অ্যাডলফ হিটলার
শিক্ষা নিয়ে অ্যাডলফ হিটলারের মন্তব্য
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০১৯
নিজে আমি ভেবেছিলাম, কখনো সরকারি চাকুরি করবো না। এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ছিলে। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষাদীক্ষা তো এই খাতেই প্রবাহিত, ছাত্রদের সরকারি চাকরির উপযুক্ত করে তোলা। যারা ভাগ্যবলে বিদ্যালয়ে একটু আধটু শিক্ষা পাচ্ছে, তাদের মনটাকে সম্পূর্ণ বিকৃত করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমি বিদ্যালয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করতে শুরু করি।
রাজনীতি নিয়ে পড়াশুনা তখন গুরুত্ব পেত না। আমার তখনকার ধারণা যে, প্রতিটি লোকের রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। যাদের পারিপার্শ্বিক জগৎটার রাজনীতি সম্বন্ধে জ্ঞান নেই, তাদের আলোচনা বা সমালোচনার অধিকারই নেই। আমি রাজনীতি নিয়ে পড়াশুনা আরম্ভ করি এবং বলতে দ্বিধা নেই, পড়াশুনা বলতে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা যা বোঝে, আমার মত ছিল তা থেকে ভিন্ন। আমি অনেককে জানি যারা বইয়ের পর বই, পাতার পর পাতা পড়ে চলে; তবুও তাদের আমি পাঠক বলি না। হয়তো তারা অনেক পড়েছে, কিন্তু তাদের বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কোথায়? সময়টাকে তারা বিশ্লেষণ করতে পারে না। এমনকি তাদের পক্ষে কোন বইটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা অপ্রয়োজনীয়, সেটুকু তফাৎ করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তাদের অবস্থা আগেরটা পড়ে তো পরেরটা ভোলে; তারপর আবার সেটা পড়ে।
পড়াশুনার নামে কখনো কখনো অপ্রয়োজনীয় মাল দিয়ে মাথা ভারী করে। পড়াশুনার একটা মূল উদ্দেশ্য হওয়া দরকার, প্রত্যেকের ভিতরের যে সুপ্ত প্রতিভা, তাকে জাগিয়ে তোলা। নিশ্চয় রুটি রোজগার হলো পড়াশুনা করার প্রথম উদ্দেশ্য। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি সেটা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ। যখন মানুষ দেখবে জীবনের বহু কিছু সে বুঝে ফেলেছে, তখন সে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হবে। যখন মানুষ বিদ্যালয়ের পুঁথির বাইরে আর কিছু পড়ে না, সেসব মানুষেরা জীবনে যখন সুযোগ আসে তখন তাদের বই পড়া বিদ্যা কাজে লাগাতে সক্ষম হয় না। কারণ তা তাকে বাস্তব জীবন সম্পর্কে কিছুই শেখায়নি। বিশেষ করে তার মানসিক গঠনটাই তো দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় যে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তারজন্য তৈরি নয়। মাথায় হয়তো বা বোঝাই বই পড়া মু্খস্থ বিদ্যা জমা হয়ে থাকতে পারে কিন্তু ভাগ্যক্রমে যদি একদিন ডাক পড়ে, তা কাজে লাগাবার একটা বিশেষ কাজের জন্য; দেখা যাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ জীবন সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সে কিছুই শেখেনি। এ যদি সত্যিকার অবস্থা হয়, তবে আমাদের দেশের সংসদের যারা তাবড় তাবড় ব্যক্তি, তাদের কাছ থেকে রাজনীতির ব্যাপারে কতটুকু আশা করতে পারি? আসলে তারা তাদের কথার জাল বিস্তার করে, খিস্তি খেউড় করে আর ছলচাতুরিতে সবাইকে ভোলায়। প্রতিপক্ষের বক্তব্যকে বিধ্বস্ত করে দেবার মতো যুক্তি সে খুঁজে পায় না। যখন সে ভাবে সব কিছুই তার জানা, আসলে সে কিছুই জানে না। ওদের রাজনৈতিক লক্ষ্য বলতে আসলে কিছুই ছিলে না। উপরন্তু যুক্তিতর্ক উপস্থাপনায় ওরা যে ছলচাতুরির আশ্রয় নিতো তা ছিলে চরম অপ্রীতিকর। তাদের বড় বড় কথা শুধু শূন্যগর্ভ এবং ধারণাতীত বাক্যে ভরা। কারণ এগুলি ছিলে তাদের মুখস্থ বিদ্যা আর ভুল শিক্ষালাভের ফসল। অপরদিকে যে ব্যক্তি জ্ঞান সম্যকরূপে আহরণ করে, হঠাৎ বাস্তব কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে পড়লে সে স্মৃতির পৃষ্ঠা হাতড়ে নিজের জ্ঞানভাণ্ডার থেকে প্রয়োজনীয় মুক্তোটা তুলে এনে জায়গা মতো বসিয়ে দিতে পারে।
