রাজীব আশরাফ

রাজীব আশরাফ

রাজীব আশরাফের ৯ কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ২০, ২০২১

সময় পরিত্যক্ত

প্রেমের সে কি আগ্রাসী তাড়না
তুমি তাকে ছাড়া আমিও তোমাকে
বিহীন বাঁচবো না, দ্বৈরথে, দুর্বিপাকে
মানব সকলের আয়ত্বে প্রতারণা

আমরা নিত্য প্রেমে মুখরিত, অবারিত কবুতর
একে অপরের বুকে বাঁধিয়াছি চির জন্মের ঘর
কবুতরও হঠাৎ ভুলে গৃহে ফিরবার পথ
সত্যি, দেবতা, মাটি, দিব্যি মায়ের শপথ

তবু প্রতি সন্ধ্যায় শেষ হলে মাগরিব
খাঁচার দুয়ার কি চিন্তিত উদগ্রীব
সুস্বস্তির বাতাস তোলে, ডানার স্বরে
তবু কিছু কবুতর, রহস্যর, ফেরে না ঘরে।

আমরা তো সত্যকে সাজিয়ে মুখের সম্মুখে
নিরাপত্তায় বড় করি মিথ্যা কিংবা অব্যক্ত
মানুষ সময়ে পরিণত হয় কি সহজে বন্দুকে
সত্য মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, সময় পরিত্যক্ত

দাও তুমি সাড়া

যতবার প্রকৃতির ভাষারূপ
পাখিরা করে গেছে তর্জমা
অনুষঙ্গ যোগে সেই অনুষ্টুপ
বলো কার বুকে বাজে প্রিয়তমা?

এই যে পৃথিবী আঁকে ছবি দূর
দুর্দান্ত সব স্ট্রোকে সাথে বর্ণিল
আর্দ্র ডানা পেল এমন অসুর
যার হাতে বসে স্ত্রৈণ আবাবিল

আদতে পৃথিবী তো নির্বাক, মূক
যতই করুক ধ্বনি পশু, পাখি,
মানুষসহ সকল আগন্তুক
কেউ কারো ভাষা না বোঝা একাকী

বাকি থাকে শুধু আয়নার বিপরীত
আঁধারে ভোলাবে স্বীয় অবয়ব
আর স্মৃতিকাতরতা সুকিঞ্চিত
শবাধারে খুব চিন্তিত শৈশব

একাকী প্রাণ প্রাণ হয়তো নয়
মাঠে এক বুক প্রাণের মহড়া
প্রাণের জন্য ভীষণ অসময়
কালান্তরে নিয়তিই হাতকড়া

হাত ভুলে যাই, চোখ বুজে রই
বুকের ওপর ইটের ওপর ইট
সেনেটোরিয়ামে শিল্পের হৈ চৈ
ফিতা কেটে সুসূচনা কমপ্লিট

আরো আরো দূর্বার পাটিগণিতে
ঘাসে হাসে হাইব্রিড নেশাতুর
সুদৃশ্য পাশ কাটিয়ে,‌ শূন্য খনিতে
কল্প ঘুড়ি ওড়ে শনিসম দূর

হলো তো অনেক মহাকাশ গ্রহ
মায়াছায়াপথ, চন্দ্র, শুকতারা
সবকিছু ফেলে আমার আগ্রহ
তোমার যোনিতে, দাও তুমি সাড়া

সুনিদ্রা শায়িত

আজকাল এই আমার কাজকাম শেষে
এই যে এই বসে থাকা, কাষ্ঠ চেয়ারে মন্থর!
শ্যাওলা বাড়ছে দেখি প্রাচীর ঘেঁষে ঘেঁষে
ওদিকে সড়কে জাদুকর ছোড়ে ছু মন্তর

মন্ত্রে গলে না বরফ, বিষাদের, বেদনারও
কষ্টের লোহিত স্বীয়রূপ চুপচাপ হয় গাঢ়
আমি তো আয়না নই, হে আয়নার কারিগর
আমার আয়নাও নেই, কালো দেয়ালের ঘর

তাই ফাটল ধরা মেঝেতে বসে কনসান্ট্রেশন
এমবিবার্ট অতল কালোজলে মেভিটেশন
দুঃখ, কালো দেয়ালে ছায়াও পড়ে না স্বীয়
তাই ভাবি, ডানা নেই তবু হে পাললিক মন
হৃদয়ের কাছ থেকে ঠিকঠাক সুবিদায় নিও
শেষে বহুতল ভবনের কার্নিশ থেকে স্খলন

ওই একই কালো পিচের ওপর জাদুকরের
দুঃখ মন্তর ছুঃ ভুল হোক আজ প্রমাণিত
পৃথিবী তো দুটো এপারে ওপারে, নশ্বরের!
স্বীয় দেহ সন্দেহ ভেদে চির সুনিদ্রা শায়িত।

