শ্রেয়া চক্রবর্তী
শ্রেয়া চক্রবর্তীর প্রেমের কবিতা
প্রকাশিত : এপ্রিল ০৩, ২০২৩
ছায়া
এর চেয়ে ঢের ভালো গাছ—
কেমন স্পর্শহীন নদীহীন
বাতাসে দুলছে তবু নদীর
শরীর তার ছায়ায় কাঁপছে
আর কেবল ভাসছে এক
কাঠের মুকুট।
সে আমায় যেতে বলে।
ফিরিয়ে দিয়েছে বলে
আমি কি এ শরীর
জলে দিতে পারি?
ইতি, তোমার প্রলাপ
হে,
কেমন আছো তুমি? আর তোমার তেইশ বছরের প্রেমিকা?
আমার শরীর ভালো নেই। মনও নয়।
বাজারে যাইনি আজ। পাউরুটি খেয়ে ঘুমিয়েছি।
ঘুম ভেঙে দেখি, দুপুর হয়ে এলো। মাথার কাছে টুনটুনি পাখি।
বারান্দায় জোড় হাওয়া। রুমাল শুকিয়ে গেছে। চোখও।
বালিশটা আড়াআড়ি মাথার নিচে। প্রিয় বন্ধুর ফোন আসে।
আমার কোনো প্রেমিক নেই। ঝুটমুট কথা বলা হয় না আর।
খুব বেশি সত্য জানা ভালো নয়। তাতে, রোজ রাতে জ্বর আসে।
বাজারে যাইনি আজ। তবে যেতে হবে।
বাঁচতে চাই বলে
সুইচ নেভাতে গিয়ে ফিরে আসি।
সারারাত সারাদিন
পাখা ঘোরে
আলো জ্বলে জ্বরের ভেতর।
ইতি,
তোমার প্রলাপ।
ঘুম ভাঙার পর
কারও ঘুম ভাঙাতে চাই না আর।
ঘুম ভেঙে গেলে
ঠিকানা হারিয়ে যাবে,
হুড়মুড় করে
ঢুকে পড়বে জল
ঘুম ভেঙে গেলে
বলা আর হবে না কখনও
আমরা সঙ্গম চাই।
ক্রিশক্রশ
ডাইন লোকাল থেকে অর্বাচীন ঝড়ে
সবাই গিয়েছে নেমে শূন্য পরিখাতে,
মোমের বাকল খুলে শুয়ে আছে চাঁদ
ঘুম ভেঙে চুমু খাই কাঁটার দু’হাতে।
ঘড়ির বরফ ছুঁয়ে জেগে আছি কবে
টিকিট খোঁজার ছলে ডেকে নেব সাথে,
আমার দু’হাত ভরা রাতের রেকাবে
সাজিয়ে রেখেছি প্রেম সম অনুপাতে।
কাঁচের আগুন জ্বেলে পাতার মোড়ক
কুয়াশা মাখানো ভোরে রেখেছি লুকিয়ে,
প্রেতের আঙুল থেকে ছিটকে এসে পাশা
ক্রিশক্রশ জুয়াদান দিল উল্টিয়ে।
পার হয়ে জলসাঁকো প্রগলভ মেয়ে
ফলের চুপড়ি যত ফেলে গেল ঘাসে,
স্টেশনের সব স্ক্রিন মুছে গেছে ঝড়ে
আমিও গিয়েছি মজে সোনার গেলাসে।
ঋণ
ভালোবেসে সব শোধ করা যায়—
সব ঋণ আমি রেখেছি জমিয়ে
রুমালের গিঁটে, ঘরের দেরাজে, তাকে
কিছু সিন্দুকে কিছু ডুবে গেছে
নৌকো ভাসোনো জলে।
স্পর্শের যত ঋণ আছে বুকে
লুকিয়ে রেখেছি গোলাপের নিচে
পুরনো চিঠির মতো—
ভালোবেসে সবই শোধ করা যায়।