সময় আছে হাতে, সত্যিই কি আছে?
আবু তাহের সরফরাজপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
বুদ্ধকে প্রশ্ন করা হলো, জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল কী?
বুদ্ধ বললেন, জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে, তুমি ভাবছ, তোমার হাতে সময় আছে অনেক।
পৃথিবীতে মানুষের জন্ম হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা নয়। মানবজন্মের খুবই নিগূঢ় উদ্দেশ্য রয়েছে। কোরআন বলছে, পৃথিবীতে কে কীরকম জীবনযাপন করে, তা দেখার জন্যেই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। খুবই ভয়ের কথা! শুধু কোরআন নয়, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থও মানুষসৃষ্টির নিগূঢ় উদ্দেশ্যের কথাই ব্যক্ত করে। যে ভালো কাজ করে, আর যে খারাপ কাজ করে, তারা উভয়েই যে এক নয়, এই সত্যিও ব্যক্ত করে। পৃথিবীতে এত এত যে ধর্ম, তার সবই কি মিথ্যে? যদি তাই হয়, তবে আসুন বিজ্ঞান ও দর্শন এ বিষয়ে কী বলে, সে প্রসঙ্গে।
দর্শনের ইতিহাস যারা পাঠ করেছেন তারা জানেন, বেশিরভাগ দার্শনিকই জীবনের নিগূঢ় উদ্দেশ্য স্বীকার করেছেন। ইয়স্তেন গার্ডার রচিত ‘সোফির জগৎ’ উপন্যাসটি পাঠ করলে খুবই সহজভাবে সে সত্যি উপলব্ধি করা যাবে। এটি দর্শনভিত্তিক একটি উপন্যাস। তবে তা পশ্চিমা দর্শনভিত্তিক। সেখানে প্রাচ্যদেশীয় দর্শন ঠাই পায়নি। প্রাচ্য দর্শনে তো আরও ব্যাপকভাবে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার ও তত্ত্ব আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে সেই একই কথা। সাম্প্রতিক সময়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা ‘ঈশ্বর কণা’ দেখা পাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এতকিছুর পরও চিন্তাশীল কোনো মানুষের পক্ষে জগৎরহস্য বিষয়ে উদাসীন থাকা সম্ভব নয়। জীবনকে যতটা শাদামাটা চোখে মানুষ দ্যাখে, জীবন মোটেও তা নয়। সরল এবং গভীর মানে আছে। যৌনতা, টাকা আর ফাঁপা ভাবমূর্তি নিয়েই প্রতিটি মানুষ বেঁচেবর্তে থাকে। জীবসত্তার গভীরে যে সৌন্দর্যচেতনা, এরা তার খবর রাখে না। এরা আসলে বিশ্বজগৎ ও জীবনরহস্য থেকে উদাসীন। কিন্তু সমাজে উদাহরণযোগ্য। ভোগ! ভোগ! আর ভোগ! আচ্ছা, এরা কি নিশ্চিত যে, মৃত্যুর পর আর কোনও জগৎ মানুষের নেই? তারা কি নিশ্চিত যে, পৃথিবীতে জন্ম নেয়ার আগে আমাদের আত্মার কোনও জগৎ ছিল না?
আবহমানকাল ধরে প্রকৃত বিজ্ঞানী আর প্রকৃত ধার্মিকের ভূমিকা কিন্তু একই। নীরব ও নিস্পৃহ দর্শকের। বিরোধ যা, তা ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের নয়, ধার্মিকের সঙ্গে বিজ্ঞানীরও নয়। বিরোধ আসলে ধর্মপ্রচারকের সঙ্গে বিজ্ঞানপ্রচারকের। বিরোধ বিজ্ঞানভক্ত আর ধর্মভক্তের মধ্যে। কিন্তু কেন? ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধটা কোথায় বলে এরা মনে করে? খুব পল্লবগ্রাহী কিছু মানুষ যুগ যুগ ধরে পল্লবিত কিছু পৌরাণিক কাহিনির আক্ষরিক অর্থকেই ধর্ম বলে মনে করে। এরা যে সবাই বিজ্ঞানের দলে, এমন মনে করলে ভুল করবে। অধিকাংশ ধর্ম সমর্থকই এ গোষ্ঠির। এদের শাদামাটা ও অবিশ্বাস্য কিছু সৃষ্টিতত্ত্বও আছে। আছে ভ্রান্ত কিছু কার্যকারণ বোধ। অতিউৎসাহী বিজ্ঞান সমর্থকদের শাদামাটা এবং অবৈজ্ঞানিক বিশ্বদৃষ্টির সঙ্গে স্বাভাবিক কারণেই আগের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ঘটে। বিরোধ এখানেই। এ বিরোধ আসলে, ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্ত একটি বোধের সঙ্গে বিজ্ঞান সম্পর্কিত ভ্রান্ত একটি বোধের বিরোধ। এ লেঠালেঠিতে ধর্ম নেই, বিজ্ঞানও নেই।
