সজীব দে’র গল্প ‘গিলোটিনের নিচে জীবন’
প্রকাশিত : মার্চ ২২, ২০২১
আমাকে স্বপ্নের কাছে মরতে দাও। তোমার চোখ থেকে বহু বছর আগে সে স্বপ্ন নিয়েছিলাম। আমি আর যাব কোথায়? সেই আগে যে মরেছিলাম, তার কাছে করজোড়ে বলছি, আমি আর যেতে পারবো না কোথাও! তোমার করতলে মুখে ডুবে গেছে। সেই থেকে মাছ। তোমার দু’হাতের আঁজলায় বন্দি হয়ে গেছি। বলো, আমি আর যাব কোথায়? মেঘমঞ্জরি তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি তোমার পুরুষ হয়ে উঠি। আমাকে তোমার স্বপ্নের মাঝে মরতে দাও। আমি আর যাব না কোথাও!
আমাদের যখন ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তখন আমাদের বয়স চার মাস। গল্প আসতে থাকে তারও চার দিন পর, যখন জিম মরিসনের এ্যান আমেরিকান প্রেয়ার্স শুনছি সাথে গিলোটিনের নিচে জীবন বা নরকের এক ঋতু শুরু হয়ে গেছে আমার জীবনজুড়ে। আমি দেখি, মৃন্ময়ী নয় তার বদলে বই থেকে মারজানা আমার সামনে। কিন্তু মারজানা তার রঙ বদলাতে শুরু করে। দেখি মারজানা কালিমূর্তির রূপ ধারণ করেছে। মারজানা বলে, আপনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?
আমি বহু বছর ঘুমাই না।
আসলে আপনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
আমি মারজানার কথা বিশ্বাস করি না। অথচ এটা বুঝি, আমি স্বপ্ন দেখছিলাম—
যতটুকু মনে আছে। আচ্ছা, স্বপ্ন কতটুকু মনে থাকে? কিংবা আদৌ স্বপ্ন কি মনে থাকে? আমার মনে হয়, স্বপ্ন কোনোমতেই মনে থাকে না। কোনো একটি দৃশ্য স্মৃতিতে রয়ে যায় আর মানুষ সে দৃশ্যের ক্লু ধরে স্বপ্নবয়ান করে। অথচ আমি কোনো স্বপ্নের বয়ান করতে পারবো না। যা বলবো পুরোটাই বানানো। চেষ্টা করব সবটাই মিথ্যা বলার। পাঠকগণ দয়া করে আমার কোনো কথা বিশ্বাস করবেন না। আমি চরম মিথ্যুক। আবানের চেয়ে বেশি মিথ্যাবাদী। মাঝেমাঝে আবানও অবাক হয় আমার কথা শুনে। সুতরাং আমি কোনো স্বপ্ন দেখি না বা দেখি নাই। যা বলবো একটা অহেতুক আশ্চর্য মানুষের কতটা দৃশ্যপ্রবণ মিথ্যার বাহার সাজাতে পারে।
কফির মগটা হাত থেকে পড়ে যায়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মগটা ভাসতে থাকে। আমি আবার কফির মগটা হাতে নেই। একটা কলম উড়ে যাচ্ছিল। কলমটা হাতিয়ে আমার পকেটে পুরি। কে আছে আমার সামনে, জানি না। ম্যাগনোলিয়া আমার লাল রংয়ের ঘরে ঝরতে থাকে। রাত বলে যে শব্দটা তোমরা চেনো, সেটা আসলে রঙের পরিবর্তন। তাই আমার কোনো রাত নেই। আমি একটা কুয়োর ভেতর নেমে যাই। কুয়োর জলে আগুন ধরে আছে। অথচ আমার শরীর পুড়ে যায় না। জানো তো, মানুষ আগুনের তৈরি। আমি আর আগুন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই।
আমি এবার চেয়ারে বসে একটি বই পড়তে থাকি। বইটির নাম, জোয়ানার মৃত্যুবিষয়ক কয়েকটি ধারণা যা আমরা করতে পারি অথবা পারি না—
