রোকনুজ্জামান খানের ৪ ছড়া
স্মরণ
প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৩, ২০২৩
শিশুসাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে তার লেখা চারটি ছড়া পুনর্মুদ্রণ করা হলো:
হাট্টিমাটিম
টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।
বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।
সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।
উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাঁড়ি
আজব দু`পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।
সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হলো দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।
উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।
চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।
বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে।
শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।
গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।
মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে।
গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হলো তা
হাট্টিমাটিম টিম।
হাট্টিমাটিম টিম
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।
হাসি
হাসতে নাকি জানে না কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোনো না কত হাসির
খবর বলে যাই।
খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে
কাজল বিলে শাপলা হাসে
হাসে সবুজ ঘাস।
খলসে মাছের হাসি দেখে
হাসে পাতিহাঁস।
টিয়ে হাসে রাঙা ঠোঁটে
ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটে
দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা
হাসতে সবাই চায়
বোয়াল মাছের দেখলে হাসি
পিলে চমকে যায়।
এত হাসি দেখেও যারা
গোমড়া মুখে চায়
তাদের দেখে পেঁচার মুখেও
কেবল হাসি পায়।
বাক বাকুম
বাক্ বাক্ কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি?
চড়বে সোনার পালকি?
পালকি চলে ভিন গাঁ
ছয় বেহারার তিন পা।
পায়রা ডাকে বাকুম বাক্
তিন বেহারার মাথায় টাক।
বাক্ বাকুম কুম্ বাক্ বাকুম
ছয় বেহারার নামলো ঘুম।
থামলো তাদের হুকুম হাঁক
পায়রা ডাকে বাকুম্ বাক্।
ছয় বেহারা হুমড়ি খায়
পায়রা উড়ে কোথায় যায়?
গাধার কান
একটা দড়ির দুদিক থেকে টানছে দুদল ছেলে
তাই না দেখে বনের বানর লাফায় খেলা ফেলে।
সকল বানর ফন্দি আঁটে জবর মজার খেলা
এমন খেলা খেলেই সবাই কাটিয়ে দেব বেলা।
কিন্তু দড়ি মিলবে কোথায়? ঘাবড়ে গেল মাথা
পালের সেরা বানর বলে মগজ তোদের যা-তা।
নেইকো দড়ি বয়েই গেল ভাবিস মিছে হাবা
লেজে লেজে ধরব টেনে হবে দড়ির বাবা।
যেইনা বলা দুদল বানর দুদিক থেকে বসে
একের লেজটি ধরল টেনে জোরসে চেপে কষে।
বনের গাধা দাঁড়ায় মাঝে উঁচিয়ে দুটি কান
বলে, আমার দুদিক থেকে কান ধরে দে টান
কান ধরে এই মাথা নিবি আপন দলে টেনে
জিতবি তবে এই খেলাতে, রাখিস সবাই জেনে।
অমনি দুদল হেঁইয়ো টানে, গাধার বিপদ ভারি
কান ছিঁড়ে সব হুমড়ি খেয়ে পড়ল সারি সারি
সাঙ্গ হল দড়ির খেলা বানররা সব হাসে
কান হারিয়ে গাধা শুধুই চোখের জলে ভাসে।