রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছড়া ‘দুই তীরে’

পুনর্মুদ্রণ

প্রকাশিত : জুন ১৮, ২০২২

আমি ভালোবাসি আমার
নদীর বালুচর,
শরৎকালে যে নির্জনে
চকাচকির ঘর।

যেথায় ফোটে কাশ
তটের চারিপাশ,
শীতের দিনে বিদেশী সব
হাঁসের বসবাস।

কচ্ছপেরা ধীরে
রৌদ্র পোহায় তীরে,
দু’একখানি জেলের ডিঙি
সন্ধেবেলায় ভিড়ে।

আমি ভালোবাসি আমার
নদীর বালুচর,
শরৎকালে যে নির্জনে
চকাচকির ঘর।

তুমি ভালোবাস তোমার
ওই ও পারের বন,
যেথায় গাথা ঘনচ্ছায়া
পাতার আচ্ছাদন।

যেথায় বাঁকা গলি
নদীতে যায় চলি,
দুই ধারে তার বেণুবনের
শাখায় গলাগলি।

সকাল সন্ধেবেলা
ঘাটে বধূর মেলা,
ছেলের দলে ঘাটের জলে
ভাসে ভাসায় ভেলা।

তুমি ভালোবাস তোমার
ওই ও পারের বন,
যেথায় গাথা ঘনচ্ছায়া
পাতার আচ্ছাদন।

তোমার আমার মাঝখানেতে
একটি বহে নদী,
দুই তটেরে একই গান সে
শোনায় নিরবধি।

আমি শুনি শুয়ে
বিজন বালু ভুঁয়ে,
তুমি শোন কাঁখের কলস
ঘাটের ‘পরে থুয়ে।

তুমি তাহার গানে
বোঝ একটা মানে,
আমার কূলে আরেক অর্থ
ঠেকে আমার কানে।

তোমার আমার মাঝখানেতে
একটি বহে নদী,
দুই তটেরে একই গান সে
শোনায় নিরবধি।