সাঈফ ইবনে রফিকে
সাঈফ ইবনে রফিকের ৭ কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০২৩
স্বাধীনতা
প্রভুকে বললাম,
আমাকে মুক্ত করে দিন।
আবদারে আবদারে বিরক্ত হয়ে
প্রভু বললেন, ‘পালিয়ে যা।
তোকে বেঁধে রেখেছে কে!’
পালালাম। অনভ্যস্ত দুনিয়ায়
ঘুরপাক খেয়ে
আবারও ফিরতে চাইলাম খাঁচায়।
এসে দেখি, দরজা বন্ধ!
৯৯ নামে ডেকে ডেকে
যখন প্রভুর সাড়া পেলাম—
তিনি বললেন, ‘তওবা ছাড়া
এ দরজা খুলবে না!’
বললাম, ‘এভাবে হবে না।
পালিয়ে প্রশান্তি নেই।
আপনি বরং আমাকে
স্বাধীন করে দিন।
একটা দাস মুক্ত করে দিলে
আপনার শ্রেষ্ঠত্বে ঘাটতি হবে না!’
প্রভু বললেন, ‘সম্ভব নয়।
আমি নিজেও
আমার ওয়াদার কাছে
পরাধীন। তোর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার
কোনো অস্তিত্বই নেই!’
কাঁদছে আলাদীন
শুয়োরের খামার থেকে
পালিয়ে আসা কানা জ্বীন
ঢুকে পড়েছে আশ্চর্য চেরাগে।
আদেশ শোনার মধ্যে নাই
খাই খাই শুধু খাই খাই—
দুঃখে-রাগে
কাঁদছে ঋণগ্রস্ত আলাদীন।
শ্রেণিকরণের জাদু
লোহা পিটিয়ে দাঁ-বটি বানাচ্ছে কামার।
মাটি দলে মূর্তি হাঁড়ি-পাতিল বানাচ্ছে কুমার।
স্বর্ণ গলিয়ে গয়না বানাচ্ছে স্বর্ণকার।
তখনো স্কুলিং শুরু হয়নি।
কর্মীকে দক্ষ করতে নেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।
তবে শ্রম বিভাজন শুরু হয়ে গেছে।
কামার আর গয়না বানাতে পারে না
কুমার আর দাঁ-বটি-বল্লম-তরবারি বানাতে পারে না
স্বর্ণকারও আর হাঁড়ি-পাতিল বানাতে পারে না
তাই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলো সমাজ।
বললো,
বাড়িতে দেখতে দেখতে কামারের ছেলেই দক্ষ কামার হয়ে উঠবে।
বাড়িতে দেখতে দেখতে কুমারের ছেলেই দক্ষ কুমার হয়ে উঠবে।
বাড়িতে দেখতে দেখতে স্বর্ণকারের ছেলেই দক্ষ স্বর্ণকার হয়ে উঠবে।
এই শ্রেণিকরণের জাদুতে
উৎপাদনের উৎকর্ষতায় অন্য মাত্রা পেল সভ্যতা।
কিন্তু মূল্যবোধের এক আশ্চর্য পতন—
নিজেকে কামারের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা শুরু করলো স্বর্ণকার।
নিজেকে কুমারের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা শুরু করলো কামার।
নিজেকে মুচির চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা শুরু করলো কুমার।
নিজেকে মেথরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা শুরু করলো মুচি।
আমরাও এখন তাই, এই জাত-পাত নিয়েই বাঁচি।
রাজকোষ ও রাজার পোষা কুকুর
রাজকোষ চেটে চেটে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন
একেকজন রিপ ভ্যান উইঙ্কল!
দীর্ঘ ঘুম ভেঙে
সেই বুদ্ধিজীবীগণ দেখলেন,
রাজ্য বিক্রি হয়ে গেছে
খুব সস্তায়, গণমানুষের দামে।
নিজেদের আসহাবে কাহাফ দাবি করা
সেই বুদ্ধিজীবীগণ এবার
৩ শতক পুরোনো ধাতব পয়সা
ছুড়ে দিলেন ক্যাসিনো চাকায়!
বললেন, ‘এই নাও প্রমাণ দিলাম,
আমরাই চিনি সত্যপথ— সঠিক ঠিকানা।
তাসের ঘর গুড়িয়ে দেয়া
অট্টহাসিতে জুয়ারি সাঈফ বললেন,
‘কাহাফের বহরের সেই কুকুরটা
তোমাদের সাথে নেই কেন, জানো?
কারণ, তোমরা নিজেরাই
রাজার একেকটা পোষা কুকুর ছিলে!’
জুলকারনাইনের সিংহাসনে জো বাইডেন
ইয়াজুজ-মাজুজ এসে দেখবেন,
জুলকারনাইনের সিংহাসনে
বসে আছেন বুড়ো জো বাইডেন!
এরই মধ্যে পৃথিবী ছেড়ে
পালিয়ে গেছে শয়তান।
পৃথিবীকে বশ করে রেখেছে বিজ্ঞান।
টিভি সিরিয়াল থেকে শুরু করে
দর্শনশাস্ত্র, সবখানে ইনডিভিজুয়ালের
ব্যাপক প্রচারণা; ভিড়ের গলিত ঢলে
সবাই একা একা।
প্রত্যেক মানুষ অপরকে ‘অমানুষ’
সন্দেহ করছে!
মানুষও মশার মতো রক্তপায়ী
মশার চেয়ে মানুষ বড় রক্তপায়ী
এরা মানুষের রক্ত খায়।
এরা লোভ, ঈর্ষা আর হিংসার মতো
আরও ভয়াবহ রোগ ছড়ায়
মহামারি।
মানুষও মশার মতো
সামাজিক জীব। কীটনাশকের কৌটা
ফুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া
দীর্ঘশ্বাস।
আকাশ উল্টে গেলে
আকাশ উল্টে গেলে
পাখিরা পালায়।
উড়ে বেড়ায় খেঁকশিয়াল
সাথে কিছু বন্য শূকর
আর বাঘ সেজে বসে থাকা
হাইব্রিড বিড়াল।
আমি তখন মাধ্যাকর্ষণকে ডাকি
পৃথিবীর মায়া, ভূপৃষ্ঠের টান।
তেলাপোকা উড়ে এসে বলে,
পাখিজন্মে আমারও ডানা ছিল
তোমার কল্পনার সমান বড়!