ন্যুনতম জৈবিক প্রয়োজন মেটার পরও মানুষের যে-চাহিদা থাকে, তার অধিকাংশই আসলে মস্তিষ্কের চাহিদা। সমাজে জ্ঞানের প্রসার না হলে সমাজ সভ্য হয় না। আজকের সমাজে ভোগ্যপণ্যের তুমুল আলোড়ন চলছে পৃথিবীজুড়ে। তার অভিনব সংস্কৃতি ও বিজ্ঞাপন পদ্ধতি ক্রমাগত চেষ্টা করছে মানুষের বাসনাকে উসকে দিতে ও বাজার বড় করতে। এরা বিশেষভাবে চেষ্টা করে যৌনবাসনাকে কাজে লাগাতে। এর জন্য আর্থসামাজিক যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, তা যেমন একদিকে অপূরিত আকাঙ্ক্ষার জন্য হতাশার জন্ম দিচ্ছে, তেমনই বাড়ছে বিভেদ, দুর্নীতি ও হিংসা। ফলে আজকের সময়ের বেশিরভাগ মানুষ ভোগকেই জীবনের মানে বলে জানে।
নিঃসীম ওই মহাশূন্যে কত কত যে গ্রহ, গ্যালাক্সি আর প্রাণের লীলা চলিতেছে, সৃষ্টির সে এক মহাযজ্ঞ। মহাশূন্যের স্পেস এখনও সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত একটি দিবসে মহাশূন্যের সবকিছুই বিপরীত দিকে গতি নিয়ে একটি কেন্দ্রের দিছে ছুটে যাবে। অনন্ত এই মহাবিশ্বের কোনও এক স্পেসে নিজের অবস্থান কল্পনা করে চেয়ে দেখুন এই পৃথিবীকে। পৃথিবীর অহংকারী প্রাণী মানুষকে। বিন্দুবৎ মনে হবে। কিম্বা কীটস্য কীট। যারা প্রাকৃতিক রীতির বিপরীত স্রোতে চলছে। মোহাবিষ্ট। স্বার্থান্ধ। জগৎজুড়ে ছড়ানো প্রকৃতির মহাগ্রন্থের প্রতি তারা উদাসীন। মানুষজাতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক. উদাসীন কিম্বা মূর্খ। দুই. জ্ঞানী। তিন. বিনয়ী ও ধ্যানী। যে উদাসীন, সে তো উদাসীনই। আর যে জ্ঞানী, তার অবস্থা এমন যে, তার পাত্রে তিল ঠাঁই আর নাহিরে। পানিভরতি একটি গেলাশে কেউ পানি রাখতে পারে না। রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষানীতি ও ধর্মনীতিসহ মানুষের সামগ্রিক জীবনব্যস্থা নিয়ন্ত্রণ করে এসব জ্ঞানীরা। বৃহত্তর মানুষ যেহেতু মূর্খ, ফলে জ্ঞানীদের জ্ঞান ফলাতেও বেশ সুবিধে হয়। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ জগৎ-সংসারে অভাগার মতো পড়ে থাকে, যারা আবিষ্কার করতে থাকে, অনন্ত এই মহাসৃষ্টিতে কত ক্ষুদ্র আমি! নিজেকে বিন্দুবৎ জেনেই তার ভেতর জেগে ওঠে মহাবিশ্ব ও নিজেকে জানার তৃষ্ণা। তৃষ্ণা মেটাতে যতই সে অগ্রসর হয়, তার ভেতর নিজের ক্ষুদ্রত্ব আরও বেশি করে প্রকাশ পায়। ফলে মানুষটি হয়ে যান বিনয়ী ও ধ্যানী।
একটি সরল রেখাকে মানুষ কখনোই সরল দেখতে পারে না। কিছুটা দূরত্বের পর তা বেঁকে যাবেই। এটি জন্মসূত্রে পাওয়া মানুষের দৃষ্টিসীমার অক্ষমতা। অথচ মানুষ এমন যে, এ অজ্ঞমতা সে স্বীকারই করবে না। এই যে সারাদিন মানুষ ভান ধরে থাকে, অফিস করে, কৃত্রিমভাবে মানুষের সাথে মেলামেশা করে, এরপর রাতে যখন ঘুমোতে যায় তখনও তো তার ভাবা উচিত, সে কে? কীভাবে তার সময়গুলো অপচয় করে ফেলছে। সত্যি বলতে কি, মূর্খ মানুষ সময় কাটায়। আর বুঝদার মানুষ সময়কে ব্যবহার করে। মহাত্মা লালন সাঁই তাই হয়তো বলেছিলেন, এমন মানব জনম আর কী হবে! মন যা করো ত্বরাই করো এই ভবে!
