রাজীব জবরজং
রাজীব জবরজংয়ের রম্যগদ্য ‘যাহা ঘটিবার নহে, তাহা ঘটিয়া গেল’
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
যাহা ঘটিবার নহে, তাহা ঘটিয়া গেলে সংবাদ হইয়া সংবাদপত্রে ছাপা হয়। যেমন, টাকাভর্তি বস্তা পাইয়া ফিরাইয়া দিলেন এস.আই মখলেস। অথচ এস.আই মখলেসের দায়িত্বই ছিলে কুড়াইয়া পাওয়া টাকার বস্তা ফিরাইয়া দেয়া। কিন্তু তাহা এই বঙ্গদেশে ঘটিবার নহে। তাহা হইলে কি ঘটিবার কথা?
এই বঙ্গদেশে যাহাই কুড়াইয়া পাইবে তাহাই নিজের বলিয়া ব্যক্তিগত সিন্দুকে পুরিয়া ফেলিবে। যেমন আপনার চিন্তা, যদিবা তাহা কোনোভাবে কেহ কুড়াইয়া পাইতে সক্ষম হয় তবে তাহা অবশ্যই তাহার নিজস্ব বলিয়া সিন্দুকে পুরিয়া কিংবা না পুরিয়া জনসমক্ষে নিজের বলিয়া চালাইয়া দেওয়া।
চিন্তা কুড়াইয়া পাইলে তাহা ফিরাইয়া দেওয়ার উপায় কি? হইতে পারে তাহা না জানার দরুণ কেহ কেহ অপরের কুড়াইয়া পাওয়া চিন্তাকে ফিরাইয়া দিতে ব্যর্থ হইয়া নিজের বলিয়া চালাইয়া দিতে বাধ্য হয়। তাহা হইলে নিশ্চয়ই ইহা স্বাভাবিক।
মনে করিয়া নেন, এই জগৎ ঘুরিতেছে বলিয়া আমিও ঘুরিতেছি। অথচ আমাদিগের মাথা ঘুরিতেছে না। এই যে আমাদিগের মাথা ঘুরিতেছে না কিংবা বমি বমি অনুভূত হইতেছে না তাহার জন্য কি জগতের ঘূর্ণণকার্য থামিয়া থাকিবে? থাকিবে না ।
কুতুবির বাপের নামাযের অপেক্ষায় দয়াল খোদা বাঁকা হইয়া থাকেন না। তাহা হইলে কুতুবির বাপের কি কোনো গুরুত্ব নাই দয়ালের কাছে? থাকিতেও পারে আবার নাও থাকিতে পারে। কিন্তু, কুতুবির বাপ আমাদিগের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হইবে কি হইবে না, তাহা কিসের বিবেচনায় ঠিক হইবে?
মনে করিয়া নেন, কুতুবির বাপ একদা কহিয়াছিল কুতুব হইয়া না উঠিলে নিজস্ব সিন্দুকের তালা থাকে না। ধরিয়া লই, এই কথা কেহ কেহ গুরুত্বের সঙ্গে গিলিয়া নিয়াছে। যদি আমাদিগের কাছেও কুতুবির বাপের এহেন উক্তি মনে ধরিয়া থাকে তবে তাহা পালনের উপায় কি?
যাহা ঘটিবার তাহা ঘটাইয়া দেয়া নাকি সংবাদ হইয়া ওঠা? কিন্তু যদি ঘটিবার ঘটনাখানা ঘটাইতে হয় তাহা হইলে কি ঘটিবার কথা তাহা জানিয়া লইয়া তারপরই তো ঘটাইতে হইবে। তাহা হইলে কি আবারেও কুতুবির বাপের নিকট যাইতে হইবে?
এতেক্ষণে কুতুবির বাপ দয়ালের কাছে না হইলেও দয়ালের গোটা কয়েক বান্দার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছেন। কুতুবির বাপের নিকট যাইবার আগেই কেহ কেহ কুতুব বনিয়া যায় আবার কেহ কেহ পুনর্বার কুতুবির বাপের নিকট পৌছাইতে ব্যর্থ হয়। তাহাদের ব্যর্থতায় নিশ্চয়ই কুতুবির বাপও বাঁকা হইয়া থাকিবেন না।
কিন্তু, আমাদিগের কি ঘটাইতে হইবে কি হইবে না কিংবা কুতুবির বাপের মতো কাহার গুরুত্ব বৃদ্ধি করিবো বা কাহাকে অগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করিবো, তাহা ভাবিয়া লইবার সময় ঘনাইয়া আসিয়াছে।
কেহ কেহ কুতুব বনিবার তরে পুস্তক হাতে তুলিয়া লইবেন, কেহ সিনেমা, কেহ সংবাদপত্রে ছাপা আলোচনা আবার কেহ কেহ গুরু ধরিয়া চিন্তামনির মনি ঘষিবেন। এতে ঘষাঘষি করিয়া শেষমেশ কেহ কেহ কুতুব হইবেন কেহ আবার নিজেই কুতুবির বাপ বনিবেন। কিন্তু কুতুবদিগের কর্মের ফলে ফুলের সুবাস ছাড়াইবে নাকি এস.আই মখলেসের মতো বিরল সংবাদের সুবাস ছড়াইবে, তাহা না জানিলেও এইটুকু জানিয়া ফেলা কঠিনতর কিছু নহে যে, কেহ কেহ সিন্দুকের তালা লাগাইবার উপায় এবং অপর কাহারো সিন্ধুকের তালা খুলিবার তরে নিজেকে বিলাইয়া দিবেন।