হুম জোয়ানা। অপরূপ সুন্দরী। সে সুন্দরের কোনো বর্ণনা হয় না। মার্কো পোলো একবার হয়তো মরক্কোয় জোয়ানাকে দেখতে পেয়েছিল। কিংবা ওমর খৈয়াম কোনো ভোরে নেশাতুর চোখে মিনিয়েচারে জোয়ানাকে দেখতে পায়। কিন্তু তাদের লেখায় বা কাব্যে সে সবের বর্ণনা আমি পাইনি। তাহলে জোয়ানার সৌন্দর্য আসলে কি? বর্ণনাতীত! সে যাক। জোয়ানার একটা বয়স আছে। বয়স ২১ বছর ছয় মাস ১৩ দিন দুই ঘণ্টা ২৭ মিনিট ৯ সেকেন্ড। লিপিবদ্ধ হলো। লম্বা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। গায়ের রং তামাটে। চুল কালো। চোখ নীল। কোমর ২৫। স্তন ৩৪। নিতম্ব ৩৬। আঙুলগুলো বেশ লম্বা। স্পট: চিবুকের নিচে কাটা দাগ। এই দাগটা কেন হয়েছিল, তার কোনো ইতিহাস নাই। বা বিস্মৃতি। জোয়ানা জোয়ানা জোয়ানা চিৎকার করে ডাকি। বলি, তুমি না এলেও পারতে...
কেন?
এই মুহূর্তে তোমার চেয়ে আমার দরকার পোর্ট ওয়াইন আর ওল্ডমল্ট। তুমি কি দিতে পারো?
হ্যাঁ।
তবে দাও। কিন্তু জল মিশিও না। তাহলে একদম খেতে পারব না।
জোয়ানা আমার জন্য পটুয়া ইন আর ওল্ডমল্ট আনতে চলে যায়। আমি টেবিলে আকাশ নিয়ে বসে আছি। টেবিলের ওপর হিমালয়। জানালা একটা পাইনগাছ আর হাওয়া।
জোয়ানা ফিরে আসে। বলে, নাও তোমার প্রিপারেশন। বলি, জোয়ানা তুমি কি দেখতে পাচ্ছ আমার টেবিলে কি কি আছে?
জোয়ানা বলে, হ্যাঁ। তারপর জুড়ে দেয় একটা জিনিস নাই।
বলি, কি?
সে বলে, হিমালয়ের বুকে কেন রক্ত নাই?
বলি, জোয়ানা, রক্ত নিয়ে আমার কারবার না। আমি মিথ্যা নিয়ে ব্যাপার করি।
কিন্তু আমি মরছি না কেন? জোয়ানা আমার হাত থেকে ওয়াইনের বোতলটা নিয়ে হিমালয়ের শরীরে ছুড়ে মারে। দেখি, হিমালয়ের গা থেকে সত্যিকারের রক্ত ঝরে পড়ছে। দৃশ্যটা দেখতে এত ভালো লাগলো! বললাম, জোয়ানা, তুমি সত্যিই অসাধারণ। আমার খুব বেশি ধৈর্য নাই।
জোয়ানা বলে, আমি কিন্তু মানুষ নই।
আমি জোয়ানার দিকে তাকাই। দেখি, একটা সাদা ফাঁসির দড়ি আমার সামনে ঝুলছে। চিৎকার দেই, জোয়ানা জোয়ানা... জোয়ানা আবার আবির্ভূত হয়। দেখি, ওর গলা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে। আর জোয়ানা হাসছে। জোয়ানার গলা আমি কাপড় দিয়ে বাঁধতে থাকি কিন্তু কাপড়ে কুলায় না। জোয়ানা বলে, এ রক্ত শেষ হবে না। কারণ আমার শরীরে শাবন জাতির রক্ত রয়েছে। তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি মরিনি।
আমি দেখি, আমার ঘরে ছোট একটা লেক। যার রং লাল। লেকের উপর ভেসে আছি। চেয়ার-টেবিলসহ। আমার পাশে জোয়ানা একটা খাটে সাদা কাপড় পড়ে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ। হিমালয় থেকে তুষারপাত হচ্ছে তার গায়ে। জোয়ানাকে বলি, তোমার ঠাণ্ডা লাগবে।
জোয়ানা কিছু বলে না। শুধু মুচকি হাসে। ধীরে ধীরে জোয়ানা বরফে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। আমি আর জোয়ানাকে দেখতে পাই না।
মারজানা আমাকে ধাক্কা দেয়, হেই মানুষ?
