লুইস গ্লুক

লুইস গ্লুক

লুইস গ্লুকের কবিতা

প্রকাশিত : অক্টোবর ১৩, ২০২০

আঠারো বছর বয়সেই কবিতায় হাতেখাড়ি হয় লুইস গ্লুকের। পঁচিশ বছর বয়সে বের হয় প্রথম প্রকাশিত কবিতার ‘ফার্স্টবর্ন’। এ বইটি দিয়েই তিনি সাড়া ফেলে দ্যান সাহিত্যজগতে। এরপর ধীরে ধীরে ঋদ্ধ করেছেন নিজেকে। বেরিয়েছে বেশ কিছু বই। মেলভিন কানে, পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন অনেক আগেই। এবার পেলেন নোবেল পুরস্কার। আমেরিকার এই কবির দুটি কবিতা ছাড়পত্রের পাঠকদের উদ্দেশ্যে। ছাড়পত্র ডেস্ক

অনুবাদ: রহমান হেনরী

পিয়ানোয় তোলা সুর

মা মারা গেলেন গতরাতে,
মা, যিনি কখনও মরেন না।
বাতাসে শীতকাল ছিল,
অনেক মাস আগে
তবুও ওটা এখনও বাতাসেই।
মে মাসের দশ তারিখ।
হায়াসিন্থ আর আপেলফুল
ফুটেছে পিছনের বাগানে।
আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম
চেকোশ্লোভাকিয়ায় একের পর এক গান গাইছে মারিয়া—
আমি কত একা—
এরকম সব গান।
কত একা আমি,
মা নেই, বাবা নেই—
ওদের শূন্যতায় আমার মগজ খা খা করছে।
মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে সুগন্ধী;
থালা-বাসন সিঙ্কে পড়ে আছে,
ধোয়া হয়েছে, কিন্তু সাজিয়ে রাখা হয়নি।
পূর্ণিমারাতে
কেচে দেয়া কাপড়গুলো ভাঁজ করছে মারিয়া
কড়কড়া হয়ে ওঠা চাদরগুলো
শুকিয়ে জ্যোৎস্নালোকের আয়তক্ষেত্র হয়ে উঠলো।
কী নিঃসঙ্গ আমি, অথচ গানের ভিতর
আমার নৈঃসঙ্গই আমার আনন্দ।
মে’র দশ তারিখ
যেমন হাজির হয়েছিল নয়, আট।
মা তার বিছানায় ঘুমাচ্ছেন,
বাহুদ্বয় প্রসারিত, তার মাথাটা
ভারসাম্য খুঁজে নিয়েছে বাহু দু’টির মাঝখানে।

অনুবাদ: রথো রাফি

ডুবে যাওয়া শিশুরা

দেখলে তো, ওদের কোনো বিচার বোধই নেই।  
তো এ-ই স্বাভাবিক, ওদের ডুবে মরাই উচিত,
প্রথমে বরফের স্তর ভেতরে টেনে নেয়
আর পরে, সারাটা শীত, ওদের উলের স্কার্ফ
ভাসতে থাকে ওদের পেছনে, যখন ওরা ডুবতে থাকে
যতক্ষণ না ওরা অবশেষে শান্ত ও নীরব হয়ে যায়।  
আর ডোবাটি ওদের তুলে ধরে তার অতি অন্ধকার হাত দিয়ে।  
কিন্তু মৃত্যু ওদের কাছে আসা উচিত অন্যভাবে,
শুরুর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে।  
যেন ওরা ছিল সবসময়েই
অন্ধ আর নির্ভার। তাই
বাকিটা স্বপ্নে দেখা, কুপিটা,
নির্মল সাদা কাপড় যাতে টেবিলটা ঢেকে রাখা,
ওদের মরদেহ।  
এরপরেও ওরা শুনতে পায় ওদের নাম যা ব্যবহার
করতো ওরা ডোবায় পিছলে পড়ায় প্রলুব্ধ করতে:
কিসের অপেক্ষায় আছিস তোরা
বাড়ি আয়, বাড়ি আয়, নিখোঁজ
পানির নিচে, কী নীল আর অপরিবর্তনীয়।