লুনা রাহনুমার চারটি প্রেমের কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ০৮, ২০২০
প্রেমিকার শব
প্রবল পরাক্রমে জোয়ার আসে
প্লাবনে ভেসে যায় এ কূল সে কূল।
উত্তাল জলের খেলা স্তিমিত হয় একসময়
প্রখর মধ্যাহ্নেরও বেলা শেষ হয় অবশেষে।
বালিয়াড়ির বুকে জমে থাকা জীবাশ্মের অস্তিত্ব
কালের বিপাকে পড়ে হয়ে গেছে নির্বাক, নির্লিপ্ত—
প্রাণহীন শরীরে তার লেখা আছে গতজন্মের প্রেমের গল্প।
খুব প্রয়োজন ছিল কি প্রেমিক-প্রেমিকার
এত প্রেম আর ভালোবাসার
কিংবা কলহ ও বিচ্ছেদের এত সমারোহ!
জীবন তো তবুও টেনে টেনে ঠিকই ফুরাতো
শুয়ে থাকতো এইভাবে মৃতদেহের মতো
ভেজা বালিতে, একাই।
উপরে শুকনো শরীর আর ভেতরে টগবগে প্রেমের লেলিহান শিখা
চিতার আগুনের মতো সদা জ্বলন্ত।
স্বপ্ন বপন
একটু দিলে কি হয়...
প্রেমার্ত করুণা,
প্রসারিত হাত অথবা
সান্নিধ্য দুর্দিনে!
আমরা তো বুনেছিলাম
টিউলিপ বাগানে, স্বপ্ন বপন হয়েছিল যেখানে।
বর্ণিল ফুলের পাতার তলায়
বুঝিনি কখন লুকিয়ে ছিল—
সবুজ সাপের বিষাক্ত ফণা
দাসির ব্যথা
ভালোবাসার মহার্ঘ্য নিয়ে
শ্যামা যায় রাজার দরবারে দিতে পুষ্পাঞ্জলি।
উজার করে প্রণয়ের ডালি
প্রেমাতুর কন্যা পড়লো ঢলে সিংহাসনের মূলে।
মুদ্রিত আঁখি অপেক্ষায়— শুনবে মধুর বাণী
হয়তো মহারাজা আজ টেনে নেবে পাশে
জড়াবে অবলাকে নিজের বুকের সাথে।
হায়, বিশ্বাস করা দায়
এই কী রাজার ভাষা!
করলো কেবল অবজ্ঞা আর উপহাস!
একি তবে রাজাধিরাজের অপরাধ নয়
সামান্যের হাতের ছোঁয়ায় যদি রাজার ঘেন্না হয়?
রাজদরবার ছেড়ে শ্যামা পালিয়ে আসে
লজ্জায় মুখ নত—
পরের উঠোনে উৎসবের আলোয়
নাচবে না আর কস্মিনকালেও
মনকে বোঝালো শতবার।
প্রাসাদের গায়ে পরগাছাসম
দরবারের স্তুতিরত সহস্রজন—
আশ্রিত সবে, সবাই অতিথির মতন।
নিজ মনে সে ঘর আপন ভাবলেও
প্রজাকূল চিরদিন বহিরাগত হয়েই রবে।
প্রেমের গান
কখনো প্রশান্তি
কদাচ বিরম্বনা,
রাতের আদলে
সকালের ঘুমভাঙা...
আমাদের মাখামাখির ছোটগল্প চাঁদরে
আমাদের প্রেমের উপাখ্যান বিলুপ্তপ্রায়
লৌকিক সংসারে...
এসো, আমরা হাত ধরি
নুড়ি কুড়াই পা ভেজাই জলে...
মুখে মাখি সতেজ বাতাস
বালুমাখা থাক পায়ের তলে...
সাগর সাক্ষী— এই হাসি খুব খাঁটি
মুদ্রিত আছে দুজনের মুঠোফোনে।
আকাশের রং
বাতাসের শব্দ
প্রাণ ভরে শুষে নেই আমাদের মর্মমূলে...
বহমান সাগর ধুয়ে নিয়ে যাক
যত শোক গ্লানি গ্রাসিছে আজ মানবকূলে।
আমরা আবার ভাসাবো তরণী
সুখের ঢেউয়ে দুলে...
তোমাতে আমাতে প্রেমের প্রতীক হয়ে...