আমার হুঁশ আসে। বলি, মারজানা তুমি? কখন এলে?
অনেকক্ষণ।
তাহলে তোমাকে দেখলাম না কেন?
দেখেছেন তো।
না দেখিনি।
বললাম দেখেছেন। মারজানা ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলির বর্ণনা শোনায়।
আমার ম নপ্রচণ্ড বিষণ্ণ হয়। আমি মারজানার চোখের দিকে তাকাই। সেও তাকায়। এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
তোমার চোখ এত কালো কেন?
তুমি এঁকেছ তাই।
আমি তো আঁকিয়ে নই, বা কবি!
মারজানা বলে, তুমি মিথ্যাবাদী।
হ্যাঁ, এটা ঠিক।
তুমি আসলে মিথ্যা বলছ আমার চোখ কালো!
বলি, না। এই মুহূর্তে আমি মিথ্যা বলছি না।
সে বলে, যেটাকে তুমি সত্যি বলে জানো, সেটা আসলে আমার কাছে মিথ্যা।
আমি হতাশ হয়ে পড়ি। আর আমি হতাশ হলে প্রচুর ড্রাগ নেই। আমি গাইতে থাকি বার্ড অব প্রে/বার্ড অব প্রে/ফ্লায়িংহাই/ফ্লায়িংহাই...
এরপর রাস্তার ড্রেনে মাতাল হয়ে পড়ে রই। শরীরের উপর আস্ত এক বন তৈরি হয়ে আছে। এরমধ্য শহুরে হ্যালুসিনেশনে। কিছু বনমহিষ ডাকে আমার বুকের উপর। প্রজাপতি মৃত্যুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর পাতারা ঝরতে থাকে। আবহমান তীব্র শীত আচ্ছাদিত হয় কলেবর ছাড়াই হঠাৎ তেমনি পৃথিবীর সকল শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষ হয় আর জন্ম নেয় কিছু শিশু। যারা তাসকান ভাষায় কথা বলে, আর পর্যবসিত হয় দান্তেয় স্বপ্নে। বস্তুত দান্তে যে নরকের বর্ণনা দেয় তা আলোর দিকে।
সকাল হলে নগর আবার উঠে পড়ে। একটা সোনালি ডানার চিল কল্পিত আকাশের দিকে ছুটে যায়। আমার নেশাতুর চোখ থেকে বেরিয়ে আসে একটি ছোট খরগোশ। দেখি, খরগোশটি আমার শরীরজুড়ে একে দিচ্ছে পৃথিবীর শেষ নারীর মুখের ভাষা। আমি উঠে পড়ি ভোরের নীল আভায়। খরগোশটি চলে যায়। আমি হাঁটতে হাঁটতে একটি গলির প্রবেশ মুখে ঢুকে পড়ি। একটি সাদা হরিণ আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। শহরে হরিণ! আপনি হয়তো ভাবতে পারেন. এ সাদা হরিণ হয়তো দান্তের বিয়াত্রিচে। কিন্তু না। এখানে আর কোনো নারী নেই। নেই নারীর কণ্ঠস্বর।
সারি সারি খয়েরি বক আমার চারপাশে ঘুরতে থাকে। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। দেখুন বহু আগে আশ্চর্য হবার ক্ষমতা হারিয়ে নিজেই তৈরি করি ম্যাজিক। ওহে আমি তো সমাজ থেকে বিতাড়িত ভ্রাম্যমাণ বাজিকর। হয়তো কোনো সাপুড়ের স্বপ্নে আমার জন্ম।
সাপুড়ের বর্ণনা মতে, কোনো এক অমাবস্যার রাতে বনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে একটি সাদা ঘোড়া আমার পথ আটকায়। ঘোড়াটি কথা বলে উঠে। বলে, এ পথ তোমার নয় হে সাপুড়ে। অন্য পথে যাও। আমি অন্য পথে এগিয়ে যাই। এগুতে এগুতে দেখি, আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক শিয়াল। বলে, এ পথ তোমার নয় সাপুড়ে।
বলি, কেন?
