ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদের খুদে গল্প
প্রকাশিত : মার্চ ২৮, ২০২০
জনতার বিচরবোধ
বানর একবার এমন একটা কিছু খেল যেটা আর পেছন দিয়ে বের হচ্ছিল না। এরপর থেকে সে কলা খেলেও সেটা পাছা দিয়ে আগে ঢুকিয়ে দেখে নিত বের হবে কিনা। স্বচ্ছ বরফ মুখে গলে যায় দেখে এস্কিমোদের ধারণা, কাচের স্বচ্ছ গ্লাসও বুঝি মুখে বরফের মতো গলে যাবে। জনতার বিচরবোধও এমন। তারা যে বুদ্ধি-বিবেচনা দ্বারা প্রভাবিত হয় তা খুবইই নিম্নস্তরের। এই ব্যাপারে ফরাসি দার্শনিক গুস্তাভ লা বোঁ ‘দ্য ক্রাউড’ গ্রন্থে বলছেন, ‘জনতা বিচারশক্তিহীন অথবা তারা ভুল বিচারশক্তি দ্বারা পরিচালিত। বিস্মিত হতে হয় এটা দেখে যে, অনেক দুর্বল বক্তব্যও জনতার ওপর বিপুল প্রভাব বিস্তার করে।... একজন বাগ্মী জনতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে গ্রথিত হলে এমন সব রূপকল্প দাঁড় করাতে সমর্থ হয় যার ফলে যেকোনো দিকে প্ররোচিত করতে পারে।’
যে কারণে হিটলার বিপুল জনতাকে বিভ্রান্ত ও উন্মাদ করে রাখতে পেরেছিলেন। এবং জনতার এই বিপুল উন্মাদনায় পড়লে ফরাসি বিপ্লবের মতো ঘটনাও যেমন ঘটে, তেমনি আবার বিরাট বুদ্ধিমান ও মানবিক লোকও বর্বরের মতো আচরণ করে বসে। মুলকরাজ আনন্দের গল্পে আমরা দেখি, দেশভাগ বা দাঙ্গার সময় উত্থানরহিত বৃদ্ধও ধর্ষণে নামে। সোশ্যাল মিডিয়া বা ফেসবুকে এই ধরনের মব, এই ধরনের ক্রাউড, এই ধরনের জনতার বিচারবোধহীন উন্মাদনা প্রায়ই দেখা যায়। তাতে অনেক বুজুর্গ লোকও বিভ্রান্ত হয়।
রাজা করো প্রভু
ভবঘুরে চেনা কারো সাথে দেখা হলেই ভাব নেয় পাগল। চিৎকার করে রাজাকে গাল দেয়। অচেনা লোকের সাথে বসলে বিরাট জ্ঞানীর ভাব নিয়ে তুলে ধরে রাজার নানা ভুলত্রুটি। লোকে তাকে আপ্যায়নও করে।
রাস্তায় একলা হাঁটার সময় ভবঘুরে বিড়বিড় করে শুধু। বলে, ‘প্রভু, দয়াময়, আমারে রাজা বানিয়ে দাও।’
রাতে ঘুমের মধ্যেও বিড়বিড়ানি থামে না। ‘প্রভু, তোমার অসীম দয়া, বেশি না, একদিন মাত্র, একদিনের জন্য হলেও রাজা বানিয়ে দাও দয়াল।’
এক রাতে বৌ তার মুখের কাছে কান পেতে শুনে বিড়বিড়ানি। ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে বলে, ‘হেই, এত কম করে চাচ্ছ কেন? ওপরওয়ালার কাছে কী দিনমাসের অভাব আছে? বেশি করে চাও।’
ঘুম ভাঙা চোখে পাশ ফিরতে ফিরতে ভবঘুরে বলে, ‘ও তুমি বোঝবে না। আগে তো একদিনের জন্য হই। ওই একদিনেই সব দিনের ব্যবস্থা করে ফেলব।’
ভবঘুরের এই কাঙালপনায় দেবদূতদের মনও গলে যায়। একদিন তারা পরম করুণাময়কে অনুরোধ করে, ‘প্রভু, ওই ভবঘুরেটা এত করে চাচ্ছে। দিন না ওকে রাজা করে। একদিনের জন্য হলেও দিন।’
ওই রাতে ধড়ফড় করে ঘুম থেকে জেগে ওঠে বৌকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাঁপতে থাকে ভবঘুরে। গায়ে তার মরণ ঘাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া বৌ অস্থির হয়ে তার চোখে-মুখে-গায়ে হাত বোলায়।
‘কী? কী? কী হয়েছে তোমার?’
‘ওরে বাবা, আরেকটু হলেই জানটা গেছিল আর কি! রাজকাজ যে এত কঠিন তা কে জানত। মা গো মা। ও মা, চাই না মা গো রাজা হতে।’
এরপর থেকে রাজা হওয়ার ভয়ে সে আর ঘুমাতে পারে না।