রানাঘাট
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
নদীর নাম, চূর্ণী। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে। ৭১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ৭৪,৯৩,৪৭৪ জন বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছিল। রানাঘাটেও আশ্রয় নিয়েছিল অনেক মানুষ। এ অঞ্চলে ছিল দুটি শরণার্থী শিবির। সে ইতিহাস আজও এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে রূপকথার মতো আলোচিত হয়।
ছোট শহর। কলকাতার শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে মাত্র দু’ঘণ্টার রাস্তা। অধিকাংশই বাঙালি এখানে। আধুনিক শহরের প্রায় সকল সুযোগ সুবিধা আছে। ভাত-মাছ খাওয়া বাঙালি। পান্তুয়া নামের মিষ্টির জন্য রানাঘাট বিখ্যাত। এছাড়া রানাঘাট রেলওয়ে জংশন থাকার কারণে নানা দিকের মানুষ এখানে আসে। বাংলাদেশের দর্শনা বর্ডার খুবই কাছে এখান থেকে। সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যাই বেশি।
স্থানীয় লোক-ইতিহাস মতে, বহুকাল আগে ‘রানা ডাকাত’ এ অঞ্চলে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করে। তারই নামানুসারে অঞ্চলের নাম হয় রানাঘাট। তবে এর কোনো কাগুজে প্রমাণ পেলাম না। রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পণ্ডিত কালীময় ঘটক, নদিয়া কাহিনির রচিয়তা রায়বাহাদুর কুমুদনাথ মল্লিক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-উপাচার্য ভবতোষ চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষের জন্ম এখানে। এশিয়ার প্রথম রবীন্দ্র ভবনও এখানে তৈরি হয়েছিল। যদিও ব্যবহারের অনুপযুক্ত হওয়ায় ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়।
স্বদেশি আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশদের সময় রানাঘাটে সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে শুরু করে। কবি গিরিজানাথ মুখোপাধ্যায় হাত ধরে ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘বার্তাবহ’। রানাঘাট ঘরানা নামের সঙ্গীতের নিজস্ব যে চর্চা তার সব থেকে খ্যাতিমান শিল্পী শিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, যিনি সকলের কাছে ‘গুলিনদা’ নামে পরিচিত।
জানা যায়, কবি নবীনচন্দ্র সেন মহকুমা শাসক থাকাকালীন তার আহ্বানে রবীন্দ্রনাথ রানাঘাটে আসেন। বিশ্বকবির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এশিয়ার প্রথম রবীন্দ্রভবন গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে হওয়ায় দর্শনার শহরের মতো প্রায় একই ধরনের পরিবেশ এখানে। মানুষের রুচিও প্রায় একই, শুধু মাঝখানের কাঁটাতার আলাদা করে রেখেছে এ দুই অঞ্চলকে।