গ্রামগুলো জ্বলছে।
ইউরোপ! ইউরোপ!! জিকিরে অন্তঃপ্রাণ
হিজাবি শেতাঙ্গ কিশোরীরা
আরব না হওয়ার হীনমন্যতায় ভুগছে—
আর তুমি ভাবছো
কাতালানরা হামাস হয়ে যাক?
পশ্চিম তীরে তরী ডোবার আগে
সেনজেন ভিসায় দেখো—
কিভাবে ইউরোপ চষে বেড়াচ্ছে
আলাদিনের উড়ুক্কু কার্পেট।
অথচ মার্কেট ইকোনোমি বলছে—
মরোক্কায় আটকে থাকা
স্প্যানিশ নৌঘাঁটিও নাকি কৌশলগত ভুল!
জিব্রাল্টারে ডুবে যাওয়া তারিকের মাস্তুল থেকে
যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ঢুকে পড়েছে
লন্ডনের ইসলামিক সেন্টারে—
তাতেও নাকি ইহুদি খাদ।
শাহাদাতের মোড়কে
চকচকে গহনা গড়ার ষড়যন্ত্র!
আহা ভূমধ্যসাগর,
এপারে ওপারে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ মুসলমান বাতাসে
গড়ে ওঠা আপেল-কমলা-নাশপতি বাগানে
যে রোমান আধিপত্য গুড়িয়ে দিয়েছিল
তোমার পূর্বপুরুষ। অ্যাসাইলামের মদে
তা গুলিয়ে ফেললে পুরোটাই!
বার্সেলোনায় এখন টাকারা থাকে
ফিলিস্তিনিদের মতোই বিলুপ্তপ্রায় কাতালানরা!