তিরিশ বছর বয়সের আগে কোনো পুরুষের প্রত্যক্ষ বা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক ঘটনাতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। কারণ তিরিশ বছর বয়সের আগে মানুষের মানসিকতা পূর্ণভাবে গড়ে ওঠে না। বলাবাহুল্য, এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, যদি কারো ব্যতিক্রমী প্রতিভা থাকে তাহলে সেটা স্বতন্ত্র কথা। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকে বিভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ করে, নিজের অভিজ্ঞতাকে উল্টেপাল্টে উপযুক্ত মানসিকতা গড়ে তুলতে সময়ের প্রয়োজন।
একজন পুরুষের পক্ষে প্রথম উচিত হলো, সাধারণ জ্ঞানের একটা ভাণ্ডার নিজের মধ্যে গড়ে তোলা, যাতে জীবন সম্পর্কে তার নিজস্ব চিন্তাধারার একটা সুসংবদ্ধতা লাভ করতে পারে। যাকে এক কথায় জীবন দর্শন বলে। জীবন দর্শন বা নিজস্ব এরকম মানসিকতা গড়ে না উঠলে তার পক্ষে দৈনন্দিন কোনো সমস্যা সম্পর্কে নিজের বিচার বিবেচনা গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতাই তাকে কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে দৃঢ় এবং স্থির সংকল্প নিতে সাহায্য করবে। এই ধরনের মানসিক জমি প্রস্তুত না করে যদি কেউ রাজনীতিতে প্রবেশ করে, তবে সে উভয় সঙ্কটে পড়তে বাধ্য। কিন্তু যারা কিছুটা জ্ঞান অর্জন করে রাজনীতিতে এসেছে, তারা এমন পরিস্থিতিতে পড়বে না। তাদের নিজের চিন্তা সমস্যার সমাধান দিতে না পারলে তারা দিশাহারা হবে না। তারা এরকম পরিস্থিতিতে প্রথমে উপলব্ধি করবে জরুরি কতগুলি ঘটনায় তার চিন্তাধারা সম্পূর্ণরূপে ভ্রান্ত; তার চিন্তাধারা অসমর্থনীয় হওয়াতে বা তার আগের মতবাদ সমর্থন না পাওয়ায় স্বভাবতই তাকে আরো ভালো জ্ঞান এবং পরিপূর্ণ বিচারের আশায় ছুটতে হবে। চিন্তাকে কী করে সমৃদ্ধ করতে হয় তা সে অবগত বলেই, আগের ভুল চিন্তাকে আঁকড়ে পড়ে থাকবে না। নিজের চিন্তাকে আঁকড়ে ধরে থাকলে শীঘ্রই এমন এক সঙ্কটপূর্ণ জায়গায় এসে দাঁড়াবে এবং সেটা অতিক্রম করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। চিন্তাধারার খুব বেশি অসঙ্গতি দেখা দিলে আর তা শোধরাতে চেষ্টা না করলে খুব বেশি লোক তাকে নেতা বলে মানবে না। ফলে রাজনীতি করবার জন্য রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন করাটা জরুরি। ছাত্রজীবন থেকে তাই বিদ্যালয়ের বইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক বই অবশ্যই পাঠ্য হতে হবে। নিজের সময়কালটাকে বুঝতে না পারলে বিপদ।
নিজের সময়কালটাকে ব্যাখ্যা করতে পারার মধ্য দিয়ে বহু সম্ভাবনা তৈরি করা যায়। শুধুমাত্র বইপড়া জ্ঞান নয়, তার জন্য দরকার গভীর পর্যবেক্ষণ আর অভিজ্ঞতা লাভ। গত শতকের দ্বিতীয় দশকের কোনো প্রতিভাবান মহাপুরুষ বা মনীষী সহসা তাঁর কবর থেকে যদি উঠে আসেন, তিনি এ যুগের অগ্রগতির কিছুই বুঝতে পারবেন না। অতীতের কোনো ব্যক্তিকে এ যুগের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হলে তাকে অনেক প্রাথমিক জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে, যা আজকের যুগের ছেলেরা খুব আপনা থেকে পেয়ে যায়। হঠাৎ করে একটা সমাজকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ছাড়া ধারণ করা যায় না। সেজন্য ইতিহাস পাঠ জরুরি। বিদ্যালয়ে যে ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হয় তা মোটেই উপযুক্ত নয়। শুকনো কটা দিন, তারিখ আর পঞ্জীর মধ্যে আবদ্ধ যে ইতিহাস, সেটা জাতির ইতিহাস নয়। কবে কোথায় যুদ্ধ হয়েছে, কোন সেনাধ্যক্ষ কতে তারিখে মারা গেছে, অথবা কোন দিন কার মাথায় রাজমুকুট চড়েছে; এসব খবরাখবর জানা ইতিহাস হতে পারে না। ইতিহাসের অর্থ হলো, কোন্ বিশেষ ঘটনা কেন এবং কীভাবে একটা জাতির জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে ছিল, সেইটা জানা।