শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তীর ৭ কবিতা

প্রকাশিত : মে ১৩, ২০২১

যে রোজ তোমার কাছে আসে

যে রোজ তোমার কাছে আসে
উপলক্ষ যা কিছু, যে কোনো কিছুই হতে পারে
আজ ভীষণ রোদ উঠেছিল
বিকেলবেলা ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছিল খুব
মিনিদের পোষা বিড়ালটা মারা গেছে গতকাল ভোরে
সমাগত বসন্তের ফুলবাগানে ধরেছে ঝুমুরলতা
ছাতাটা কোথায় হারিয়ে গেছে সেদিন
বুড়ির বাবার শরীর ভালো নেই আজকাল
খুব ভোরে কী যেন স্বপ্ন দেখে
মায়ের নাম ধরে কেঁদে উঠেছিল জোরে জোরে
সেবার দিঘার সমুদ্র থেকে নিয়ে আসা
ঝিনুকের মালা, ছুঁয়ে দেখলেই তোমার কথা মনে পড়ে যায়
টেবিলের ওপর ক্রমশ উঁচু হচ্ছে ইস্কুলের খাতা
ছোটটির গানের গলা খুব ভালো
বড়র আঁকার হাত
তোমাকে এত মলিন কেন দেখাচ্ছে আজ
খাওয়া-দাওয়া করছ না ঠিক করে
কিসের এত কাজ... কাজ...
পালিয়ে বেড়াচ্ছ জানি দূরে দূরে আরও দূরে
এবার কলকাতায় এলে দেখা করো
ছুঁয়ে দেখো শহরের খাঁজে খাঁজে
কত না-বলার কথার ধুলো জমে আছে
যে রোজ তোমার কাছে আসে
উপলক্ষ যা কিছু, যে কোনো কিছুই হতে পারে
কত কিছু বলে যায়
শুধু যা বলতে এসেছিল না-বলা সেটুকু রেখে
ফিরে যায়...

সে তোমায় বাসে ভালো
সে তোমায় ভালো বাসে

আবাহন

আসন রয়েছে পাতা ঝরাপালকের
আদিগন্ত বনভূমি দোলায় চামর
নক্ষত্রের চাঁদোয়ার তলে
ভালোবাসার পরমান্ন আছে রাখা

তুমি ভিক্ষুকের মতো নয়
রাজার মতো এসে বসো, সগৌরবে
দ্যাখো, পদতলে স্রোতস্বিনী কেমন বহমান

শোনো বসন্ত উতল করা ময়ূরের কেকা

অর্ধপূজা

তুমি পূজা করতে করতে উঠে গেলে
ঋত্বিক কোথায় পাব?
দরজা অবধি ফিরে গেছে যে আলতা পায়ের ছাপ
রুষ্ট দেবিকে তবে কিভাবে ফেরাব?

অসম্পূর্ণ পূজার কি প্রয়োজন ছিল তবে
পাপ হয় যদি দেবি এসেও ফিরে যান
এয়োস্ত্রীর বসে না মন ছন্নছাড়া সংসারে
শান্তি লাগে না ঘটে ঠিক সময়মতো

কে তবে করে দেবে বাকি মন্ত্রপাঠ
ফুল-চন্দন ছড়াবে বিল্ব পল্লবে
যেভাবেই হোক আনো দেবিকে ফিরিয়ে
বসাও তাকে শান্তি স্বস্তিকে মঙ্গলে ঘটে

অমৃতা

শ্বাস না ফুরালো মৃত নয় কেউ
অথচ শ্বাস নিতে নিতে কত মৃত শরীর
হেঁটে বেড়ায় বারান্দায়,
গলিতে, রাস্তায় উপবিষ্ট হয়
শরীরে স্তূপের মতো উঁচু হচ্ছে ফাঙ্গাস
মাথার ঘিলু খুঁটে খাচ্ছে নশ্বর কীটেরা
দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তবু
শ্বাস না ফুরালো এযাবৎ কেউ মৃত নয়

কতবার এভাবেই চেয়েছি তোমায় জানাতে
পিঠের ওপর শঙ্খের মতো উঁচু হয়ে উঠেছে মরাকোষ
বুকের ভেতর গেঁজিয়ে উঠছে বিষাক্ত রক্ত
আমার সমস্ত হেরে যাওয়ার ভেতর
উঁচু হয়ে উঠেছে তোমার ক্রোধে মৃত নগরীর কারাগার
এবার আমায় টেনে নাও তোমার নির্জনতম কোণে
মুক্তি দাও
সৎকার করো

কেবল তুমিই পারতে, বিশ্বাস করো, কেবল তুমি
অথচ একটিবারের জন্যেও এসে দাঁড়ালে না আমার
শেষ ইচ্ছের শিয়রে
চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে
বললে না, হে অমৃতা, জেগে থাকো, সদাজাগ্রত হও

কেবল আমার মুখে আগুন দিতে এসে
প্রথমবার মনে হলো তোমার
বড় দেরি হয়ে গেছে
হায় অমৃতা, বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে...

বলে যাব না

চলে তো যাবই কিন্তু বলে যাব না
ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট কথা দেব না
নামব গভীরে তবু রয়ে যাব না
থাকবে না মনে শুধু ভুলে যাব না

পাব না তোমায় যদি পেতে দেব না
নিজেকে নিজের ছায়া ছুঁতে দেব না
রাখব না বেঁধে তবু ছেড়ে দেব না
উড়িয়ে দেব না গান ভাসিয়ে দেব না

বলতে চাইছি তবু কিছু বলব না
ভাঙতে চাইছি তবে মোটে ভাঙব না
বাসতে চাইছি ভালো, ভালো বাসব না
চলে তো যাবই কিন্তু বলে যাব না

আমরা একদিন

সমস্ত রাস্তাগুলোই একদিন মিলে যাবে
পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে এসে
সমস্ত গাছেরা শাখা শাখায় জুড়ে
তৈরি হবে অবিন্যস্ত সেতু
সমস্ত নদীর জল এসে মিশে যাবে
একটিই মহাসমুদ্রে
সব পাহাড়গুলো নিজেদের তুলে ধরবে
একটি অভিন্ন শিখরে
আমরা সেই রাস্তা ধরে
সেই সেতুর ওপর দিয়ে
সেই মহাসমুদ্র পার করে
সেই শিখর টপকে
একদিন একসাথে আকাশকে ছুঁয়ে দেব।

ইঙ্গিত

আকাশে মেঘ করে এসেছে
এবার ঠিক কিছু একটা হবে

পিঁপড়ের সার পথ করে নিয়েছে নাভি থেকে মস্তকে
দ্যাখো তার আশ্চর্য অনুগমন
মাটি ছুঁয়ে বোঝো তার অন্তর্গত তাপ
এবার কিছু একটা ঠিক হবে

ওই যে মেঘ ডেকে উঠল
ওই যে বিদ্যুৎ খেলে গেল দিগন্তজুড়ে
নদীর জল ফুঁসে উঠছে

আমার বুকের কাছে এসো
এসো আমরা প্রশস্ত হই ক্রমে
যা কিছু অবশ্যম্ভাবী তার জন্য পথ করে দেই
 
এবার হবে
এবার ঠিক একটা কিছু হবে