রবীন্দ্রনাথের চোখে শিক্ষা
মিমিয়া তাবাসসুমপ্রকাশিত : অক্টোবর ০৬, ২০১৮
বিশ্বকবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সাহিত্যের সকল শাখায় রয়েছে তাঁর অবাধ বিচরণ। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক প্রভৃতি সবক্ষেত্রেই আছে তাঁর সাবলীল বিস্তৃতি। তবে তাঁর শিক্ষাদর্শনের দিকটি অনেকের কাছেই অজানা।
রবীন্দ্রনাথ জীবনের প্রায় অন্তিমপর্যায়ে তিয়াত্তর বছর বয়সে নিজস্ব সৃষ্টিকর্মের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষাসংস্কার এবং পল্লী সঞ্জীবনীই আমার জীবনের প্রধান কাজ।’ রবীন্দ্রনাথ কেবল তাঁর শিক্ষাদর্শন লেখনীতে প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি বরং তা বাস্তবায়নেও ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী। গতানুগতিক শিক্ষাধারার পরিবর্তনের লক্ষ্যে ১৯১৮ সালে শ্রীনিকেতনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী। সেখানে তিনি প্রচলন করেন তাঁর নিজস্ব শিক্ষানীতি। নিজ গন্ডীর বাইরে ভাবতে শেখান সকলকে। প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি কখনোই তাঁকে নিজ শৃঙ্খলে বাধঁতে পারেনি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তাঁর লেখনীতে শিক্ষা সম্পর্কে ভাবনা আর পর্যবেক্ষণ ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে।
১৮২৯ সালে ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন, “অত্যাবশ্যক শিক্ষার সহিত স্বাধীন পাঠ না মিশাইলে ছেলে ভালো করিয়া মানুষ হইতে পারে না। বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে সে অনেকটা পরিমাণে বালক থাকিয়া যায়।”
‘শিক্ষা সংস্কার’ প্রবন্ধে তিনি বলেন, “নিজে চিন্তা করিবে, নিজে সন্ধান করিবে, নিজে কাজ করিবে, এমনতরো মানুষ তৈরি করিবার প্রণালী এক, আর পরের হুকুম মানিয়া মানিয়া চলিবে, পরের মতের প্রতিবাদ করিবে না ও পরের কাজের জোগানদার হইয়া থাকিবে মাত্র।”
অর্থাৎ শিক্ষার্থীর উপর যাতে শিক্ষা বোঝা না হয় বরং স্বাধীন চিন্তাধারা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায় সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ‘শিক্ষার বাহন’ প্রবন্ধে মুখস্থ বিদ্যাকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেছেন তিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাশ্চাত্য পদ্ধতি অনুসরণ করা নিয়েও উপহাস করেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মতে অনুকরনপ্রিয়তা আমাদের নিজ সত্ত্বাকে বিকিয়ে গোলামি শিক্ষা রপ্ত করছে কেবল।
রবীন্দ্রকল্পিত শিক্ষাদর্শ বাস্তব অবস্থার সাথে অনেকটাই সাংঘর্ষিক, যা পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ নিজেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ফলে সেখানে তিনি প্রচলিত কিছু বিধিবিধান যেমন সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষাপদ্ধতি, ক্লাসরুম পরিচালনা ইত্যাদি অধ্যায় যুক্ত করা হয়। এতে শিক্ষাদর্শের একটি সমন্বিত ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব ধারণ করে। যা পরবর্তীকালে প্রায় সর্বজনসম্মত গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
সবশেষে বলা যায় রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার প্রতি আলোকপাত করেছেন।তিনি বলেন, `মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।`