যাকির সাইদ

যাকির সাইদ

যাকির সাইদের কবিতা ‘মাহি মুহম্মদ’

প্রকাশিত : মে ০৬, ২০২২

মাহি, জানিস
আমাদের ছোট্ট আমের চারাটিতে
আম ধরেছে। ধরেছিল অনেক চৈত্রের খরা,
ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যেও
সতেরটি আম টিকে গেছে
তা থাক, তোকে দুটি দেব।

শরুফা গাছে একটি শরুফা আছে,
ওটা আর পাড়ছি না, ওটা তোর জন্য
রেখে দিয়েছি। তুই যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি আসবি
তোকে দেব, তুই একা খাবি।
সাবির, জারা, সারা, আয়াত, নুসাইবা
কাউকে দিবি না। ওরাতো অনেক খেয়েছে।

আমাদের কুকুরটি এখনো প্রতিরাতে
তোর যাকির কাকুর জুতো জোড়া
বুকে নিয়ে ঘুমায়, আমি বুঝি না ওর এ কেমন অভ্যেস,
তুই বুঝিস? কত বকি, আমার জুতায়
আর ধূলাবালি লাগাইস না, কে শোনে কার কথা!

এবার ঈদে আমেরিকা প্রবাসী তোর
রুবিনা ফুপু সব ছোটদের জন্য পাঁচশো টাকা করে বখশিস দিয়েছে, তুই হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসে
যা ইচ্ছে কিনে খাবি,
আর তোর পিংকি আপু দশ হাজার টাকা পাঠিয়েছে
তোকে ফল ফ্রুট খেতে।
ইচ্ছে হলে ছোট ভাই সাবিরকে কিছু টাকা দিতে পারিস।

জানিস না তো, তুই হাসপাতালে যাওয়ার ক’দিন পরেই ছোট ফুফু আমেরিকায় বাড়ি কিনেছে।
খুব সুন্দর বাড়ি, দশ কোটি টাকারও বেশি।
এক দিনতো আমরাও বেড়াতে যাব।
তোর ফুপু সবাইকে বলে রেখেছে।
এখন তুই সুস্থ হলেই হয়। কি রে মাহি যাবি না?

প্রায় দু’মাস হয়ে এলো
তুই যখন হাসপাতালের বেডে
যম-জীবনের তুমুল লড়াই
তখন তোর মা বাবা তোর সিঁথানে বসে চোখের জলে
বুক ভাসায় আর
আল্লাহর কাছে তোর প্রাণ ভিক্ষা চায়।
আর আমাদের চোখেও
অনেক জল জমা আছে এখনো
তোর আরোগ্য কামনা করে
চোখের জল শেয হয়ে গেলে রক্ত ঝরাব, তবু তোকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবই। জানিসতো পরম আল্লাহ অনেক দয়ালু।

এ পর্যন্ত প্রায় ষোল লাখ টাকা
খরচ হয়ে গেছে। তাতে কি
তোর রুবিনা ফুপু, ফুপা, মিম আপু
টাকা পাঠাচ্ছে, তোর চাচা চাচি, মামা মামি, খালা খালু আত্মীয়জনরাও টাকা দিচ্ছে।
ওসব নিয়ে ভাবিস না, ওটা বড়দের ব্যাপার। তুই সুস্থ হবি এটাই আল্লাহর দরবারে আমাদের কামনা।

মাহি হাসিস না, শোন
ভুবন, রোহান, নুসাইবা, জারা, সারা, আয়াত ওদের ঈদ বখশিসের
বারো হাজার টাকা তোর চিকিৎসার জন্য দিয়ে দিয়েছে। ভালোবাসায় অভিষিক্ত এ যে বারো কোটি টাকা, কী বলিস?

হাসপাতালে তোর বেডের পাশে বসে
মাথায় হাত রেখে যাকির কাকু বলেছিল না এই রমজানের ঈদে তুই সুস্থ হয়ে বাড়ি আসলে অন্যান্য বারের মতো এবারও চুড়ুইভাতি খেলব। তোর আসতে বিলম্ব দেখে
সব পরিকল্পনা বাদ দিয়েছি।
তুই বাড়ি এলেই চূলোয় আগুন ধরাব।

মাহি করোন অসুখটা খুব দুষ্টু রে। খুব নিষ্ঠুরও।
তোরে কতই না কষ্ট দিচ্ছে।
কে জানত বারো বছরের তোকেও
মারাত্নক আহত করে ছাড়বে।
শোন, ডাক্তার বলেছে
তোর, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, লিভার, ব্লাড, ইউরিন সব কিছু ধীরে ধীরে ভালো হয়ে আসছে শুধু...
ব্রেনে (সম্ভবত) তিনবার অপারেশন করতে হবে।
ছোট অপারেশন, ভয়ের কিছু নেই বোকা।
পঁয়ত্রিশ মিলি পানি বের করা হয়েছে।
আজও একবার অপারেশন হয়ে গেল।
সামনে হয়তো আরো একবার হতে পারে। তাতে কী, হাজারো স্বজনের দোয়া তোর সাথে, আল্লাহর রহমত, ডাক্তারদের আন্তরিকতা
এই মৃত্যুর মুখ থেকে তুই ফিরে আসবিই। বোকা, লড়াই করে যে বাঁচে সেইতো প্রকৃত বীর।
এই পৃথিবী সাহসী মানুষের জন্য।
তুই যোদ্ধা, তুই বীর, তুই জিতেন্দ্রিয়।