লতিফ জোয়ার্দারের কবিতাগুচ্ছ

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৪, ২০২০

সেবিকার হাত

মাঝে মাঝে আকাশের মতো তোমাকেও আমার চোখের ক্লান্তি মনে হয়।
ধূসর বৃষ্টির রাতে তোমার অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াই আমি। পরিত্যক্ত প্রেমিক
যেমন কালো একাকিত্ব নিয়ে বসে থাকে। একদিন বীভৎস স্মৃতির মানচিত্র
পরম আগ্রহে বহুতল আরকাইভে রেখে, অন্তর্গত বিভক্তিগুলো চরম অবজ্ঞায়
হারাবো। আমার প্রতিটি ক্রোধ, প্রতিটি ভুল অযাচিত আগ্রহগুলো পরম
প্রিয়তায় কখনো সত্য বলে মনে হবে তোমার। জানি কোনোদিন, কোনো
ব্যাখ্যায় যাবে না তুমি। হয়তো দশকের পর দশক, শতাব্দীর পর শতাব্দী
শুধু এই রোদমাখা সকাল, সবুজ বাগানের পথে কোনো এক সেবিকার হাত
হয়ে, ছুঁয়ে যাবে আমায়। অন্যসব প্রতারণার দিন বদলে দিয়ে মুখোমুখি
আমরা। আবার ব্যক্তিগত বিভোরতায় গভীর ক্লান্তির মতো আকাশ হবো

নাম তার তহমিনা সুলতানা

নাম তার তহমিনা সুলতানা। যার সাথে পার্টনারশিপে একটা ছোট্ট ঘর আমাদের। মিলেমিশে সে ঘরে একসাথে থাকি। বৃক্ষের ছায়ায় পাতায় পাতায় ভরা উঠোন। ঘরের পিছনে মাঝে মাঝে গড়ে ওঠে লাউলের মাচান। তারই এক কোণে লকলকে পুঁইশাক। কলপাড়ে বেড়ে ওঠে টক বড়োইয়ের গাছ। আম জাম কাঁঠাল লেবুর একসাথে করেছি চাষ। মাঝে মাঝে আমাদের আকাশ হয়ে থাকে উদাস। একসাথে থাকি বলে, সবকিছুই করেছি ভাগাভাগি। ভাগাভাগি হয়নি শুধু দুটি মনের। মনতো উড়াল পাখি পূর্ণিমারাতে জোছনার রঙে ভাসে। এভাবেই এ সংসারে আলো আঁধার  আসে। একদিন কারোই ছিল না কোনো চেনাজানা পরিচয়। বুঝতে পারিনি অচেনা জনের সাথে কী করে বন্ধন হয়।

এখন আর আমি ভাবছিনা তোমাকে

এক অদ্ভুত সময় চলে যাচ্ছে আমার
নিকুঞ্জে বসে পার করছি অন্ধকার।
এখন আর আমি ভাবছি না তোমাকে।
হতে পারে আজও প্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনি।
হয়তো ভেজা অন্ধকারে
তোমার নরম চিবুকের ছোঁয়া মনে রাখতে পারিনি।
এসব কেবলই আমার মৃত্যুচিন্তার ফসিল।
তোমার নিকট থেকে নয়! আমি আজ পালাতে চাই
সব চেনামুখ থেকে দূরে। হয়তো সুনিপুণ ব্যর্থতাগুলো এখনও আমার দরোজায় দাঁড়িয়ে আছে।
সর্পগন্ধা লতাগুল্মের মতো। সেইসব প্রিয়দৃশ্য
একদিন যা কামুক কারুকার্য শোভিত মনোমুগ্ধকর ছিল।
সব ছেড়ে  ক্রমাগত সেচ্ছায় নির্বাসনে যাব আমি।
নির্বিঘ্নে একাকী হেঁটে যাব যৌবনের ঘনিষ্ঠ প্রণয়শিল্প রেখে সজ্ঞান আলিঙ্গনে।

কয়েকটি চকলেট কবিতা

১.
আমার বন্ধুদের অনেকেই কবি নয়! কবিতা মগজে রাখে না তারা। অথচ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। ফুল আমিও ভালোবাসি তবে কবিতার চেয়ে বেশি নয়।

২.
হাসপাতাল ফিরে আসার শেষ আশ্রয় হলেও
আমি হাসপাতাল থেকে দূরে থাকি। রোগ নয়, প্রতিরোধে বিশ্বাসী আমি। অথচ কোনো নিকটজন রোগে আক্রান্ত হলে সারারাত আমি হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটি।

৩.
তাকে ভালো লাগে তাই লিখেছিলাম, তুমি কবিতার মতো সুন্দর। উপমাটা মিথ্যে জানি। জানি এসব মন ভুলানোর জন্য। তার কাছে এখনও আমি খুবই সামান্য।

৪.
তার কাছে ঘর চাইলাম আমি। সে আমাকে দিলো ঘড়ি। আমি এখন সময়ের ঘণ্টা বাজাই। পৃথিবীটা আমার ছিল। এখন আর নাই!

৫.
মহল্লার মুরব্বিরা সাঁতার ভুলে উড়ে যাওয়ার কৌশল রপ্ত করছে। মাছজীবন থেকে কখন যে তারা পাখি হয়ে গেছে!