রাজীব জবরজংয়ের পাঁচটি কবিতা
প্রকাশিত : মার্চ ২৪, ২০২৩
রৌশনবাণীতে দাঙ্গা চলতেছে
রৌশনবাণীতে দাঙ্গা চলতেছে । দৌড়াইতেছে মোকাররম । মোকাররমের পেটের কোনায় চিড়িক মারে । চিড়িকের একটা হলুদের ক্ষেত আছে। হলুদের আবার পাতার রং সবুজ।
রৌশনবাণীতে মান্না দৌড়াইতেছে। মোকাররম একটা লুচনি সুচরিতার হাতে দিয়া কইল, ‘গরম’। গরমের শরম একটু কম।
গরম টাউন হলের মোড়ে মোড়ে বগল কাটে।
রৌশনবাণীতে মান্না দৌড়াইতেই থাকে।
সুচরিতা লুচনি হাতে মোকাররমের চিড়িকে হলুদের ক্ষেতে সবুজ দেখে।
রৌশনবাণীতে দাঙ্গা চলতেছে। দৌড়াইতেছে মোকাররম।
ঈশ্বর মূলত সর্বভূক
ঈশ্বর এক নিরামিষাশী। এমন জানা শোনায় কেইনের লাঙল চষে গেছে যতদুর চলে গেছে চোখ। পৃথিবীর বুক ভরে ফলিয়েছে কত কত গম, যব, ফুল আর ফল।
যদিও হ্যাবলের ভেড়াই ঈশ্বরের আয়েশী ঢেকুর। হ্যাবলের সুস্বাদু ভেড়ার লোমেই ঈশ্বরের ওম।
ঈশ্বর কি তবে মাংসাশী? এমনই ভ্রান্তির মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে হ্যাবলের শেষকৃত্যে জেনে গেছে কেইন,
ভ্রান্তির কারিগর ঈশ্বর মূলত সর্বভূক।
মানুষের বৃষ্টি
ঈশ্বরের দুই হাতের কুনুইতে ব্যথা। এক হাতকে আরেক হাতের ব্যথা উপশমের দায়িত্ব দিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে বলে,
ঘটনা হইলো মানুষের বেটি আর মানুষ পয়দা করবার পারে না। মানুষ পয়দা হয় আকাশে মেঘ কইরা বৃষ্টি হইলে। বৃষ্টিতে কৈ মাছের মতোন ধুপধাপ মানুষের বাচ্চা পড়ে।
বছরে খুব একটা এমন বৃষ্টি হয় না। যে দেশে কয় ঋতু, সে দেশে সে কয়বার মানুষের বাচ্চার বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি শেষে মানুষের ব্যাটা বেটিরা আসে সন্তান খুঁজতে। যে যার মতো করে দেইখা শুইনা মানুষের বাচ্চা নিয়া যায় কোলে কইরা। কেউ সাদা নেয়, কেউ কালা, কেউ কেউ যা পায় তাই-ই।
ধরো বৃষ্টিতে তুমি ঝরলা, অথচ তোমারে কেউ নিলো না!
কালিজিরা ফুলে আমাদের সুখ হয়
আনসার আলীর ভূতের শহরে ঘুম হইলো আমাদের ফেইলা আসা প্রেমিকাদের মতোন। আমাদের ইচ্ছে মতোন সে আসবো না, আইলেও থাকবো না, তার কখনো আইতে মন চাইলে আইবো, আবার থাকতে না চাইলে ক্ষণিকেই চইলা যাইবো। গতরাইতে অনেক মিনতির পর আইছিল বটে, আইতে না আইতেই কত কি!
তার যে মেলা তাড়া। আমি কত কইলাম রাইতটা থাইকা যাও, ভোর হোক। কিন্তু তার তো মেলা তাড়া, কী আর করা!
আইসাই সে আমারে নিয়া গেল বন্ধুর কাছে। রাইতের তখন দুইটা আড়াইটা। বন্ধু কইলো, চলো বাইরে যাই, বাইরে আরেক বন্ধু আছে। বন্ধুর বাড়ি থেইকা বাইর হইয়া দেখলাম আশপাশে কোনো রাস্তা নাই। চাইরপাশে সাদাসাদা ফুলঅলা কালিজিরা ক্ষেত। ক্ষেতের আইলে আইলে হাঁটতে হাঁটতে আমরা কই জানি গেলামগা। আশপাশে কোনো ঘর নাই, আমরা আর কালিজিরা ফুল ছাড়া আর কোনো তৃণ কিংবা প্রাণ নাই। আর আছে একটা কাকতাড়ুয়া । কাকতাড়ুয়াটা আমাদের বন্ধু । সাদা সাদা কালিজিরা ফুলে আমাদের সুখ হয়। আমাদের বন্ধু আমাদের প্রিয়তম কালিজিরা ফুলেদের মাঝখানে দাঁড়াইয়া থাইকা কাক তাড়ায়, ভীতুদের ডর দেখায় আর মাঝে মইধ্যে মাইজ রাইতে আমাদের দেখা পাইলে অধিকার নিয়া কয়, এতক্ষণ কি করছো তোমরা? আমার বন্ধু তারে জড়াইয়া ধরে বুকে।
আমরা কালিজিরা ফুলেদের কাকতাড়ুয়ার সাথে রেখে চলে আসি।
করাত কলের চুমু
তখন আমাদের মুখ ছিল না, তবুও আমরা চুমু খেতে পারতাম।
তখন আমাদের ঠোট ছিল না, তবুও একবার এক করাত কলকে প্রেমিকা ভেবে চুমু খেয়ে বসলাম। তার আগপর্যন্ত আমাদের মুখে হাঁ ছিল না।
তখন আমাদের জিভ ছিল না, করাত কলের চোখ ছিল না, আঁজলা ভরা জল ছিল তার।
তখন আমাদের হাত ছিল না, ছুঁয়ে দেখার পথ ছিল না...