মানুষ আসলে কিসের প্রতিষ্ঠা চায়? প্রতিষ্ঠা দিয়ে কী হয়? নাকি ধরে নেব যে, আপনার ভেতরের শুভবোধ মরে গেছে। শুভবোধের উচ্চারণগুলো কেবল রয়ে গেছে আপনার কণ্ঠে, যা আসলে আপনার ভান। নিজেকে ভালোমানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে গেলে যেটা জরুরি। মানুষের যে সামাজিক কিম্বা পারিবারিক সম্পর্ক তা যে কতটা মেকি, একটু অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলেই যে কোনো মানুষ তা দেখতে পারবে। কোনো বিষয় নিয়ে যন্ত্রণা যখন হয়, তা আপনার নিজেরই হয়। আশপাশের মানুষের যা হয়, তা আসলে সমবেদনা। তাও সম্পর্কভেদে। সত্যি এবং চিরন্তন সত্যি যে, জীবনের সঙ্গে অচ্ছেদ্য মানুষটাও আপনার যন্ত্রণা ভোগ করে না। আপনার যন্ত্রণা দেখে তার খারাপ লাগছে, এই হচ্ছে কথা। যন্ত্রণা আপনার একার, আর আনন্দ সকলের। আনন্দের ভাগ হয়, যন্ত্রণার ভাগ হয় না। যেহেতু হয় না, সেহেতু আমরা যাকে আনন্দ বলি, তা আসলে আনন্দ নয়। আনন্দ হচ্ছে ওই যন্ত্রণা, যা মানুষ একা ভোগ করে। কেননা, যন্ত্রণার ভাগ আপনি কাউকে দিতে পারছেন না। কথাটা একটু ঘোলাটে মনে হতে পারে, তবে যার অন্তর্দৃষ্টি আছে, তিনি এর মানে বুঝবেন।
যাকে যে সামাজিক অবস্থানে দেখছেন, সে কিন্তু মোটেও তা নয়। বরং আপনি দেখছেন বলেই তাকে ওরকম দেখাচ্ছে। যাকে শিক্ষক দেখছেন, সে কিন্তু আসলে জনাব মূর্খ। শিক্ষাব্যবস্থার গৎবাঁধা কিছু সিস্টেম ছাড়া তার ভেতর আর কিছু নেই। যাকে চিকিৎসক দেখছেন, সেও একইরকম। লেখক হিশেবে যাকে সম্মান করছেন, শিল্পের জ্ঞানই তার নেই। ব্যাপারটা নানা জিনিস তৈরির ডাইসের মতো। সমাজেও এরকম কিছু ডাইস আছে। একবার কোনোমতো সে ডাইসে ঢুকে যেতে পারলেই জনগণ আপনাকে সম্ভ্রম করবে। যারা সত্যিকারের শিক্ষক তারা ডাইসে ঢোকেন না। লেখকও নন। কোনও পেশাজীবীই নন। তারা থাকেন সাধারণ মানুষের মতো। সাধারণের সাথে মিশে। এইটেই তাদের ধাত। ফলে জনগণ তাদেরকে তাদেরই একজন বলে মনে করে। যেহেতু তাকে দেখতে লেখকের মতো নয়। শিক্ষকের মতো নয়। পৃথিবীতে এই বিভ্রান্তি দিয়েই শুরু হয়েছে মানুষের সভ্যতা। যার গ্লানি বহন করে চলেছি আমরা।
আমরা ভুলে যাই যে, খ্যাতি একটি বোমা। হাজার হাজার প্রাণ বিধ্বংসী পারমাণবিক বোমার চেয়েও খ্যাতি নামের বোমাটি কয়েক গুণ বেশি বিধ্বংসী। কেননা এ বোমা যখন কোনো ব্যক্তিকে ঘিরে বিস্ফোরিত হয় তখন ওই ব্যক্তির সহজাত মানুষটি মারা যায়। যে বেঁচে থাকে, সে ওই মানুষটির কঙ্কাল।
যাপিতজীবনে কেউ সুখি নয়। সুকুমার রায়ের গল্পের সেই ‘সুখি মানুষের জামা’ হাজার তালাশ করেও আমরা বের করতে পারব না। কেননা জগতে সুখি কোনো মানুষই নই। প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে কিছু না কিছু জটিলতা। জীবন যেন একটা চক্র। সেই চক্রেই মানুষ ঘুরছে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। আর এই চক্র গড়ে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ফলে সিস্টেমের এ বাণিজ্যিক দুনিয়ায় দিন দিন মানুষ হয়ে পড়ছে কোণঠাঁসা।
