শব্দ আহমেদের কলাম ‘শিক্ষক ও ছাত্রীর সম্পর্ক’
প্রকাশিত : এপ্রিল ০১, ২০২৩
নিজের অজান্তে কি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন আপনিও? আজকাল সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী হয়রানির খবর প্রকাশিত হয়। একসময় শিক্ষক শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথা শ্রদ্ধায় অবনত হতো। এখন সময় পাল্টে গেছে। পরিস্থিতি নিয়মের অনেকটা বিপরীত দিকেই ধাবিত হচ্ছে। কালের বিবর্তনে এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক অনেকটা সহজ হয়ে উঠেছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু স্বস্তি তৈরি করলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্কের সুযোগের অপব্যবহার করছেন অনেক শিক্ষকই। অনেক সময় শিক্ষার্থী হয়তো বুঝতেও পারছে না তাকে নিয়ে শিক্ষকের করা মন্তব্যটি যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ছে। আবার অনেক সময় হয়রানি অনুভব করলেও ভয়ে কিছু বলতে পারে না মেয়েরা। কেউ যদি মনে করে হয়রানির শিকার হচ্ছে, তাহলে সে আইনি আশ্রয় নিতে পারে অথবা অন্য কারও পরামর্শ নিতে পারে। কারণ হয়রানির প্রথম পর্যায়ে সঠিক উপায়ে তা ঠেকাতে না পারলে অপরাধী আরও উৎসাহ পায়। পরে এ থেকেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কোন ধরনের বিষয়গুলো হয়রানির পর্যায়ে পড়ে, তা জেনে রাখা ভালো। যাচাই করুন মন্তব্যগুলো নির্দোষ নাকি ইঙ্গিতপূর্ণ। নির্দোষ ও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে।
একটি উদাহারণ দেয়া যাক:
ধরুন, শান্তাকে তার শিক্ষক বললেন, দেশি পোশাকের চেয়ে পশ্চিমা পোশাকে তোমাকে অনেক ভালো মানায়। অনেক শিক্ষার্থীই মনে করেন এক্ষেত্রে কোনো কথা না তুললেও তা এখানেই মিটে যাবে। অথবা তারা ভাবে, তাদের শিক্ষক তাদের সঙ্গে অরুচিকর কিছু করতে পারবে না। সেই সঙ্গে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পেছনে ভয়ও কাজ করে থাকে। এক্ষত্রে চুপ করে থাকাটাই তারা ভালো মনে করে। যা অবশেষে চরম বিপর্যয় ডেকে আনে। কারণ শিক্ষক তার মৌনতাকে দুর্বলতা ধরে নিয়ে এগিয়ে যায়। তাই মন্তব্যের ভাষা বুঝে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ করতে হবে। সম্পর্কের সীমারেখা বুঝতে হবে।
আজকের যুগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ অনেক সহজ। বিশেষ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের কল্যাণে এ সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে গেছে। আর ঠিক এ জায়গাতেই সীমা লঙ্ঘন করে বসেন অনেকে। ফেসবুকে কথোপকথনের সময় অনেক শিক্ষকই হয়তো মজা করে অনেক কিছু বলে থাকেন, আর শিক্ষার্থীও একে সহজভাবে নেয়। এ থেকেই অনেক দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। তাই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে। কোনো মন্তব্য না পছন্দ হলে তা জানিয়ে দিতে হবে তৎক্ষণাৎ। প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে সময়মতো।
চিত্রশিল্প, নাচ, নাটক, খেলা এসব ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক অন্যরকম হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণের স্বার্থে শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুজনকেই কিছু শারীরিক যোগাযোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এ রকম মুহূর্তে শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হচ্ছে কীনা, তা বের করা মুশকিল। তবে সহজাত বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে হবে। কাজ করে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে কীনা, তা শিক্ষার্থীকে অনুভব করতে হবে। অস্বস্তি লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তা জানাতে হবে। কারণ এ ধরনের ঘটনায় নীরবতা অপরাধীকে আরও উৎসাহী করে তোলে। তাই অন্যরকম কিছু মনে হওয়া মাত্রই কর্তৃপক্ষসহ কাছের বন্ধুদের তা জানিয়ে রাখা ভালো। জানাতে হবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকতে হবে কঠোর নিয়ম-কানুন নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তির বিধান। এটা থাকলে যে কেউ অপরাধ করার আগে অন্তত একবার ভাববে।
অনেক সময় দেখা যায়, স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনা খুব নিয়মিত ঘটে। আমাদের দেশেও প্রথমসারিতে থাকা স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হয়। প্রায়ই আমরা এসবের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ অনুষ্ঠান দেখছি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ গড়ে না উঠলে এর প্রতিকার হবে না। শুধু এক বছর বা এরও কিছু বেশি সময়ের সাময়িক বরখাস্ত উপযুক্ত শাস্তি নয়। কারণ অভিযুক্ত শিক্ষক হয়তো এসময়ের মধ্যে অন্য কোথাও কাজ জুটিয়ে নেবে, আর সেখানেও যে আগের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন যে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই কঠিন শাস্তির বিধান রাখতে হবে। যাতে একজনের পরিণাম দেখে আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়।
দূরত্ব বজায় রাখতে হবে:
কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হন। অনেক সময় শিক্ষার্থীও হয়তো বোঝে না তার আচরণ শিক্ষককে প্রলুদ্ধ করছে। তাই শিক্ষার্থীকেও আচরণের ক্ষেত্রে সচেতেন হতে হবে। শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করা নিয়েও সতর্ক হতে হবে। এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে মার্কিন অধ্যাপক অ্যাঙ্গেলা ডেভিড বলেন, মেয়ে শিক্ষার্থীর কখনই একা একা তার শিক্ষকের বাসায় যাওয়া উচিত নয়। যদি কোনো কারণে যাওয়ার একান্ত প্রয়োজন পড়ে তাহলে অবশ্যই সঙ্গে কাউকে নিতে হবে। কী কথা বলা হচ্ছে তা খেয়াল করুন। কোন ধরনের কথা গ্রহণযোগ্য, তা তোমাকে বুঝে নিতে হবে।
শিক্ষক হয়তো শুরু করলেন, বাহ, তোমাকে আজকে বেশ সুন্দর লাগছে। চুলে নতুন কোনো কাট দিয়েছ বুঝি? পোশাকটি তোমার শরীরে ভাল ফিট হয়েছে। নতুন চুলের স্টাইলে তোমাকে খুব আকষর্ণীয় লাগছে। তোমার আঙুল খুব সরু ও সুন্দর।... শিক্ষকের এসব যখন সহজ মনে হবে না তখন কী করবেন? আপনার কাছের বন্ধুকে ব্যাপারটি খুলে বলুন। তার কাছ থেকে জানুন এখন আপানার কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলুন অথবা পরিবারে বাবা-মা, ভাইবোনকে জানিয়ে রাখুন।