শাহেদ কায়েসের চারটি কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ২২, ২০২৩
জ্যামিতিক বিস্তার
বৃন্তের এত টান, কী রহস্য লুকিয়ে আছে যৌগিক পত্রে!
কামিনী সন্ধ্যা, সপ্তপর্ণী ঘ্রাণ ছুঁয়েছে আমাদের মিথস্ক্রিয়া
দুলে ওঠে দেহ-একতারা, গভীর থেকে যে আরও গভীরে―
সবুজাভ সাদা অসংখ্য ফুলে ঝুঁকে আছে ছাতিম শরীর।
প্রত্যুষে শায়িত পাহাড়― তারও জেগেছে অসীম বিস্তার
অনন্ত ট্র্যাকিংয়ে জ্যামিতিক চূড়ায় মেঘের বিচ্ছিন্ন স্পর্শ
চোখ থেকে উড়ে গেলে রক্তমল্লিকা, জাগে শাল-বৃক্ষ ঊরু
সীমানা পেরিয়ে দূরে― সারা রাত আমাদের দেহ-পারাপার
লাকমা ছড়া
স্মৃতিসূত্রটি ছিঁড়ে গেলে শতাব্দীর হাওর-কিনারে একা
দাঁড়িয়ে স্পর্শমুখর অঙ্গের মুগ্ধতা মেখে নিই চোখেমুখে
মেঘালয় রাজ্যের জয়ন্তী পাহাড়ের পাদদেশে মাত্রাবৃত্তে
বৃষ্টি পড়ে, সীমান্তের সমস্ত সংস্কার ভেঙে লাকমা ছড়া
পাথরে জাগায় প্রাণ, কাঁটাতারের আড়ালে আধখানা
সেতু― ঢেউয়ে বিরামহীন কে বুনে চলে জলের তাঁত!
আজান জেলের সেই কবে ডুবে যাওয়া ডিঙি, হাড়গোড়
জলজননীর কোলে শুয়ে আছে, অন্তিম জিজ্ঞাসা হয়ে।
জলভরা হাওরের চোখ
পাক খেয়ে-খেয়ে উড়ছে বিষণ্ণ কয়েকটি গাঙচিল, দূরে―
শব্দহীন নীল সময়ের ভিতর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে নৌকো
বড়গোপ টিলা থেকে সীমান্তের দিকে উড়ে গেছে পাখি
ধ্যানী হিজলের ডালে ফেলে রেখে তার উজ্জ্বল পালক
পালকে সঙ্কেত চিহ্ন, ভেঙে দিগন্তের বেড়, এসো ফের
বৈশ্যমতে ঘর বাঁধি করচের বনে, সাক্ষী রেখে চন্দ্র-সূর্য
মাঘ তো অনেক দূরে, তবে কোথায় গেল ব্রতীরা সবাই!
ঢেউয়ের চূড়ায় সূর্য্যব্রত সঙ্গীতের ধ্বনি পাহাড়ে প্রতিধ্বনি
হয়ে ফিরে এলো― কারা যে শানাচ্ছে নৈঃশব্দ্যের ছুরি!
মাঝরাতে ঝড়― খুলে যায় হাওর-কপাট, কেঁপে ওঠে
জলভরা চোখের পাতা, জলমহালে স্বপ্নে কি জাগরণে―
জলের গভীরে আমি কি শুনিনি অদৃশ্য কান্নার ধ্বনি?
যাদুকাটা নদী
কেঁপে কেঁপে ওঠে করচ বন, হাওর-ঢেউয়ে হাওয়ার স্বনন
ছায়ার পাশে ছায়া, জলাবনের গূঢ়জলে উদ্দাম নিঃশ্বাস
দৃশ্যশূন্য জলের উচ্ছ্বাসে ভেসে আসে মৎস্যের আমন্ত্রণ
ঠোঁটে পুঁটি বালিহাঁস― ‘নয়কুড়ি কান্দার, ছয়কুড়ি বিল’...
ওই যে জয়ন্তী পাহাড়― মেঘের আলোয়ে ইশারা, অসবর্ণ
মেলামেশা, অল্প-শ্রাবণে জবাফুলের ঘুম ভেঙেছে এবার!
বেরিয়ে সূর্যোদয়ের অভিমুখে কে জানে কখন ফিরবে সে
চোখে চোখ পাতো, কী গভীর আবেগে উড়ছে পানকৌড়ি!
হাওরে সুবেহ-সাদেকের আলোয় বোমা-মেশিনের শব্দে―
কেঁপে কেঁপে উঠছে কে!― পাথর-পোয়াতি যাদুকাটা নদী