আমি তো একাই

আমি একা আমি একা আমি তো একাই
আকাশে একটা তারা নিজেকে দ্যাখাই
নিজেকে দেখাই আর নিজেকে বোঝাই
একা থাকা ভালো এটা কারো জানা নাই
এটা কারো জানা নাইবা থাকতেও পারে
বাতাসে একটা ঘুঘু ডাকতেও পারে
বা না ডেকে সে চুপচাপ বিদ্যুৎ তারে
মৌনতার অনুবাদ লিখে হাহাকারে
খা খা বুকে বাতাসের মতো অরিগামী
বুঝে নিয়ে সেও করে এই পাগলামি
পাগল না হয়ে আমি পাগলের মতো
নিঃসঙ্গতা তসবিহতে জপি শাশ্বত
শ্বাস ফেলে পাশ ফিরে দীর্ঘ যে শ্বাস
সদাই নিয়ত হয়ে আছে বারো মাস
তার কাছে পেয়েছি তো এই আশ্বাস
শূন্যতা গাছ হয়ে ওঠে চারপাশ
বাগানে একটা গাছ নিজেকে দেখাই
একা আমি আমি একা আমি তো একাই
আকাশে দ্যাখাই সেই এক ধ্রুব তারা
সেই তারা দ্যায় বলে একা একা কারা
একাকিত্বের প্রতি রাখে ইশারা
ঘুঘু ডাকা ভোরে খুব একা থাকা ভালো
না জ্বালিয়ে হ্যারিকেন, মোমের আলো
না জ্বালিয়ে গৃহলোকে বিদ্যুৎ বাতি
আরো বেশি একা হয়ে গিয়ে রাতারাতি
টিলার মতো সেই গাঢ় আঁধারে
নিঃসঙ্গতা নিয়ে বসি নদীর ধারে
একা একা গুনগুন সুর তোলা গানে
এক গাছে এক ফুল এই বাগানে
ফিসফিস বলি নিজে নিজেরই কানে
নিঃসঙ্গতারও আছে সামাজিক মানে
সেই মানে কেউ কেউ মনে রাখে নাই
তারাও কি কখনোই একা থাকে নাই
মনে যারা রেখেছিল দগ্ধ পরাণে
তারা গলা মিলিয়েছিল আমার গানে
যদিও তো সেই গান আমি শুনি নাই
একাধিক দুঃখ তো আমি গুণি নাই
একটা দুঃখ ও একটা বিষাদ
একটা জীবন এক হতাশার ফাঁদ
সেই ফাঁদে আমি একা আমি তো একাই
আকাশে একটা তারা নিজেকে দেখাই

যা চাইছিলাম আর যা পাইছিলাম তার মধ্যে তফাৎ

এই জীবনে আমি চাইছিলাম খুব বেশি কি আর

ধরো একটা বিপরীত দেহের উষ্ণ হৃদয়ে প্রোথিত

একটা ফ্যাকাশে সন্ধ্যা ও কিছু শীতল বিয়ার

আর যদি পড়ে থাকি বস্তুর মতো তথাকথিত

তারপর চাইছিলাম পতিত অপলক তৃষ্ণা থাকুক

তুমি পাশে থাকার পরেও শুধু তোমাকে দ্যাখার

চাইছিলাম সেই অভাববোধ গভীরে ঘুঘু ডাকুক

জানিই তো প্রেম দিনশেষে যারযার মতো একার

যা চাইছিলাম আর যা পাইছিলাম তার মধ্যে তফাৎ

অতটুকুই মানে লাফ দিয়ে পার হওয়া একটা ছোট গর্ত

কিন্তু সে সমস্ত ভাসায় নিয়া গেল একটা প্রমত্তা ভিন্নখাত

যার দুইপারে আমরা দুইজন দাঁড়ায় অনেক কাল নিঃশর্ত

ঘুমপাড়ানি গান

যখনি বুকের ব্যথাটা তীব্র থেকে
তীব্রতর হয়
আমি ব্যথা ভুলে থাকার জন্য
চোখ বন্ধ করে একটা যুৎসই, সবল অন্তমিল খুঁজি ব্যথার পাশে দাঁড় করানোর জন্য।
কী আশ্চর্য দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়
অথচ একটা সবল অন্তমিল খুঁজে পাই না
ফলে অন্তমিলের অভাবে ব্যথাটা একা একাই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়!
আর আমি নিঃশব্দে চিৎকার করে মাকে ডাকি!
যদিও ‘মা’ কোনো অন্তমিলই না
তারপরও ব্যথা আমার কমে যায়,
আমি মৃত্যুর মতো তীব্র এক ঘুমে তলিয়ে যাই,
ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছিল মা আমার বেহেশত থেকেই ঘুমপাড়ানি গান গায়।

‌চিরনিদ্রা

অযথাই অজস্র কিছু ভাবি, অহেতুক!
মেনে তো নিতেই হবে একদিন চিরনিদ্রা!
বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষ কালো কৌতুক,
অথচ ভিন্ন জীবন খোঁজে ইতিহাসবিদরা!

আ কার, ই কার

অনেকের মধ্যে একজন, আজ আমাকে
কহিলো, আমি কেন ইদানীং আর
লিখি না? কবর দিয়েছি কোথায় কবিতাকে?
কোথায় হয়েছে গুম অক্ষর, আ কার, ই কার?

কিন্তু আমিতো লিখি, বা লিখিও না। মাথায়
লিখি! লিখি না এখন আর ল্যাপটপে, খাতায়
মাথায় লেখাকে কি লেখা বলা যায়? তথাপি
আজ এই পোস্টে সাম্প্রতিক হতাশা ছাপি

কই আর যাই বলো? খাতায় না লিখলেও হায়
কবিতারা আজন্ম বেজন্মার মতো, অনাকাঙ্ক্ষিত
অনাহুত তবু মগজ কি সাবলীল অভ্যস্ততায়
কবিতার জন্ম দেয়, ‘জন্ম’ নাকি তারা আজন্ম মৃত

এই সমাধানে মনতো চায় না পৌঁছাতে, তাই আজ রাতে
আবারো বসবো যেন রন্ধ্রে, ভাঁজে, অস্থি, মজ্জার
এই মগজের জমে থাকা পাললিক শব্দকোষ, সংঘাতে
ও সহবাসে আমি হবো বিবস্ত্র, বিস্তীর্ণ সহজাত শয্যার

আহা

আহা! বুকে এই বোধ
জানি যার কেউ নাই,
তবু তার তরে খোদ
সদা আছেন খোদাই!

আর যার আছে খোদা,
বা যে বান্দা খোদার
টাইম নাই সর্বদা
তার কাউকে চোদার