প্রতিদিন তিন-চার কিলো পথ সাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে যেতাম শহরের স্কুলে। প্রতিদিন স্কুলে যেতাম আর এক পাগলীকে দৈনিক দেখতাম রাস্তার পাশে বসে আবোল-তাবাল বকছে। যাই হোক পাত্তা দিলাম না। প্রায়শই এরকম দেখতে লাগলাম। যেখানেই তাকে আমি স্কুলে যেতে দেখতাম সেখানেই সে রাত কাটা`তো। বুঝতে পারলাম না! কোথায় সে দু`বেলার অন্য খায়? আর কোথায় সে বস্ত্র পায়? আমি দেখছি এ-কদিন যাবৎ পাগলী`টা একটি কাপড়-ই পরে আছে। কাপড়ের অধিকাংশ জায়গা ছিদ্র ফুটো হয়ে রয়েছে। ওড়না নেই বলে বুকে ওড়না দিতে পারছেনা। রাস্তার অনেক মানুষ করুনার দৃষ্টিতে তাকালেও মনটা যে তাদের কলুষিত। কত সুন্দর বস্ত্র পড়ে তারা পথ দেয় পাড়ি, শুধু রাস্তায় পড়ে থাকা পাগলীটি করছে রাহাজানি।
কিছুক্ষণ পর চলে এলাম বাসায়। মায়ের যে পুরানো কাপড় ছিল তা থেকে কয়েকটি কাপড় স্কুল বেগে রাখতে গেলাম। এমতাবস্থায় মা দেখে ফেলল!মা জিজ্ঞাসা করার পুর্বেই বললাম, রাস্তায় পড়ে থাকা পাগলীটার করুন কাহিনী, মা বললো আচ্ছা বাবা!নে। আজ স্কুলে যাওয়ার পথে নিজে নিজে বলতে লাগলাম, পাগলীটাকে কাপড়গুলোও দেবো ও আমার টিফিন টুকু দিয়ে আসবো। কিন্তু এ কি কান্ড!পাগলীটি কোথায়? আজ দেখতে পারছি না কেন? আসে পাশের লোকলয়ে খোঁজ করলাম,কিন্তু পেলাম না। কোথায় পাবো? আজ আর স্কুলে গেলাম না,খুঁজতে লাগলাম। একজন লোক বলে উঠলো কাল দেখেছিলাম খুব ছটফট করছিলো পাগলীটি। আর শুধুই পানি খাচ্ছিল। বুঝতে পারলাম কিছু না কিছু তো হয়েছে। যে পাগলীটাকে আমি প্রতিদিন দেখি, আজ তাকে দেখছিনা!কয়েকটি চায়ের দোকানে জিজ্ঞাসা করলাম যে এই পাগলীটি দৈনিক খাবার খেতো কিভাবে? একজন চা-ওয়ালার কাছে শুনলাম, পাগলীটি নাকি সামনের একটি বাসার ফেলিয়ে দেয়া "এটো" খাবার খেতো। গেলাম ছুটে সেখানে , কিন্তু বাসা তো তালা লাগানো। বাসার চারপাশ ঘুরতেই দেখি যেখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলানো হয় পাগলীটা সেখানে পড়ে আছে। মানুষজন ডেকে গেলাম পাগলীটার কাছে, পাগলীটার কোনো সাড়াশব্দ নেই
কি হলো? বুঝতে পারলাম না!
তাড়াতাড়ি সরকারি হাসপাতালে সবাই মিলে পাঠালাম। কিন্তু ডাক্তার জানালো পাগলীটি অনেক্ষন আগেই ছয় দিনের অনাহারে মারা গিয়েছে। নিঃশব্দ হয়ে পড়লাম। আজ পাগলীটার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম পাগলীটা আজই চলে গেলো দুনিয়া ছেড়ে। নিজেকে অনেক বড় দোষী মনে হচ্ছে। যদি আর একদিন আগে খাবার নিয়ে আসতাম তাহলে।পাগলীটা আজ বেঁচে থাকতো।
সমাজে পাগলীর পরিচয় পেয়েছে বলে তাকে আজ অনাহারে জীবন দিতে হলো।কিন্তু আমরা প্রতিটি মানুষ পাগলীটির স্থানে থেক যদি দেখতাম, তাহলে এই রকম হাজারো রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে হতে হতো না পাগল কিংবা পাগলী, অনাহারে ও বস্ত্রহীনতায় মরতে হতো না তাদের।চিকিৎসা পেলে তারাও ফিরে পেতো নতুন এক অধ্যায়। প্রশ্ন করি নিজের তরে? প্রশ্ন করি নিজের তরে?আজ আমার আছে বলে হাত পাতি না ঐ দুয়ারে,যখন হয়ে যাব নিঃস্ব হাত পাতলেও কাজ হবেনা অন্যের দুয়ারে। দেখতে হবে পাগলীটাস র মতো রাস্তার-ই দু`পাশ, অনুতপ্ত হয়ে পাশে দাঁড়াইবো চলো ঐ পথিকের পাশে এই করি অনুতাপ।
লেখক: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