রুবেল সাইদুল আলমের ‘ভবঘুরে অভিলাষ’ কাব্যের পাঠ-উন্মোচন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মার্চ ১২, ২০২৪

কবি, লোকশিল্পী ও বাউল গবেষক রুবেল সাইদুল আলমের ‘ভবঘুরে অভিলাষ’ কবিতাগ্রন্থের পাঠ-উন্মোচিত হলো। শনিবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের বাতিঘরে পাঠ-উম্মোচন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, কবি শামীম রেজা, কবি ও প্রাবন্ধিক কাজী শাহজাহান, ঢাকা বিজনেস সম্পাদক ও ভ্রমণগদ্য লেখক উদয় হাকিম।

অনুষ্ঠানে কবিতাগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি করেন তামান্না তিথি ও হাসান মেহেদী। অনুষ্ঠান আয়োজন করেন স্বদেশ শৈলী প্রকাশনীর প্রকাশক ও অনুবাদক অনন্ত উজ্জ্বল।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, কবিতাগ্রন্থটি মূলত প্রেম-বিরহের অনবদ্য কথায় গাঁথা। কিন্তু এর মাঝে আছে প্রকৃতির কথা। প্রেম-ভাব-বিরহের কথা আছে। আছে যাপিত জীবনের দ্যোতনা-ব্যঞ্জনা, টানাপড়েন। আছে দ্রোহ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ। আছে সমাজের বিভিন্ন সংকট ও অসঙ্গতির কথা। আছে নির্জনতার কথা। পরমের কাছে তার জীবের সমর্পিত আকুতি ও হিসাব আছে।

কবি নির্মলেন্দু গুণ গল্পে গল্পে উপস্থিত সবাইকে মাত করে রাখেন প্রায় দু’ঘণ্টা। তিনি তার জীবনের নানা অধ্যায়ের গল্প করেন। কবি বলেন, “মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা চুরি করে কবি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ধরা পড়ে যাই। কবিতা আর ছাপা হলো না। কবি হতে পারলাম না সে যাত্রায়।”

গল্পে-গল্পে তিনি আরও বলেন, “তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। খুব ইচ্ছে, কবিতা কোথাও ছাপা হবে। কিন্তু পত্রিকার সম্পাদক বরাবর কবিতা পাঠিয়ে অপেক্ষা করি, কবিতা আর ছাপা হয় না। তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখি। তখন একদিন মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি কবিতা চোখে পড়লো। ভাবলাম, এই কবি মনে হয় খুব পরিচিত কেউ নন। এই ভেবে কবিতাটি নিজের নামে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিলাম।”

নির্মলেন্দু গুণ বলেন, “আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকলাম। ভাবলাম, এবার কবিতা ছাপা হবেই। কিছুদিন পর পত্রিকার সম্পাদকের কাছ থেকে একটি পোস্ট কার্ড পেলাম। যেখানে অন্যের কবিতা নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার কারণে আমাকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত পদক’ পাই। সেই পদক নিতে গিয়ে মঞ্চে এ কথা ফাঁস করে দিলাম।”

কবি শামীম রেজা বলেন, “ভবঘুরে অভিলাষ কবিতাগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি যখন আমি হাতে পাই, তখনই সবগুলো কবিতা পড়েছি। রুবেলকে আমি ছাত্রজীবন থেকেই খুব কাছ থেকে জানি। আমরা পরস্পর খুব ভালো বন্ধু। সে খুব ভালো গান করে। বাউল ও সুফিবাদ তার অন্যতম পছন্দের বিষয়। তার কবিতায় বাংলা সাহিত্যের অনেক কবির প্রভাব থাকলেও আমি গভীর ভাবে লক্ষ্য করেছি, এর মধ্যে একটা মরমি ভাব আছে। বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য কবিকে ধারণ করেও রুবেল তার মতো একটা নিজস্ব ঘরানা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।”

কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, “কবিতা কাউকে দিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে লেখানো যায় না। এটা সহজাত। যিনি লেখেন তিনি নিজেই বোঝেন কোনটা কোন ধরনের কবিতা। কোনটা কবিতা, কোনটা কবিতা নয়।”