মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধী
সংখ্যালঘু প্রশ্নে জিন্নাহর রাজনীতির বিভ্রান্তি
পর্ব ১
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯
জিন্নাহ জাতীয় কংগ্রেসে যে বছর যোগদান করেন, পরের বছর মুসলিম লীগের জন্ম। মুসলিম লীগ আর কংগ্রেসের জন্ম ব্রিটিশ শক্তির সহযোগিতায়। মুসলিম লীগ আর কংগ্রেসের চিন্তাচেতনায় খুব পার্থক্য ছিলে না। জন্মমুহূর্তে মুসলিম লীগ কংগ্রেসের মতোই ভারতের স্বায়ত্বশাসন আর ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতার কথাই বলে। মুসলিম লীগ সেখানে পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার কথাও বলেছিলে। জিন্নাহ তখন মুম্বাইয়ের নাম করা আইনজীবী, খুব যুক্তিবাদী আর নীতিবান মানুষ হিসেবে কংগ্রেস নেতাদের প্রিয় এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি। যথেষ্ট সম্মানিত মুম্বাইয়ের সমাজে। গান্ধী তখন আইনপেশায় সামান্য সুবিধা করতে না পেরে গুজরাটের মুসলিম এক বণিকের চাকরি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন। সেখানকার আদালতে তিনি আবার মুসলিম বণিকদের আইন পরামর্শক হিসেবে ভালোই করছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় সে সময়ে তিনি ইংরেজ শাসকদের বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়ে ইংরেজদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি শাসকদের কাছে নিজের দাবিগুলি তুলে ধরেন অভিবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে নিয়ে। তিনি যে আন্দোলন করছিলেন, তা ছিল অহিংস
প্রকৃতির। শাসকরা হিংস্র হলেও, সভাসমাবেশে আক্রমণ চালালে, গান্ধী তার লোকদের প্রতিআক্রমণ না করে সরকারের অত্যাচার মেনে নিতে বলতেন। সরকার আন্দোলনকারীদের বন্দি করে কারাগারে নিয়ে গেলে আন্দোলনকারীরা সামান্য আপত্তি করা বা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে অসহযোগিতা করতে পারতো না। গান্ধী বিশ্বাস করতেন, এভাবে অহিংস আন্দোলন চালালে সরকার একসময় দাবি মেনে নেবে। মানে সরকারের করুণার উদ্রেক হবে আন্দোলনকারীদের পক্ষে। ফলে গান্ধীর আন্দোলন সরকারকে বিপদে ফেলতো না, পত্রপত্রিকায় কিছুটা আলোড়ন সৃষ্টি হতো মাত্র।
জিন্নাহ এ সময়ে কংগ্রেসে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে দাদাভাই নওরোজি, অ্যানি বেসান্ত, মেহতা ও গোখেলের প্রিয়পাত্র ছিলেন জিন্নাহ। মতিলাল নেহরু, বিপানচন্দ্র, চিত্তরঞ্জনরা তখন জিন্নাহর বন্ধু স্থানীয়; সরোজিনী নাইডু, কানাইলাল মুন্সি প্রমুখরা জিন্নাহর ভক্ত। জিন্নাহ কংগ্রেসের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লীগে জিন্নাহর অনেক ভক্ত ছিলেন। জিন্নাহকে তারা মুসলিম লীগে পেতে চাইলেন। জিন্নাহ তখন মুম্বাইয়ের অভিজাত মুসলিম সমাজেও খুব সম্মানিত। ফলে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জিন্নাহ তখন ভাইসরয়ের কাউন্সিলের সদস্য। জিন্নাহ তখন কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ভাইসরয়কে কড়া সমালোচনা করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীর সঙ্গে ইংরেজ সরকারের বর্ণবাদী আচরণের জন্য। জিন্নাহ ছাড়া ভাইসরয়ের সঙ্গে তাঁর কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে এরকম আচরণ করার সাহস আর কেউ দেখাতে পারেননি। রাউলাট বিল অন্যায়ভাবে গৃহীত হলে জিন্নাহ কাউন্সিলের পদ ছেড়ে দেন। রাজনীতিকদের মধ্যে জিন্নাহই এরকম নির্লোভ ছিলেন ন্যায় প্রতিষ্ঠানর জন্য। ভাইসরয় সহ যেকোনো ইংরেজ শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো সাহস দেখিয়েছেন সর্বদা।
