রহস্যময় সাতটি গুপ্ত সংস্থা

সাইফুল্লাহ আল মানসুর

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৪, ২০২২

পৃথিবীর জনসংখ্যা আজ প্রায় আট বিলিয়ন বা আটশো কোটির কাছাকাছি। এই কয়েকশো কোটি মানুষ নানা মতাদর্শ, নানা ধর্মের ওপর বিশ্বাস রাখে এবং তা মেনে চলে। এই মানুষদের ভিতর এমন লোকও আছে যাদের মতাদর্শ ও বিশ্বাস অত্যন্ত গোপনীয় এবং রহস্যজনক মনে করা হয়। এমন লোকেরা তাদের বিশ্বাস ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গোপন রাখে এবং বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠনের রূপে এরকম কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এরকম গুপ্ত সংগঠনের বিষয়ে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিখ্যাত। যেমন বলা হয়ে থাকে, কিছু গুপ্ত সংস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী যারা পৃথিবীর সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এরকম সাতটি গুপ্ত সংস্থা কোনগুলো? এদের প্রতিষ্ঠা কখন হয়েছিল? এরা কীভাবে কাজ করে? এদের উদ্দেশ্য ও মতাদর্শ কী? পুরো পৃথিবীতে এদের কত সংখ্যক অনুসারী কিংবা সদস্য রয়েছে? আজও কী এসব সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে? চলুন এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাক।

১. ইলুমিনাতি Illuminati: ইলুমিনাতি ল্যাটিন ভাষার শব্দ, যার অর্থ আলোকিত চিন্তা। ইলুমিনাতি ১৫ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই সময়ে এর কোনো সুগঠিত রূপ পাওয়া যায় না। কিছু বর্ণনা অনুযায়ী, ইলুমিনাতির পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা ১৭৭৬ সালে জার্মানির শহর ব্যাভারিয়াতে Bavaria। আইনের অধ্যাপক অ্যাডাম ওয়েশপ্ট Adam Weishaupt তার চার সঙ্গীর সাহায্যে ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠা করেন। পাঁচজন মানুষ দিয়ে শুরু হওয়া এই সংগঠন ১৭৮০ সালের মধ্যে জার্মানির ছয়টি শহরে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর সদস্য সংখ্যা হয় ৬০। এরপর অন্য আরেকটি গুপ্ত সংস্থা ফ্রী ম্যাসনরির Free masonry কিছু সদস্যের অন্তুর্ভুক্তির ফলে এই সংগঠন খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং এর সদস্য সংখ্যা হাজারে উন্নীত হয়। ধনী, বিখ্যাত, জ্ঞানী ও উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিরাই ইলুমিনাতি নামক গুপ্ত সংগঠনে যোগদান করতে পারে। তাই সব সময় এই সংগঠনকে ষড়যন্ত্রী সংগঠন বলা হয়। কারো কারো মতে, এই গুপ্ত সংগঠন পৃথিবী থেকে ধর্মকে শেষ করে সারা পৃথিবীতে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডাম ওয়েশপ্টের মতে, এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো স্বার্থপরতা, উগ্রপন্থা ও ধর্মীর গোঁড়ামি সমাজ থেকে কমিয়ে আনা। এর মাধ্যমে তারা সমাজে লিবারেল ও সেকুলার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে চান।

এই সংগঠন আট বছর প্রকাশ্যে ছিল। ১৭৮৫ সালে ব্যাভেরিয়ার প্রশাসন একটি ফরমানের মাধ্যমে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও এই গুপ্ত সংগঠন নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার হচ্ছিল। ১৭৮৬ সালে পুলিশ কর্তৃক চালানো তল্লাশির পর সাইভার ভন Xaiver Von নামক এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে কিছু গোপন নথিপত্র পাওয়া যায়। যার মধ্যে কয়েকশো সদস্যের নাম, এর প্রতীক, আত্মহত্যা করার পদ্ধতি, বিষ তৈরির পদ্ধতি এবং গর্ভপাতের পক্ষে যুক্তি দেয়া হয়েছিল। ১৭৮৪ সালে এই গুপ্ত সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলেও কেউ কেউ বলে, এ সংস্থা আজও তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং তার শিক্ষা ও বিশ্বাস রহস্যজনকভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে।


২. ফ্রী মেসন Free mason: ফ্রী মেসন বা মেসনরি দুটি আলাদা শব্দের মিলিত রূপ। ফ্রী অর্থ স্বাধীন আর মেসন শব্দের অর্থ রাজমিস্ত্রি। এর উৎপত্তি ১৪ শতাব্দীর ইট তৈরিকারী মিস্ত্রি ও গির্জা নির্মাণকারী মিস্ত্রিদের থেকে। ১৩৯০ সালের একটি কবিতাতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ফ্রী মেসন ১৭১৭ সালে ব্রিটেনে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েক বছরের ভিতর এই সংগঠন খুব বিখ্যাত হয়ে যায়৷ ১৭৫০ সাল নাগাদ শুধু ব্রিটেন নয় আমেরিকাসহ আরও অনেক দেশে এই সংগঠন ছড়িয়ে পড়ে। এই সংগঠনের জনপ্রিয়তা পরবর্তী ২০০ বছরে প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এর জনপ্রিয়তার আন্দাজ এভাবে করা যায় যে, ১৯৬০ সাল নাগাদ এর সদস্য সংখ্যা ছিলো ৫০ লাখ। এই সংগঠন তার গোপন কার্যক্রমের কারণে সব সময় ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কেন্দ্র বিন্দু ছিল। আজও এই সংগঠনের বৈঠক অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে করা হয়। বৈঠকগুলোতে কী সিদ্ধান্ত হয় তা কেউ জানে না। এই সংগঠন আগে অনেক দেশে ছড়িয়ে থাকলেও আজ এটি শুধু ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ। এই সংগঠনের একটি অফিস করাচিতেও ছিল। ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ফ্রী মেসনের করাচি অফিস ১৯৮৩ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং পাকিস্তানে এই সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।

ফ্রী মেসন ইলুমিনাতির মতো ধর্মহীন কোনো সংগঠন নয়। ফ্রী মেসনের সদস্য হওয়ার জন্য মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। তাই যে কোনো ধর্মের অনুসারী এই সংগঠনের অংশ হতে পারে। অনেক মুসলিমও এই সংগঠনের অংশ ছিল। অনেকের মতে, কবি মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। নাস্তিকরা এই সংগঠনের সদস্য হতে পারে না। এই সংগঠনের কার্যক্রম গোপনীয় হওয়ার কারণে এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ফ্রী মেসনকে নিষিদ্ধ করেছে। একটি হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ফ্রী মেসনের সদস্য সংখ্যা ২০ লাখ থেকে ৬০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

৩. স্কাল অ্যান্ড বোনস Skull and Bones: স্কাল অ্যান্ড বোনসকে একটি গোপন রাজনৈতিক সংগঠন মনে করা হয়। আমেরিকার তিনজন প্রেসিডেন্ট এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। ১৮৩২ সালে আমেরিকার রাজ্য কানেটিকাটের Connecticut ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে Yale University স্কাল অ্যান্ড বোনস সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠন আমেরিকান ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক উইলিয়াম হান্টিংটন রুসেল William Huntington Russell এবং তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের যুদ্ধমন্ত্রী বা সেক্রেটারি অফ ওয়ার আলফোনসো টাফট Alphonso Taft মিলে প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুজন ছাড়াও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১৩ জন স্নাতকও এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল। প্রথমে এটি একটি সাধারণ সংগঠন ছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর পর্যন্ত এই সংগঠনের কোনো নাম ছিলো না এবং তেমন কেউ এই সংগঠনকে চিনতো না। যখন এই সংগঠনের কয়েকজন সদস্য রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পৌঁছে যায় তখন থেকে এই সংগঠনটি সম্পূর্ণ গোপন একটি রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়। তিন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এই সংগঠনোর সদস্য ছিলেন। ক. জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বা জর্জ বুশ সিনিয়র George H. W. Bush খ. জর্জ ডব্লিউ বুশ বা জর্জ বুশ জুনিয়র George W. Bush ও গ. উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট। এছাড়া আমেরিকান কংগ্রেসের অনেক সদস্যও এই সংগঠনের সদস্য ছিল। এই সংগঠনের ব্যাপারে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে।

কেউ কেউ বলে, এই সংগঠন সিআইএকেও নিয়ন্ত্রণ করে। সারা পৃথিবীতে মাদক চোরাচালানের পিছনে এই সংগঠনের হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রথমে স্কাল অ্যান্ড বোনসের সদস্য শুধু পুরুষরা হতে পারতো। ১৯৯২ সাল থেকে অনেক নারীও এর সদস্য হয়েছে। স্কাল অ্যান্ড বোনস প্রতি বছর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন স্নাতককে এর সদস্য বানায়। প্রতি বছর বসন্ত কালের নির্দিষ্ট একটি দিনে স্কাল অ্যান্ড বোনসের গোপন বৈঠক একটি হলে অনুষ্ঠিত হয়। যাকে ট্যাপ ডে Tap Day বলা হয়।

৪. বোহেমিয়ান ক্লাব Bohemian Club: বোহেমিয়ান ক্লাব সান ফ্রান্সিসকোর একটি বিখ্যাত গুপ্ত সংস্থা। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, বিভিন্ন বিষয়ের শিল্পীদের একত্রিত করা। কিন্তু এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠার কিছু সময় পর অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং সেনাবাহিনীর কর্মকার্তাদের এই সংগঠনে যোগদান করা ফলে এটি একটি গুপ্ত সংগঠনে পরিণত করে। ১৮৭২ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো শহরে বোহেমিয়ান ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে এটি কয়েকজন যুবকদের একটি দল ছিল। যারা প্রতিদিন এক জায়গায় একত্রিত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতো। এই দলে অনেক লোক যোগদান করতে থাকলে এটি একটি সংগঠনে পরিণত হয় এবং এর সদস্য সংখ্যা কয়েকশো হয়ে যায়। কিছুটা বিখ্যাত হওয়ার পর এই সংগঠনের নাম বোহেমিয়ান রাখা হয়। প্রাথমিকভাবে এই সংগঠন অভিনেতা, নাট্যকার ও গায়কসহ বিভিন্ন বিষয়ের শিল্পীদের মিলনস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। খুব অল্প সময় পরই সারা পৃথিবী থেকে বিখ্যাত আইন প্রণেতা, সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট লোকেরা এই সংগঠনে যোগ দেয়। এর ফলে এই সংগঠনটি একটি গুপ্ত সংস্থায় পরিণত হয়।

আজ এই সংস্থার কাছে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩০০০ একরের কিছু বেশি জমি রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর এই সংস্থার সদস্যরা মিড সামার ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া এই সংস্থার সদস্যরা কিছু গোপন কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকে। কেউ কেউ বলে, ক্যালিফোর্নিয়ায় এরা হাজার বছরের পুরানো লাল রঙের গাছের মাঝখানে শয়তানের উপসনা করে থাকে। কেউ কেউ বলে, এই সংগঠনের সদস্যরা তাদের জমিতে কাফন পরিধান করে ৪০ ফুট লম্বা গাছের কাছে থাকা পেঁচার মূর্তির সামনে মানুষকে জবাই করে থাকে।

৫. নাইটস টেম্পলারস Kingts Templars: নাইট টেম্পলারস ১১ ও ১২ শতাব্দীর একটি খ্রিস্টান সামরিক সংগঠন ছিল। যা ক্রুসেডের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, জেরুজালেমে তীর্থ করতে আসা খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা দেয়া। ১১১৮ সালে এক ফরাসি সেনাপতি হিগিউস দে পাইনিস Hugues De Payens আট সদস্যের একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম দেয়া হয় পুর ফেলো স্যালিডারস অফ ক্রাইস্ট এন্ড দ্যা টেম্পল অফ সেলোমন Poor Fellow Soliders of Christ and the Temple of Solomon। পরবর্তীতে এরাই নাইটস টেম্পলরাস নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। খুব দ্রুতই এই সংগঠন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এদের কাছে অনেক সম্পদ ও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। এদের বাড়ন্ত শক্তি দেখে তৎকালীন পোপ এদেরকে খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১১৩৯ সালে পোপ দ্বিতীয় ইনোসেন্ট Innocent II একটি ফরমান জারি করেন। যার ফলে এদের ওপর কোনো খ্রিস্টান রাজ্যের আইন কার্যকর হতো না। এর ফলে এরা বিনা বাঁধায় যে কোনো খ্রিস্টান রাজ্যে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াতে পারতো। একটি হিসেব অনুযায়ী, ১৩ শতাব্দী পর্যন্ত এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা দুই লাখ হয়ে গিয়েছিল।

১৪ শতাব্দীতে এদের জনপ্রিয়তা সর্বোচ্চ সীমায় ছিল। অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্রে এদের দুর্গ ও সম্পদ ছিল। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা অনেক ধরনের ধর্ম অবমাননায় জড়িত হয়ে পড়ে। ১৩০৭ সালে এই সংগঠনের কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩১২ সালে তৎকালীন পোপ এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেন। ১৩১৪ সালে নাইটস টেম্পলারসের কিছু গ্রেফতারকৃত সদস্য ও গ্র্যান্ড মাস্টারকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এভাবে নাইটস টেম্পলারস শেষ হয়ে যায়।

৬. বিল্ডারবার্গ গ্রুপ Bilderberg Group: বিল্ডারবার্গ গ্রুপকে গুপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং বিপদজনক মনে করা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে বিভিন্ন যুদ্ধ করানো, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গুপ্তহত্যা ঘটানো এবং পৃথিবীকে অর্থনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য এই গুপ্তসংস্থাকে দ্বায়ী করা হয়। ১৯৫৪ সালে নেদারল্যান্ডস এর একটি হোটেল ডি বিল্ডারবার্গে De Bilderberg এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই হোটেলে ১৯৫৪ সালে ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার সাথে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য একটি বৈঠক হয়। এই বৈঠকের পরই এটি একটি সংগঠনে পরিণত হয়। পোল্যান্ডের এক রাজনৈতিক জোসেফ রেটিংগারকে Józef Retinger এই গুপ্তসংস্থার প্রতিষ্ঠিতা মনে করা হয়। বিল্ডারবার্গ গ্রুপকে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ গুপ্তসংস্থা মনে করা হয়ে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এই সংগঠনের সদস্য। এই সংগঠনের বার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই বৈঠককে এতটাই গোপন রাখা হয় যে, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কোন ব্যক্তির নামও প্রকাশ করা হয় না। ধারণা করা হয় এসব বৈঠকে পৃথিবীর রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ওকলাহোমা শহরে হওয়া বোমা হামলা, যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করা, ১৯৯৯ সালে লন্ডনে হওয়া বোমা হামলার পিছনে এই গ্রুপের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, সারা পৃথিবীতে ব্যাংক ও এনজিও কীভাবে কাজ করবে? এবং অনেক দেশে কে সরকার গঠন করবে তাও বিল্ডারবার্গ গ্রুপ ঠিক করবে থাকে। এসব তথ্যের মধ্যে সত্যতা আছে না কী নেই এ নিয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যায় না।

৭. সোসাইটি অফ জিসাস Society Of Jesus: সোসাইটি অফ জিসাস একটি খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য খ্রিস্টান ধর্মীয় বিশ্বাসকে সারা পৃথিবীতে ছড়ানো এবং পুণ্যের কাজ করা। ১৫৪০ সালে সোসাইটি অফ জিসাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইগনাটিয়াস অফ লয়ালকে Ignatius Of Loyola এর প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। যদিও সোসাইটি অফ জিসাস প্রতিষ্ঠিতায় আরও ছয় সদস্য ছিল। সারা পৃথিবীতে এর ১৮ হাজার সদস্য রয়েছে। এর মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল সারা পৃথিবীতে রোমান ক্যাথোলিক গির্জার শিক্ষা প্রচার করা এবং লোকেদের মধ্যে এমন চিন্তার উদয় ঘটানো যাতে লোকেরা স্বইচ্ছায় রোমান ক্যাথোলিক গির্জার শিক্ষা প্রচার করা। এই সংগঠনকে অনুদান ও শিক্ষার জন্য কাজ করা সংগঠনও বলা হয়ে থাকে। যেহেতু এই সংগঠন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠা করিয়েছিলো। তাই এই সংগঠনের নিয়ম অত্যন্ত কঠিন হয়ে থাকে। এই সংগঠনের যেকোন সদস্যদের যেকোন সময় যেকোন আদেশ দেয়া হতে পারে। আর ঐ সদস্য সেই আদেশ পালনের জন্য বাধ্য থাকে। এই সংগঠনকে ইশ্বরের সেনাবাহিনীও বলা হয়ে থাকে। এসব গুপ্ত সংগঠনের ব্যাপারে প্রচলিত এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কতটুকু সত্য তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এসব সংগঠনের গোপন কার্যক্রম অনেক সন্দেহের জন্ম দেয়।