সদীপ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ‘উপোষী মেঘ’

পর্ব ৭

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৫, ২০২১

চুলে বিলি কেটে নদী এঁকে দিলে ঘুম নেমে আসে সহজেই। ছোটবেলায় পিঠে আঁকিবুঁকি কেটে দিতাম একে অপরের। তারপর বলতে হতো কি আঁকা হলো! আমি বলার আগেই ঘুমিয়ে পড়তাম প্রতিবার। ঘুম আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, আমার মধ্যে গল্প আছে। পথ আছে। কবিতা আছে। রোদ্দুর আছে... দেখতে পাচ্ছ?
অস্পষ্টভাবে বলেছিলাম, থাকো, চলে যেও না।

চোখ থেকে ভিআর চশমাটা খুলে সুবিমল মিশ্র আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, আপনি তো মশাই নরকে প্রেম ঘটিয়ে ফেললেন! আপনার গপ্পে আমার আর কোনও ইন্টারেস্ট নেই।
আমি আমার ঘরে বসেই চোখ দুটো একটু রগড়ে নিয়ে বললাম, কেন, প্রেম কি খারাপ?

একভাবে প্রেম করাটা অন্যায়। অন্যভাবে অন্য প্রেম করতে হবে। আপনি সেসব না করে ঘুমের সঙ্গে উত্তম সুচিত্রার প্রেমে মজে যাবেন, ভাবিনি।
আমি বললাম, তবে আমার শাস্তি কি শেষ?

সুবিমল মিশ্র হেসে বললেন, শেষ। আপনি গতানুগতিকে ধরা দিয়েছেন। প্রেম সেটা করাতে পারে বটে। আবার শেকল ছিঁড়লে আমি চলে আসব। আপাতত চলি। টা-টা!

এরপর উনি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন। আমি দেখলাম, আমার ঘরের মধ্যে চারপাশে ছড়ানো কাগজের টুকরো। যেন বরফ কুচি। আমি সেগুলো তুলে দেখলাম, এক একটা কুচিতে এক একটা শব্দ লেখা আছে। আমি কয়েকটা একবারে তুলে টেবিলের ওপর রেখে একের পাশে আরেকটা জুড়ে একটা লাইন তৈরি করতে পারলাম অনেকটা এইরকম, আবার দেখা হবে, ভালোমানুষ!

আমি জানি না, এটা কার লেখা। ঘুমের কি? মেয়েটার আসল নাম ঘুম? বেল বেজে ওঠে। দরজা খুলতেই দেখি, ওপাশে মোমবাতি হাতে একজন বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে। তার ভুরু এত বড় যে, চোখের ওপর সেটা নেমে এসেছে। বয়স এত যে, সাদা চুলেও ধূসর দানা বেঁধেছে।

আমি এমন জিনিস দিতে পারি তোমাকে, যা কেউ তোমায় দিতে পারবে না। লোকটি আমায় সটান বলে উঠলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি?
ছুটি!

আমি বলে উঠলাম, বিনু দারোয়ান? রতনদা যে ইস্কুলবাড়িটা দেখাবে বলেছিল, তার বাবার, সেই ইস্কুলের দারোয়ান না তুমি? আমায় নিয়ে যাবে?
লোকটা হেসে বললেন, তিনটে শব্দ উচ্চারণ করতে হবে আগে। ভেবেচিন্তে... তারপর নিয়ে যাব। চলবে