মুসলিম লীগ যখন জিন্নাহকে তাদের দলে পেতে চাইল, বারবার অনুরোধের পর গোখেলের সঙ্গে আলোচনা করে জিন্নাহ মুসলিম লীগে যোগদানের জন্য সম্মতি দিলেন শর্তসাপেক্ষে। শর্তটি ছিলে, মুসলিম লীগ কখনো কংগ্রেসের বিপরীতে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। মুসলিম লীগ জিন্নাহর শর্ত মেনে নিলে জিন্নাহ মুসলিম লীগে যোগ দেন, তখন তিনি কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের সদস্য। জিন্নাহর উদ্দেশ্য, কংগ্রেস আর মুসলিম লীগকে এক মঞ্চে নিয়ে আসা। জিন্নাহ বিশ্বাস করতেন, ভারতের হিন্দু-মুসলমানরা যদি একসঙ্গে লড়াই করে, তাহলে ব্রিটিশরা দ্রুত ভারত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। তিনি তখন ভারতের হিন্দু-মুসলমান দু’পক্ষের স্বার্থরক্ষার জন্য, কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের মধ্যে লখনৌ চুক্তি সম্পাদন করলেন। লখনৌ চুক্তির অনেক বোঝাপড়ার মধ্যে একটি ছিল, কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলন একই দিনে একই জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে। সময়টা হবে শুধু ভিন্ন। দু‘দলের সদস্যরাই যেন সম্মেলনে উপস্থিত থেকে পরস্পরের মতামত জানতে পারে। গোখেলসহ কংগ্রেসের সকল নেতারা এই চুক্তিতে খুশি হন। জিন্নাহকে বলা হতো তখন হিন্দু-মুসলমান মিলনের অগ্রদূত। গান্ধীই একমাত্র এই লখনৌ চুক্তিতে খুশি হননি, তিনি এই চুক্তির সমালোচনা করেন। গান্ধী তখন অল্প দিন হলো দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে এসেছেন। কংগ্রেসের তিনি কেউ নন। কিন্তু কংগ্রেসে যোগ দেবার আগ্রহ নিয়েই তিনি ভারতে এসেছেন। কংগ্রেসের প্রধান গোখেল তাঁকে কংগ্রেসে তৎক্ষণাৎ যোগদান না করতে দিয়ে বললেন, গান্ধী যেন আগে ভারতটাকে ঘুরে দেখেন এবং এখানকার মানুষের অবস্থাটা বুঝতে চেষ্টা করেন।
গান্ধীর কিন্তু এ সময়ে ভারতে আসার কথা নয়। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, বাকি জীবনটা দক্ষিণ আফ্রিকায় কাটাবেন অহিংস আন্দোলন করে। সারাজীবন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার জন্য তিনি সেখানে বিশাল জমি নিয়ে বড় একটা আশ্রমও গড়ে তুলেছিলেন। বিড়লা তাতে অর্থ জোগাতেন। ভারতে এ সময় ইংরেজরা একটু সংকটে নিপতিত হয়েছিলে। প্রথম মহাযুদ্ধ চলছে, কিন্তু ব্রিটিশরা ভারতীয়দের, কংগ্রেস মুসলিম লীগের কারোর সমর্থন পাচ্ছে না। ভিন্ন দিকে ভারতীয় কিছু যুবক সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে। ইংরেজরা বিভেদ করে শাসন করো নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে বিভিন্ন সময়ে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ বাঁধিয়ে তুলেছিলে, কিন্তু কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ এক হয়ে গেল। ভারতীয় যুবকরা প্রথম মহাযুদ্ধে সৈন্য হিসেবে যোগদান করতে চাইছে না, কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের নীতির কারণে। ভিন্নদিকে ভারতের স্বায়ত্বশাসনের জন্য অ্যানি বেসান্ত জনগণের মধ্যে আন্দোলন গড়ে তুলছেন, সেখানেও জিন্নাহ আছেন অ্যানি বেসান্তের সমর্থক। এর থেকে উদ্ধারের রাস্তা খুঁজছেন ইংরেজ শাসকরা, সঙ্গে টাটা বিড়লারা। কারণ শ্রমিকরা জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে চাচ্ছে, ফলে ইংরেজ সরকার আর বণিকরা যুদ্ধের সময় বিপদে পড়বে। কারণ যুদ্ধকে ঘিরে বণিকদের খুব মুনাফা হচ্ছিলে, হাতে জমছিলো প্রচুর টাকা। এ সঙ্কটের সমাধান পাওয়া গেল গান্ধীর মধ্যে। যদি গান্ধীকে ভারতে আনা যায়, তাকে নেতা বানানো যায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের; তাহলে সঙ্কটের চমৎকার সমাধান মিলবে।