এ পথে রয়েছে মানুষের লাশের হাড়। সেখানে তোমার কোনো কাজ নেই।
সাপুড়ে আবার পথ পরিবর্তন করে। আরেকটি রাস্তার দিকে এগুতে থাকে। সাপুড়ে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে। তখন রাত ভোরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। সাপুড়ে ঘুমিয়ে যায়। প্রথম তার কানে যায় একটি চিৎকার। কোনো মেয়ের। সাপুড়ে লাফ দিয়ে ওঠে। তারপর সে চারদিকে চিৎকারের আওয়াজ খুঁজতে থাকে। এদিকে ওদিকে ছুটে যায়। কিন্তু সে আর চিৎকার শুনতে পায় না। সাপুড়ে উদ্বিগ্ন হয়। চুপ করে একটি গাছের তলে বসে থাকে। তার চোখ আবার বন্ধ হয়ে আসে। সাপুড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ক্রমাগত ঘুমের ভেতর সাপুড়ের চোখে তুষারপাত শুরু হয়। সাপুড়ের চোখ একপর্যায়ে বরফাচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। সাপুড়ের যখন ঘুম ভাঙে তখন সে আর চোখ মেলতে পারে না। কারণ তার চোখ বরফ হয়ে যায়। সাপুড়ে তখন অন্ধ।
সাপুড়ে উঠে দাঁড়ায়। অন্ধ চোখ নিয়ে সাপুড়ে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে সাপুড়ে জানে না সে কোথায় এসে পড়েছে। হঠাৎ তার কানে আসে অনেক অনেক গাড়ি আর মানুষের কলরব। সাপুড়ে বুঝতে পারে সে শহরে এসে থেমেছে। সাপুড়ে একজন লোককে পথে আটকে বলে, দয়া করে তাকে যেন কোনো হাসপাতালে নিয়ে যান। লোকটি সাপুড়েকে হাসপাতলে ভর্তি করিয়ে দেন। ডাক্তার সাপুড়ের চোখ পরীক্ষা করার জন্য একটি মেশিন তার চোখে প্রতিস্থাপিত করেন। খুব মনোযোগ দিয়ে ডাক্তার তার চোখ দেখতে থাকেন। হঠাৎ ডাক্তার তার চোখ মেশিন থেকে সরিয়ে আনেন। আহ! একি দৃশ্য। এমনটা তো দেখার কথা না। রাতে তার ভাল ঘুম হয়েছে। বহুদিন পর সে স্ত্রীর সাথে পূর্ণ তৃপ্তিতে সহবাস করেছে। তিনি শান্ত। কিন্তু তার মনে পড়ে যায় যখন সে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করছিল তার চোখে ভেসে আসে অন্য কোনো রমণীর দেহ। যা তার স্ত্রীর নয়। নয় প্রেমিকার বা অবদমিত মনের কোনো রমণী।
তিনি দেখেন এমন একটি রমণী যে সম্পূর্ণ সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত। কাপড়ের নিচে কোনো অন্তর্বাস নেই। তিনি রমণীটির সাথে মিলিত হন। তার ওই হ্যালুসিনেশনের সাথে এই রোগের চোখ দেখার কি সম্পর্ক? ডাক্তার আবার চোখ রাখেন। তিনি দেখেন তার হ্যালুসিনেশনে যে রমণীটি এসেছিল ঠিক তেমন একটি রমণী তার চোখের দিকে চেয়ে আছে। ডাক্তার চিৎকার দিয়ে ওঠে। চারপাশ থেকে অন্যান্য ডাক্তার ছুটে আসে। তারা বলেন, মিস্টার রয়, কী হয়েছে আপনার?
রয় সাহেব স্থবির। কোনো কথা বলতে পারেন না।
সাপুড়ে জিজ্ঞাসা করে, ডাক্তার সাব আমার চোখে কি হইলো?
ডাক্তার কোনো কথা বলেন না। অন্য একটি ডাক্তার মিস্টার রয়কে সরিয়ে নিয়ে যান। তারপর অন্য একটি ডাক্তার আসেন। সাপুড়ের চোখে আবার যন্ত্র প্রতিস্থাপিত করেন। ধীরে ধীরে তিনি চোখ রাখেন। প্রথমে তিনি দেখেন সাদা পর্দার মতো। এবার আরও মনোযোগ দেন। সাদা পর্দা ধীরে ধীরে সরতে থাকে। একটি সাদা খরগোশ যেন যন্ত্রের ভেতর দিয়ে তার চোখে ঢুকে পড়ে। আহ, বলে চিৎকার দেন। বলেন, আমি চোখে দেখতে পারছি না। আমার চোখে খরগোশ ঢুকে পড়েছে।
ডাক্তারের এই কথা কেউ বিশ্বাস করে না। চোখ কচলাতে কচলাতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যান। বেসিনের সামনে এসে চোখে জল দেন। চোখে জল দিতেই ধুপ করে খরগোশটি চোখ থেকে পড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ডাক্তার আর খরগোশটি দেখতে পান না। তিনি আয়নার দিকে তাকান। হ্যাঁ, এবার দেখতে পাচ্ছেন। ওদিকে সাপুড়ে ঠায় বসে আছে। কেউ আর সাপুড়ের চোখ দেখতে চায় না। একজন নার্স এসে সাপুড়েকে হাসপাতাল থেকে বাইরে রেখে আসে।
সাপুড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ একজন সাপুড়ের কাঁধে হাত রাখে। হাতটি ঠাণ্ডা বরফের মতই। তিনি বলেন, শোনো সাপুড়ে, আমি পারি তোমার চোখ ভালো করতে। কণ্ঠটি মেয়েলি। সাপুড়ে চমকে যায়। হ্যাঁ, এমন কণ্ঠেই তো সে চিৎকার শুনেছিল। কিন্তু সাপুড়ে কথা বাড়ায় না। বলে, আইচ্ছা আমার চোখের আলো ফিরাইয়া দেন।
মেয়েলি কণ্ঠ বলে, আরেক অমাবস্যা রাত এলে তুমি তোমার চোখের আলো ফিরে পাবে। চোখে দেখতে পাবে। এই মাঝসময়টিতে একজন কবির জন্ম হবে। সেই পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।
সাপুড়ে মেয়েলি কণ্ঠের কথার কোনো মর্ম বুঝতে পারে না। বলে, আইচ্ছা।
মেয়েটি সাপুড়ের হাত ধরে একটি বনে নিয়ে যায়। সেটা ছিল সাপুড়ের প্রথম দ্বার। যেখান দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারেনি।
রাত যায় দিন যায়। সাপুড়ের সময় কাটতে থাকে। অমাবস্যার রাত ফিরে আসে। সেদিনের মতো সাপুড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। জাগরণ আর তন্দ্রার মাঝে সাপুড়ে দেখতে পায় তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। মানে সে টের পায় তার চোখ এতদিন বরফে আচ্ছাদিত হয়ে ছিল। ধীরে ধীরে গলতে থাকে। অবশেষে সাপুড়ে স্বপ্নের মতন দেখতে পায়। এক অপরূপ রমণী তার সামনে সন্তান প্রসব করছে।