সঙ্গীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির আজ জন্মদিন। ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের কোটলা সুলতান সিং গ্রামে তার জন্ম।
মোহাম্মদ রফি ব্রিটিশ ভারতে সমগ্র উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। হিন্দি সিনেমায় প্লে-ব্যাক করা এই শিল্পীর গান আজো কদর পায় শ্রোতাদের কাছে। তিনি সঙ্গীত ভুবনে চার দশক সময়কাল অতিবাহিত করেন। সমগ্র উপমহাদেশে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
মোহাম্মদ রফি হাজী আলী মোহাম্মদের ষষ্ঠ সন্তান। তার ডাকনাম ছিল ফিকো। নিজ গ্রামের এক ফকিরের ভজন অনুকরণ করে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। জীবিকার সন্ধানে তার বাবা ১৯২০ সালে লাহোরে চলে যান। সেখানে রফিও যান। বড় ভাই মোহাম্মদ দ্বীনের বন্ধু আব্দুল হামিদ লাহোরে থাকাকালে রফির প্রতিভা দেখে তাকে গান গাইতে সাহস জোগান। আব্দুল হামিদ পরিবারের বড়দের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করে তাকে মুম্বাই পাঠান। ১৯৪৪ সালে মোহাম্মদ রফি বোম্বেতে গেলে সঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে আব্দুল হামিদও যান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, ওস্তাদ আব্দুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবনলাল মত্তো ও ফিরোজ নিজামীর মতো প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পীদের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন।
১৩ বছর বয়সে রফি লাহোরের প্রথিতযশা শিল্পী কে এল সাইগলের সঙ্গে জীবনের প্রথম শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে গান পরিবেশন করেন। ১৯৪১ সালে শ্যাম সুন্দরের নির্দেশনায় লাহোরে চলচ্চিত্রের গায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে।
পরের বছর বোম্বের চলচ্চিত্র ‘গাও কি গৌরী’ চলচ্চিত্রে গান করেন। ১৯৪৯ সালে নওশাদ (চাঁদনী রাত, দিল্লাগী, দুলারী); শ্যাম সুন্দর (বাজার); হুসনলাল ভগতরাম (মীনা বাজার) প্রমুখ সঙ্গীত পরিচালকের নির্দেশনায় একক সঙ্গীতে অংশ নেন। রফি তখনকার বেশিরভাগ নামকরা সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। এর মধ্যে আছেন- নওশাদ, ও পি নায়ার, শঙ্কর জয়কিষাণ ও শচীন দেব বর্মণ।
নওশাদের পরিচালনায় ১৪৯টি গান করেন রফি। এর মধ্যে একক গান ছিল ৮১টি। শচীন দেব বর্মণের পরিচালনায় পিয়াসা (১৯৫৭), কাগজ কে ফুল (১৯৫৯), তেরে ঘর কে সামনে (১৯৬২), গাইড (১৯৬৫), আরাধনা (১৯৬৯) ও অভিমান (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। শঙ্কর জয়কিষাণের সঙ্গীত পরিচালনায় ৩৪১টি গান করেন। এর মধ্যে ২১৬টি গান ছিল একক। গীতিকার মদন মোহনের অন্যতম পছন্দের কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মোহাম্মদ রফি। তার সঙ্গীত পরিচালনায় ১৯৫০ সালে ‘আঁখে’ চলচ্চিত্রে ‘হাম ইশক্ মে বরবাদ হে বরবাদ রাহেঙ্গে’ গানটিতে কণ্ঠ দেন। পরে তারা যৌথভাবে অনেকগুলো গান রেকর্ড করেন। ও পি নায়ার একবার রফি সম্পর্কে বলেন, ‘যেখানে মোহাম্মদ রফি নেই, সেখানে ও পি নায়ারও নেই।’ নায়ার তার চলচ্চিত্রের জন্য অধিকাংশ গানেই আশা ভোঁসলে ও মোহাম্মদ রফিকে জুটি করেন। তার সঙ্গীত পরিচালনায় রফি ১৯৭টি গান করেছেন, যার মধ্যে একক ছিল ৫৬টি।
১৯৪৫ থেকে ১৯৮০ সময়কালে মোহাম্মদ রফি ২৬ হাজারেরও বেশী চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, বিরহ-বিচ্ছেদ, কাওয়ালী, ভজন, গজলসহ বিভিন্ন ধরনের গানে সমান দক্ষ ছিলেন তিনি। হিন্দিসহ কোনকানি, উর্দু, ইংরেজি, ফার্সি, স্প্যানিশ, ডাচ, ভোজপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবী, বাংলা, মারাঠী, সিন্ধি, কানাড়া, গুজরাটী, তেলেগু, মাঘী, মৈথিলী, অহমিয়াসহ বিভিন্ন ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন।
১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই মোহাম্মদ রফি মুম্বাইয়ে মারা যান।