রথো রাফি
রথো রাফির ৩ কবিতা
প্রকাশিত : মে ১২, ২০২২
বিকেলের আলো
তোমাকে দেখলাম
যেন সবুজ ঝোপে
উড়ছে প্রজাপতি
মনে হল, মানুষের
চোখই হৃদয়
দেখো সৌন্দর্যের বলি
হলো কত মানুষ
তবু ফুলের দিকে
চোখ রেখে
কে ভাবে ফলের কথা
খাদের পাশে
না দাঁড়িয়ে কেন মানুষ
পতনের তীব্রতা
আজও টের পায় না
তবু ডরায় কে জেগে
উঠতে এই শূন্যতায়
যখন বন্ধনই স্বাধীনতা!
প্রেম এই শব্দ যেন
ফাঁসের গিঁটের মতো
তবু দেখো
ওই এক ঘুড়ি
বন্ধনের আনন্দে আজও
আকাশে ওড়া
তোমাকে দেখলাম
যেন সবুজ ঝোপে
উড়ছে প্রজাপতি
মনে হলো,
মানুষের দৃষ্টির
অন্য নাম আসলে ট্রাজেডি
এই নীল আত্ম-পরিধি
পাখির মতোন সম্ভাবনাময়
পাখির মতোন ভীতিকর
কোনো প্রাণী এই পৃথিবীতে নেই
নেই পাথরের মতো আশাপ্রদ
আর হতাশার কোনো গান
তবু পাথর হতে চেয়েছে গাছ
গাছ হতে চেয়েছে উত্তাল পাখি
আর পাখি কী হতে চেয়েছে?
আকাশ পিছে ফেলে সে
ক্লান্ত ডানা মুড়ে বসেছে
আবার সেই পাথরের গায়
যেন সে পাথরই হতে চায়
তবু পাখি কখনও অনুভব করেনি
পাথরের দুঃস্বপ্নটুকু
আর পাথরও অনুভব করেনি
কখনও ওই পাখিটাকে
আর এসবই ভাবতে ভাবতে
মাথার ওপর এক পাখাকে
আমি ঘূর্ণ্যমান দেখি বারবার
যে চাকা নয়, যে পাখি নয়,
এমনকি পাথরও নয়,
কিংবা পাথর-পাখি দুটোই
যার থেমে থাকা নেই, এগোনোও নেই!
যে শুধু চলন্তস্থির!
আমাদের ভাবনা যেন!
আর আমিও তখন অনুভব করি
তাদের স্ববিরোধী এই বুনন নিয়ত
গড়ে তুলছে ও ভাঙছে
আমার এই নীল আত্ম-পরিধি!
রান্নাঘর
স্বপ্নগুলো খুন করে কোথায় যে চলে গেছ তুমি।
রক্তে আজ শুধু বাসনের ময়লা জল খেলা করে।
কেন যে বুঝিনি আমাদের পেছনে ওই নিভন্ত চুলো
খেলা করছে স্বেচ্ছাচারী ঈশ্বরের মতো!
কেন আজও ভুলে যেতে চাই রক্তের অন্তর্গত
আতঙ্কের নাম ওই নিভন্ত চুলো!
অথচ দেখো, কে না জানে ওই জীবন্ত চুলোর পাশে
রাতভর মানুষের নাচ আসলে রক্তেরই চিরমুগ্ধতা!
নিভন্ত চুলার পাশ থেকে আকাশের দিকে
তাকালে আজও রাষ্ট্র সমাজ সব অচেনা লাগে!
মনে হয়, অমন নীল আকাশ ঘেরা
অপূর্ব একটি সবুজ গ্রহও কেনে
আশ্রয় হতে পারলো না আমাদের!
সবার মতো আমিও জানি,
পৃথিবীর কোনো না কোনো চুলোর
তাপ-চাপ আজও বাঁচায় ও মারে আমাদের।
তখন আমি ভুলে যেতে চাই যা সত্য
আর যা মিথ্যে আসলে। তখন আমিও দেখতে থাকি
ঘুমন্ত চুলোর দীর্ঘশ্বাসে রক্তের কত কত বন্ধন
শব্দহীন ভেঙে পড়ে। টের পাই, কে যেন
ঈশ্বর হায় নিভন্ত চুলোর চেয়েও খুব খাটো!
নিভন্ত চুলোর পাশে দাঁড়ালে আজও সিংহভাগ
বাংলা কবিতা আমার অশ্লীল লাগে!
মৃত চুলোর পাশে বসে এমনকি রবীন্দ্রনাথও
পড়তে পারি না আমি। জীবন্ত চুলোর পাশে বসে
অথচ কোনোভাবেই তাঁকে ভুলে যেতে চাই না আমি!
আর জীবন্ত চুলোর পাশে বসেই তো আমি টের পাই
মধ্যযুগের পদাবলি আজও রক্তে কী তুমুল নেশা ধরায়!
আমি বিশ্বেস করতে চাই মৃত্যুমুহূর্তে
এমনকি ক্ষুধার্তের কাছেও এই পৃথিবীটা খুব মিষ্টি ঠেকে!
নিভন্ত চুলোর পাশে বসে আমি টের পাই শুধু শিবের জন্ম
আর তোমার এই অন্তহীন দূরত্ব, আর অন্তহীন এই দূরত্ব-বিরোধ!