পশুবৃত্তীয় যা যা, মানুষ সেসবের সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়ে চলেছে যাপিতজীবনে। যা যা মানবিক, যেসব বৈশিষ্ট মানুষকে মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে, তা মানুষের যাপিতজীবনে দেখতে পাওয়া যায় না। এর মানে, মানুষ মানুষ নয়, পশু। সমাজের বৃহত্তর এই প্রভাব এসে পড়ে ব্যক্তিজীবনের ওপর। ব্যক্তি হয়ে পড়ছে চিন্তাশূন্য। সবসময়ে তার ভেতর ভয় কাছ করে, কখন না-জানি সিস্টেমের বাইরে চলে যাই! জীবনের অন্তঃসারশূন্যতা বুঝে গিয়ে যারা আরসব মানুষের চিন্তার বাইরে গিয়ে ভাবেন, তাদেরকে জনগণ খুব একটা ভালো চোখে দ্যাখে না।
আসলে যে জীবন মানুষ যাপন করে, তা সে করতে চায় না। সে চায়, তার আকাঙ্ক্ষার জগতের জীবনকে ভোগ করতে। এই দ্বন্দ্বে পড়েই মেসমার মানুষ সংসার ও হৃদয়ঘটিত জীবন। বলা চলে, মানুষ আজ অবষণ্ণ। মানুষ আজ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ একা। এই যদি হয় মানুষের যাত্রাপথ, মানুষ তবে বেঁচে থাকে কেন? যাপিতজীবনে মানুষ আসলে বেঁচে থাকে না। মানুষ বেঁচে থাকে তার আকাঙ্ক্ষার জগতে। এই আকাঙ্ক্ষার জগৎ মানুষের সৌন্দর্যবোধ দিয়ে তৈরি।
সুন্দরের প্রতি তৃষ্ণা আছে বলেই মানুষ শেষপর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। নানাজন নানাভাবে এ তৃষ্ণা মেটায়। কেউ প্রেমিকার ঠোঁটে থরোথরো গোলাপের পাপড়ি দ্যাখে। কেউ কবিতা ল্যাখে। কেউ তা পড়ে। কেউ ছবি আঁকে। এর সবই শিল্প। কুৎসিত জীবনকে সুন্দর করে রাঙিয়ে তোলার চমৎকার এক মাধ্যম। শিল্পের এই মজা সব মানুষে পায় না। তারাই কেবল পায়, যারা সিস্টেমের বাইরে গিয়ে জীবনের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে জীবনের আকাশচুম্বী উচ্চতা দেখতে পারে। আরসব গণমানুষ পশুবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন ও প্রতিরাতের মতো জীবনচক্র।
কীসব ভারি ভারি কথা! পাঠক হয়তো এতক্ষণে বিরক্ত। তো চলুন, পড়ে নেয়া যাক ছোটটো একটি গল্প।
ভোরের রঙ ফুটছে।
গাছে গাছে পাখিদের ডাকাডাকি আর পাখার ঝটপটানি। চারদিকে স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে সতেজ হাওয়া।
হঠাৎ শোনা গেল নবজাতকের কান্না। পৃথিবীতে এইমাত্র একজন মানুষ এলো। এরপর দিন যায়, রাত আসে। বড় হতে থাকে শিশুটি। যুবক হয়। এরপর বুড়ো হয়।
সময় তার কাছে স্থির থেকে স্থিরতর হয়ে যায়। ঝিঁমুনি পেতে থাকে তার। চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে সে ভাবে, আরসব মানুষের মতোই তো জগতে বেচে-বর্তে থেকেছি। তবে কেন এখন আমার হিসেব মেলে না?
ভোর হচ্ছে। গাছে গাছে পাখিদের ডাকাডাকি। গাছেরা জেগে উঠছে আড়মোড়া ভেঙে।
কিছু মানুষের মিলিত কান্নার শব্দ শোনা গেল। বুড়ো লোকটি মারা গেছেন। তাকে ঘিরে কাঁদছে তার আত্মীয়-স্বজন।
জন্মভোর থেকে মৃত্যুভোর, মোট ষাট বছর। পথিক হিসেবে মানুষটি এ ষাট বছর পৃথিবী ঘুরে গেল। অথচ সে যখন বেঁচে ছিল, ভাবত, পৃথিবীটাই আমার বসতভিটে।
সুতরাং, সময় নেই মোটেও। ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক