রহমান মুফিজ
রহমান মুফিজের দুটি কবিতা
প্রকাশিত : মে ২৫, ২০২৩
ডিওডরেন্ট শেষ হয়ে গেলে
ডিওডরেন্ট শেষ হয়ে গেলে
নিজেকে খুব গরিব গরিব লাগে
মনে হয়, দেরাজে গচ্ছিত সঞ্চয় সব
লুটে নিয়ে গেছে কেউ।
মনে হয় নিঃস্ব আমি, প্রলেতারিয়েত!
বিপ্লবহীনতায় কুঁকড়ে পড়ে থাকবো
তৃতীয়বিশ্বে— দারিদ্ররেখার নিচে—
ডিওডরেন্ট শেষ হয়ে গেলে
আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এই বুঝি
গা থেকে ভুঁশ ভুঁশ বেরিয়ে পড়বে
ঢেকে রাখা উলঙ্গ মধ্যবিত্ত আপোষ।
মনে হয়, বেরিয়ে পড়বে নিজেকে ঠকানোর
সেইসব ভয়াবহ কৌশলগুলো— যা দিয়ে
আমি গোটা বিপ্লব ঠেকিয়ে রেখেছি।
ডিওডরেন্ট আমাকে লুকিয়ে রাখে—
লুকিয়ে লুকিয়ে বড় করে দেয়—
আমাকে এলিট করে দেয়—
প্রেম দেয়, কাম দেয়—
সুগন্ধের ভেতর সেঁদিয়ে ভোলায় দুর্বহ অতীত।
ডিওডরেন্ট আজ মধ্যবিত্তের প্রাত্যহিক চাহিদা
আমাদের গন্ধ লুকানোর মৌলিক অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে
আমেরিকা একটু নাক গলাক। সাধুবাদ জানাবো।
পাথর ভ্রমণের পর
পাথর ভ্রমণের পর চোখে আটকে থাকে পাথরের লালা
অনিদ্র হাওয়া সব বুকেই উড্ডীন রাখে প্রমত্ত গর্জন
মানুষের প্রতিভা বিফলে যায় না কখনো।
মানুষ জানে—
গিলে ফেললেই সব ধীরে থিতু হয়ে যায়
সব ধীরে মুখস্ত গরাদের মতো
পুনরোক্ত হতে থাকে জিহ্বার আনন্দে।
মানুষ জানে—
দেয়ালে লিখে রাখা খড়খুটো-ব্যথা
তাকে খেয়ে দেবে জন্মাবার আগেই।
তবু সে ভ্রমণের পর
ভেড়ার মুখের মতো করুণ মন্থর ঘুমের মধ্যে ঢুকে যায়।
দূরের পতাকা দেখে ভাবে— সুমদ্রে নামছে বিষণ্ণ ভোর
ভাবে, জেগে উঠেই দেখতে পাবে মাতাল দরজা।
অথচ ঘুম ভেঙে গেলে পর—
ফিরে আসে ইতিহাস;
পাঁজাকোলা বুড়োদের মতো
ঘুরে ঘুরে আসে পশমি বিকেল।
ওরা উড়ে যেতে যেতে দীর্ঘশ্বাসের পাশে রেখে যায় যত্ন
রেখে যায় তোমার মুখ—
সামনে দাঁড়াতেই আমাকে বলে, তৃষার্ত ভোলা—
সে মুখ আজ ধীরে দূরবাস, সে চিহ্ন দূরত্বের ভেতর
দুলতে দুলতে সকরুণ আয়না হয়ে যায়...
আমাকে বলে— হবে আরেক দিন, আজ ঘুমাও।