রাহমান চৌধুরীর নাটক ‘দূরের মানুষ কাছের মানুষ’

পর্ব ১

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩

চরিত্র: যুবতী, ভাস্কর, তরুণী ও অধীশ্বর।

 

প্রথম অংশ
(দু’তিনটি চেয়ার রাখা একটি কক্ষ। দুজন তরুণ তরুণী কালো কাপড় দিয়ে চোখ বন্ধ করা। দুজন মানুষ তাদের দুজনকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে মাত্র। সেখানে একজন সুন্দরী যুবতী দাঁড়িয়ে আছে।)

 

যুবতী: দুজনের চোখের বাঁধন খুলে দাও।
(দুজন মানুষ তাই করে। তরুণ তরুণীর চোখের বাঁধন খুলে নেয়।)
ভাস্কর: আমাদের এখানে এভাবে ধরে এনেছেন কেন?
যুবতী: কয়েক ঘন্টা পরেই তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলেই আমার বিশ্বাস। যারা তোমাদের ধরে এনেছে তারা কথাবার্তায় বা কোনো রকমভাবে তোমাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি তো? (দুজনে চুপ করে থাকে।) কথাটা জানা খুব জরুরি আমাদের। সামান্য খারাপ আচরণ কি করেছে কেউ তোমাদের সঙ্গে? যদি সামান্য দুর্ব্যবহার করে থাকে তোমাদের সঙ্গে, দুজনের মৃত্যুদণ্ড হবে।

 

তরুণী: না, দুজনের কেউ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।
ভাস্কর: কিন্তু আমাদের ধরা আনা হয়েছে কেন?
যুবতী: যথাসময়ে জানতে পারবে। (কর্মী দুজনকে) তোমরা এবার যেতে পারো। (দুজন চলে যায়। যুবতী তরুণ তরুণীকে প্রশ্ন করে।) সামান্য সময়ের মধ্যেই তোমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। কী ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করো তোমরা? সকালে নাস্তা হিসেবে কী খাবে?

 

ভাস্কর: গুণ্ডা পাঠিয়ে জোর করে ধরে এনে এখন আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুবতী: মনে রাখবে তোমার এখানকার বিশেষ সম্মানিত অতিথি?
ভাস্কর: আমরা কি জানতে পারি, আমরা এখন কোথায় আছি?
যুবতী: না। তবে জায়গাটা মন্দ নয়। বহু মানুষ এখানে আসতে চাইলেও আসতে পারে না। ভিন্ন দিকে বহু মানুষকে না চাইলেও এখানে আসতে হয়। সবটাই প্রয়োজনে।

 

ভাস্কর: কীসের প্রয়োজন?
যুবতী: বললাম তো, যথাসময়ে জানতে পারবে।
তরুণী : আমরা এখানে বন্দি অবস্থায় আছি তাই তো?
যুবতী: খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে তুমি। হ্যাঁ, অনেকটা তাই। আসলে তোমরা এখন কোথায় আছো আমরা ছাড়া এ বিশ্বের কেউ আর জানে না। যদি আমরা খবর না দেই কেউ জানতে পারবে না। পালাতে চাইলেও এখান থেকে পালাবার কোনো উপায় নেই।
ভাস্কর: ভয় দেখাচ্ছেন?
যুবতী: না ভয় পাবার কিছু নেই তোমাদের। তোমাদের সঙ্গে একজন দেখা করতে চান, কথা বলতে চান। কথাবার্তার পর তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলেই আমরা জানতে পেরেছি। তোমাদের এখান থেকে না যেতে দেয়া হলে পালিয়ে যাবার সুযোগ নেই।
তরুণী: বুঝতে পেরেছি।

 

যুবতী: বলো এবার কী নাস্তা খাবে? অনেকটা পথ ভ্রমণ করেছো। নাস্তা খাবার পর তোমাদের সঙ্গে অধীশ্বর সাক্ষাৎ করবেন। নাস্তা খেয়ে প্রস্তুতি নাও।
ভাস্কর: বন্দিদের প্রতি এখানে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করা হয় দেখছি।
যুবতী: বন্দি ভাবছ কেন? সাক্ষাৎকারের পরে দেখা গেল তেমারা আমাদের লোক হয়ে গেছ।
ভাস্কর: মানে?
যুবতী: চলো নাস্তা খাবে।
ভাস্কর: না, তার আগে বলুন, আপনাদের লোক হয়ে যাব মানে?
যুবতী: থাক এসব কথা।
ভাস্কর: সত্যি করে বলুন, আমরা কোথায় আছি?
তরুণী : ভাস্কর, চলো. আগে আমরা নাস্তা করি।

 

ভাস্কর: কিন্তু আমাদের নাস্তা খাবার আগে জানা দরকার...
তরুণী: ভাস্কর, আমার মনে হয় এখনি উত্তেজনা প্রকাশ করাটা ঠিক হবে না। সবার আগে আমাদের বর্তমান অবস্থানটা বোঝা দরকার।
যুবতী: বুদ্ধিমতী মেয়ে।
তরুণী: শুনুন, ওর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই জানে ও কতটা মেধাবী আর বুদ্ধিমতি। বুদ্ধিমত্তার জন্য ওকে অনেক পদক আর পুরষ্কার দেওয়া হয়েছিল, যার কোনোটাই সে গ্রহণ করেনি।
তরুণী: ভাস্কর, আমার ধারণা ওরা তোমার আমার সব খবর রাখে। ভাস্কর, কথাটা তো সত্যি আমার মেধা বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে, তা উজ্জ্বল হয়েছে তোমার সংস্পর্শে এসে।
যুবতী: বুঝতে পারছি, তোমরা দুজন ভালো বন্ধু।
ভাস্কর: হ্যাঁ, আমরা দুজন সহপাঠী।
যুবতী: নাস্তা খেয়ে তোমরা দুজন বিশ্রাম নাও। খানিকটা ঘুমিয়েও নিতে পারবে। তোমাদের জন্য পাশাপাশি দুটা আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা আছে। কক্ষের বাইরে একজন চিকিৎসক থাকবেন। শরীর খারাপ লাগলে বা যে কোনো প্রয়োজনে সেই চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সেবা পাবে।
ভাস্কর: মনে হচ্ছে পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যবস্থা।
যুবতী: সুদর্শন তরুণ, তারও ওপরে এখানকার ব্যবস্থাপনা। পাঁচ তারকায় হাতের কাছে চিকিৎসক এত সহজলভ্য নয়।
ভাস্কর: বলুন যে, পাঁচ তারকাযুক্ত বিলাসবহুল কারাগার এটা। পৃথিবীর ইতিহাসে মনে হচ্ছে এটাই একমাত্র পাঁচ তারকা কারাগার, এখন আমরা যেখানে বন্দি।
যুবতী: পৃথিবীতে সব মানুষই কোনো না কোনোভাবে বন্দি। নিজের শৃঙ্খলটা তারা সবসময় দেখতে পায় না। মুক্ত মানুষরাও সকলে বিশ্ব-ব্যবস্থাপনার চাপে বন্দি। তোমরা এখন বন্দি হলেও একজন বিশিষ্ট মানুষের বিশেষ সম্মানিত অতিথি। চলবে