শিশু শিক্ষায় সংগীতের প্রয়োজনীয়তা
ফাতেমা আহমেদ কলিপ্রকাশিত : জুন ০৯, ২০১৮
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক সংগীত কী? সংগীতের পরিভাষা অনুসারে গীত,বাদ্য ও নৃত্য এই তিনের একত্র সমাবেশ হলো সংগীত।(সূত্র: এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত শিক্ষক নির্দেশিকা)
বলা হয়ে থাকে, আজকের শিশুই আগামী দিনের কর্ণধার। বর্তমানে উন্নত দেশ সমূহের শিশু শিক্ষার দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে, সেখানে সংগীত একটি অনিবার্য বিষয়। সংগীতকে শিক্ষার সাথে কিভাবে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা যায় এ নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক ডক্টর নিনা ক্রাউস তাঁর এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে,সংগীত শিক্ষায় শিশুদের স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং এটা শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হতেও সহায়তা করে। শিশুরা প্রকৃতিগতভাবেই সংগীতপ্রিয়। অতীত গ্রিসে সংগীত ছিল শিক্ষা দানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ছেলেদের ছ-বছর বয়স থেকেই সংগীতের শিক্ষা দেয়া হতো।
আমরা উপরের সংজ্ঞায় দেখেছি সংগীত হলো গীত,বাদ্য ও নৃত্য এই তিনের সমাবেশ। আমরা জানি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে এবং নৃত্য করার জন্য শিশুদের হাত,পা নাড়াচাড়া করতে হয়। এতে করে শিশুদের মটর স্কিল ডেভেলপড হয়। এছাড়া নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্রের কাজ একই তালে করতে হয় বিধায় শিশুদের মধ্যে শৃঙ্খলার সাথে দলে কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংগীত এবং ভাষা আমাদের মস্তিষ্কের একই জায়গায় প্রসেসিং হয়। সুতরাং ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে গান একটি উপযোগী উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গান গাইতে শিখেছে এমন শিশুরা লেখাপড়ায় ভাল করছে। আবার কেউ গান গাইতে না শিখলেও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেছে তাঁরা শব্দ এবং ভাষা শিক্ষায় ভাল করছে।(সূত্র:প্রথম আলো)
সম্প্রতি তোত্তো-চান(লেখক:তেৎসুকো কুরোয়ানাগি) নামে একটি জাপানী বই পড়ার সুবাদে সেখানকার একটি স্কুলের(নাম:তুমোই)সংগীত শিক্ষা সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। ওই স্কুলে সংগীতের উপর প্রতিদিন একটি বিশেষ ক্লাস নেয়া হতো, তার নাম `ইউরিদমিক্স`(এটি মূলত একটি পদ্ধতি)। `ইউরিদমিক্স` ব্যাপারটা কী জিজ্ঞেস করা হলে ওই স্কুলের হেডমাস্টারমশাই বলতেন "এটা একটা খেলা যার ফলে শরীরের ক্রিয়াগুলো শুদ্ধ হয়; এই খেলা মনকে শেখায় কেমন করে শরীরের চলন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।" ওই স্কুলের বাচ্চাদের হেডমাস্টারমশাইয়ের বাজানো পিয়ানোর তালে তালে নাচতে হতো। এই ইউরিদমিক্সের লক্ষ্য ছিল শরীর আর মনের ভেতরে তাল আর ছন্দের একটা বোধ জাগিয়ে তোলা।এর মাধ্যমে দেহ আর মনের চলনে একটা ঐকতান সৃষ্টি হতো। এই ঐকতান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শিশুদের মনের মধ্যে কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীলতার জন্ম হতো। এছাড়া সংগীত যেহেতু একটি আকর্ষণীয় বিষয় সেহেতু শিক্ষার্থীদের স্কুলের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ে। এতে উপস্থিতির হার বাড়ে এবং এর মাধ্যমে ঝরে পড়ার হার কমানো সম্ভব। (এদিক বিবেচনায় দেখা যায় উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশের জন্য সংগীত বিষয়টিকে সংযুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি)
যে মানুষের আত্মার সঙ্গে সংগীতের বাস সেই মানুষই ভালবাসতে জানে, বলেছেন এডমন্ড স্মিথ। এই জীর্ণ আর ভালবাসাহীন পৃথিবীকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে বিদ্যালয়ে সংগীত চর্চার কোন বিকল্প নেই। সংগীত চর্চার মাধ্যমে সৎ,সুন্দর, সৃজনশীল মানুষে ভরে উঠবে আগামীর পৃথিবী এটাই প্রত্যাশা করি।