রথো রাফি

রথো রাফি

রথো রাফির তিনটি কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৬, ২০২২

শিশু


তবু তোমার স্তন থেকে ছেড়ে দাও
নিরুপম এই যমুনা নদী
ছেড়ে দাও শিশুবিকাশের দিকে
যারা সূর্যের নিচে আবারও
হাততালি দেয় তোমাকে স্মরণ করে
মনে হয় কত স্বার্থপর ওরা

তুমি হাসো স্বপ্নে একবার
আরেকবার চোখ মেলে
স্বপ্ন ও কান্নার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে
ভাবো অপার পাড়ের কথা
ভাবো কেন এমন অসহনীয়
জীবনের ভার

সন্তানের ভেতর নিজেকে দেখতে পেয়ে
কাঁপো একবার ফের ভাবো একবার
সব পুনরাবৃত্তিময়
পুনরাবৃত্তিবিহীন এক পৃথিবীতে

ভাবো ডিমের কুসুমও চায়
উজ্জ্বল রক্তঘূর্ণী সবুজবিস্ফোরণ
শুক্রাণুর নক্ষত্র-ত্রাণ ও প্রিয় উল্কাপাত
এর বেশি কিছু হয়তো তুমিও চাওনি

তবু জেনেছো চির-অসহনীয় এক পাহাড়
আর নিরুপম এই যমুনা নদী

বন্ধু, বন্ধুপত্নী

বন্ধু, বন্ধুপত্নী পাশাপাশি দাঁড়ানো
আর তাদের কোলে
শিশুদের হাসিমুখ
এ ছবি যেন এক অনন্তকাল

কেন মনে থাকে না আমার
একটা ক্লিক যতটুকু আয়ু ধরে
তার বেশি কিছুই স্থায়ী নয় মরজগতে

ছবি শুধু মুহূর্তের কথা বলে,
আর হায় আমি কিনা
শ্বাশ্বতের আয়না ভেবে বসি তাকে

তাদের ছবি কি
আমাকে বিভ্রান্ত করে খুব
নাকি বিশুদ্ধ চোরাটান আমার

মনে হয় এই মরুসমাধিজুড়ে
এক গোছা ঘাস ওরা
বাতাসে হেলছে দুলছে হাসছে
কোথাও যেন দ্বিতীয় গোছাটি নেই

সময়, আর
স্থানের দিক দিয়ে
বড় বিরল বলেই কি ওরা
মরুদ্যান হয়ে ওঠে এমন

ছবির মানুষগুলোকে
দেখতে গিয়ে আমি
ছবিটাকে যদি আর দেখতে না পাই

নাকি মুহূর্তের কাছেই
বন্দি থেকে যায়
মানুষের শ্বাশ্বত স্বপ্নগুলি!

স্ববিরোধ

গ্রীস্মের দেশে মেঘ তোমাকে কত ভালবাসি
আর শীতের দেশে রোদ তোমাকে
এসব ভেবো না মানুষের স্ববিরোধ
শাশ্বত বলে কিছু নেই বলে
শাশ্বত করে কিছু চাওয়াই হয়তো
সবচেয়ে বড় স্ববিরোধ
তা হোক প্রেম তা হোক জীবন
তবু তাদের শ্বাশ্বত করে গড়তে দাও
বলো না একে আমার স্ববিরোধ

গ্রীস্মের দেশে মেঘ তোমাকে কত ভালবাসি
আর শীতের দেশে রোদ তোমাকে

ডানা আছে বলে বলো না
সুস্থিরতাকে আমি কখনও ভালোবাসি না
গাছ হয়ে আছি মানে বলো না
কোথাও ছুটে যাওয়া ভালোবাসি না আমি
গ্রীষ্মের দেশে মেঘ তোমাকে কত ভালবাসি
শীতের দেশে রোদ তোমাকে

আমি তো সবসময় শীতের দেশে থাকি না
আমি তো থাকি না সবসময় গরমের দেশেও
কিংবা গরমের দেশ ধীরে হয়ে ওঠে শীতের দেশ
আর শীতের দেশও ফের হয়ে ওঠে গরমের
আর আমি তাদের চক্রে যে কবে থেকে বাধা
ভেবো না এ বাধনও চিরন্তন
মৃত্যু এসে ভেঙে ফেলে সমস্ত বাঁধন
তাই বলে ভেবো না অবসান
দেখো সবাই চলার পথে কেমন বীজ ফেলে যায়
কেউ কেউ চলে যায় বীজ না ফেলেই প্রতিধ্বনিহীন