গান্ধী কেন পছন্দের লোক হলো? গান্ধী দাবি দাওয়া করেন বটে, কিন্তু স্বাধীনতা বা স্বায়ত্বশাসন চান না। তিনি নিজেকে মনে করেন, ইংরেজ শাসকের দাস। তিনি মনে করেন, ইংরেজরাই ভারতের মঙ্গলের জন্য উপযুক্ত শাসক। তিনি মনে করেন, প্রজা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব শাসক প্রভুর হকুম মেনে চলা। আর প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অন্যায়। (দ্রষ্টব্য, গান্ধীর আত্মকথা) তিনি শাসকদের হিংসার পক্ষে থাকলেও, প্রজাদের সকল রকম হিংসাত্মক আন্দোলনের বিরুদ্ধে। ফলে ভারতীয় তরুণদের সশস্ত্র আন্দোলনকে তিনি কখনো মেনে নেবেন না। তিনি বর্ণপ্রথা বা চতুর্বর্ণে বিশ্বাস করেন, মনুর বিধান বিশ্বাস করেন, প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কে বিশ্বাস করেন। ফলে তিনি ব্রাহ্মণদের পক্ষে, জমিদারদের পক্ষে, বণিকদের পক্ষে থাকবেন। তিনি কট্টর ধার্মিক, বেদবাদী, গোহত্যার বিরোধী। তিনি বিশ্বাস করেন, ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা যায় না। ফলে তিনি যখন কট্টোরভাবে হিন্দু ধর্মের পক্ষে রাজনীতিতে অবস্থান নেবেন, স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু মুসলিম ঐক্য এক সময়ে ভেঙে পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি অহিংস আন্দোলনের প্রচারক, ফলে গান্ধীর নেতৃত্বে কোনো আন্দোলন শাসকদের গায়ে সামান্য নখ বসাবে না। নিজেদের মধ্যে বরং তা বিভেদ বাড়াবে।
সরকার আরো জানতো, অহিংসার পূজারি গান্ধী শাসকদের অহিংসাকে অনুমোদন করেন। শাসকদের অহিংসার পেছনে দাঁড়ান। কারণ ব্রিটিশ শাসকরা যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় দু’দুবার দুটো বিদ্রোহ দমন করার জন্য জনগণের উপর হিংস্র আক্রমণ চালায়, গান্ধী তখন প্রভু সরকারের পক্ষ নেন। দুবারই তিনি সরকারকে আবেদন করে তাঁর অহিংস চেলাদের নিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের সেবা করেন, চিকিৎসা দেন। সরকার সেজন্য গান্ধীকে দুবারই পদক দেয়। ফলে এহেন গান্ধীকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে সরকার বণিকদের সাহায্য নেয়। বিড়লার টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীর আশ্রম ও আন্দোলন চলতো। বিড়লার ডাকে তাই তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ইংরেজ সরকার, সরকারি পত্রপত্রিকা, বণিকরা গান্ধীকে ভারতের বিরাট নেতা বানানো আর কংগ্রেসের ক্ষমতা পাইয়ে দেবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। গান্ধী ভারতে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে গান্ধীকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। জিন্নাহ এসব সম্বর্ধনায় সরল বিশ্বাসে গান্ধীর প্রশংসা করেন। অ্যানি বেসান্তের হোমরুল লীগের ক্ষমতায় নিজে না বসে, গান্ধীকে সেখানে বসিয়ে দিয়ে বিপদে পড়েন। গান্ধীর কারণে আগের সব সদস্যরা হোমরুল লীগ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন। অহিংস গান্ধী কিন্তু ভারতে ফিরে প্রথমেই মহাযুদ্ধে ভারতীয় তরুণদের সৈন্য হিসেবে পাঠাবার জন্য সদস্য সংগ্রহে নেমে পড়েন। তিনি যুদ্ধের হিংসায়, রক্তপাতে সরকারের পক্ষে সৈন্য সংগ্রহে দোষ খুঁজে পাননি। কারণ ইংরেজরা হলেন তার শাসক প্রভু, প্রভুদের খুশি রাখা তাঁর কাজ। কিন্তু তিনি তরুণদের যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করতে পারেননি। অনেকে তখন তাঁর অহিংসা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেন। (গান্ধীর আত্মজীবনী) কিন্তু কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ এই যুদ্ধে ইংরেজকে সাহায্য দিতে চায়নি। গান্ধী চেয়েছে, তখনো তিনি কংগ্রেসের কেউ না।
মহাযুদ্ধ শেষে মওলানা আজাদসহ ভারতের কট্টর মুসলমানরা অর্থহীন খিলাফত আন্দোলন শুরু করে। তুরস্ক নিজেই তখন খিলাফতের বিরুদ্ধে, আফগানিস্তানের শাসকরাও খিলাফতের বিরুদ্ধে, অথচ ভারতের অন্ধ মুসলমানরা খিলাফত বজায় রাখতে চাইছে। কিছুদিন আগে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকে ঘিরে জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ড ঘটে। গান্ধী তারপর আবার আন্দোলন বাতিল করেন। রবীন্দ্রনাথ গান্ধীর উপর খুব বিরক্ত হন পুরো ঘটনার জন্য। গান্ধী এবার সর্বভারতীয় নেতা হবার জন্য নিজের বেশ পাল্টান, আর মুসলমানদের সমর্থন পাবার জন্য খিলাফতকে সমর্থন দেন। রবীন্দ্রনাথ এবারো গান্ধীর সমালোচনা করেন। তিনি খিলাফত সমর্থন দেন আসলে হিন্দুধর্মের স্বার্থরক্ষার জন্য। পাশাপাশি নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করে সকলের কাছে জনপ্রিয় হবার জন্য। এক ঢিলে দুই পাখি মারা তাঁর লক্ষ্য। তিনি বলতেন, ধর্ম বাদ দিয়ে রাজনীতি হতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই, তিনি বেদবিশ্বাসী হিসেবে রাজনীতিতে কার পক্ষ নেবেন? সনাতন ধর্মের বা হিন্দু ধর্মের। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ ছিলে ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। গান্ধী সেখানে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা আর গোরক্ষার কথা বলে, কংগ্রেসকে সাম্প্রদায়িক দল বানালেন। তিনি খিলাফতের মুসলমানদের বললেন, তিনি খিলাফতকে সমর্থন দেবেন যদি মুসলমানরা গোহত্যা বন্ধ করে। মুসলমানরা আবেগ তাড়িতভাবে তাতে রাজি হলেন। জিন্নাহ আর কংগ্রেসের সকল মূল নেতারা গান্ধীর বিরোধিতা করলেন। গান্ধী কিন্তু তখনো কংগ্রেসের তেমন কেউ না। কিন্তু সন্ন্যাসীর পোশাকের ভেকধারী গান্ধী তখন ভারতের কট্টর হিন্দু মুসলমানের কাছে ভয়াবহ জনপ্রিয়। কারণ মুসলমানরা বলেছে তারা গরু হত্যা করবে না, ফলে কট্টর হিন্দুরা রাতারাতি গান্ধীর ভক্ত হয়ে গেল। কট্টর মুসলমানরাও গান্ধীর ভক্ত, কারণ গান্ধীর কথায় হিন্দুরা মুসলমানদের খিলাফতকে সমর্থন দিয়েছে। জিন্নাহ জানতেন, এর ভয়াবহ পরিণতি ভবিষ্যতে কী হবে। জিন্নাহ লখনৌ চুক্তির মধ্য দিয়ে যে ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু মুসলমান ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন, গান্ধী সেটাকে ধ্বংস করেন। গান্ধী কট্টর হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ঐক্য ঘটালেন, যা টিকে থাকবার যুক্তি ছিলে না। কংগ্রেস দলের ভিতরকার সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে উন্মত্ত জনতার ভিতর নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে যা খুশি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। দলের বর্ষিয়ান আর স্থায়ী সদস্য জিন্নাহকে দলের ভিতর তার বক্তব্য রাখতে দেয়া হলো না। ইংরেজদের পরিকল্পনা সফল হলো। জিন্নাহ এ রকম অবস্থায় কংগ্রেস ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হলেন। তিনি সেদিন আর মুসলিম লীগের সম্মেলনেও যোগ দিলেন না। কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র এভাবে নষ্ট করলেন গান্ধী। নষ্ট করলেন দলের ভিতরকার গণতন্ত্র চর্চা। সেখানে নিয়ে এলেন একক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রাধান্য। চলবে