যত অপরাধ তত মসজিদ!

স্বকৃত নোমান

প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০১৮

একদেশে ছিলেন এক রাজা। একদিন রাজজ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করল, ‘মহারাজ, আপনার রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা হবে। সেই বন্যার জল হবে পাগলাজল। যে সেই জল খাবে সে পাগল হয়ে যাবে।’ জ্যোতিষীর ভবিষদ্বাণী আমলে নিয়ে রাজা প্রচুর বিশুদ্ধ জল সংরক্ষণ করলেন। যথারীতি বন্যা শুরু হলো। পাগলাজলে ঘর-গেরস্থালি সব ভেসে গেল। খাওয়ার মতো খাবার নেই, পানের মতো জল নেই। প্রজারা বাধ্য হয়ে বন্যার পাগলা জল খেতে শুরু করল। যথারীতি পাগল হয়ে গেল তারা। পরনে কাপড়-চোপড় ফেলে দিল। গোটা রাজ্যের সবাই পাগল, সুস্থ কেবল রাজা-রানি। এরই মধ্যে রাজা একদিন দরবার ডাকলেন। সভাসদরা হাজির হলো। সবাই পাগল, সবাই নেংটো। রাজা-রানিকে দেখে সবাই অবাক। একি! আমরা সবাই নেংটো, অথচ রাজা-রানি কিনা কাপড় পরে আছে! নিশ্চয়ই তারা পাগল। এমন পাগল মানুষ আমাদের রাজা হতে পারে না। সভার সর্বসম্মতিক্রমে রাজা-রানিকে তারা পাগল সাব্যস্ত করল। রাজা তো দ্বিগুণ অবাক। বলে কী এসব পাগলেরা! রাজা যতই তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন কোনো লাভ হলো না। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। অগত্যা কী আর করেন রাজা, তিনিও পাগলাজল খেলেন, রানিকেও খাওয়ালেন। যথারীতি দুজনেই পাগল হয়ে গেলেন। কাপড়-চোপড় ফেলে দিয়ে নেংটো হয়ে গেলেন। সভাসদদের হাসিঠাট্টা থেমে গেল। রাজা-রানিকে সবাই কুর্ণিশ করতে লাগল। প্রত্যাহার করে নিল তাদের সিদ্ধান্ত― না, রাজা-রানি পাগল নন। তারা আমাদের মতোই সুস্থ। তিনিই আমাদের রাজা।

গল্পটা শুনেছিলাম কবি সরকার আমিনের কাছ থেকে। আজ সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউন নিউজপোর্টালে ইন্দোনেশিয়ায় মসজিদের মাইকে আজান ছাড়া শব্দ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা শীর্ষক সংবাদটি পড়াশেষে উপরের গল্পটি মনে পড়ে গেল। ২০১৬ সালের কথা। বাড়ির পাশের মসজিদে উচ্চস্বরের আজান নিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার মেলিয়ানা নামের এক নারী। কিছু কাঠমোল্লা তো সব জায়গাতেই থাকে। সেই কাঠমোল্লারা মেলিয়ানার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনলো তিনি নাকি ধর্ম অবমাননা করেছেন। গুজব ছড়িয়ে দিল, মেলিয়ানা নাকি আজান নিষিদ্ধ করতে চাইছেন। সেসব কাঠমোল্লাদের নেতৃত্বে কিছু মুসলমান তখন বৌদ্ধদের মন্দিরে হামলা চালায়। সম্প্রতি মেলিয়ানার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটির রায় হলো। আদালত তাকে ধর্ম অবমাননার দায়ে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

কিন্তু আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির বুদ্ধিজীবী সমাজ ও আইনজীবিরা। শুধু তাই নয়, দেশটির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংগঠন হচ্ছে ‘নাহদাতুল উলামা।’ গত শুক্রবার সংগঠনটির তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ‘মাইকের আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি জানানো ধর্ম অবমাননার আওতায় পড়ে না। বরং এরকম আপত্তিকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবেই দেখা উচিত।’ প্রায় চার কোটি সদস্যের সংগঠন ‘নাহদাতুল উলামার’ আইন বিভাগের প্রধান রবিকিন এমহাস বলেছেন, ‘মাইকে দেওয়া আজানের শব্দ অনেক বেশি―এমনটা বললে তাকে ধর্ম অবমাননা হিসেবে গণ্য করা যায় না। বরং ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি বহুত্ববাদী সমাজে এমন অভিযোগকে মুসলমানদের গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবেই দেখা উচিত।’

মেলিয়ানার কারাদণ্ড এবং ‘নাহদাতুল উলামার’ ঘোষণা প্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয় আজান বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারে রয়েছে দেশটির মসজিদগুলোতে কিভাবে আজান দেয়া হবে সেই সম্পর্কে ছয় দফা নির্দেশনা: ১. মসজিদের মাইক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে পরিচালনা করতে হবে, যাতে করে আজানের শব্দ মানুষের মনে মসজিদের প্রতি সম্ভাব্য বিদ্বেষ তৈরি না করে, ২. যারা আজান দেবেন তাদের অবশ্যই সমধুর ও ভালো কণ্ঠের অধিকারী হতে হবে, ৩. নামাজের সময় শব্দের মাত্রা বাড়ানো যাবে না, ৪. মানুষ যখন ঘুম, বিশ্রাম ও নামাজ আদায় করছে তখন মসজিদের মাইকে আজান ছাড়া কোনও ধরনের শব্দ প্রচার করা যাবে না, ৫. আজানকে অবশ্যই মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে। হতে হবে সমধুর ও কানের জন্য শ্রুতিমধুর, ৬. অবশ্যই উপযুক্ত সময়ে আজান দিতে হবে। যেমন ভোরে। আর কোরান তেলাওয়াতে মসজিদের ভেতরের স্পিকার ব্যবহার করতে হবে, মাইক ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলা ট্রিবিউনের নিউজটি তিনবার পড়লাম। ভূয়া নিউজ নয় তো? চারদিকে তো এখন ভূয়া পোর্টাল আর ভূয়া নিউজের ছড়াছড়ি। বাংলা ট্রিবিউনের মতো একটি দায়িত্বশীল পোর্টাল তো ভূয়া নিউজ প্রকাশ করার কথা নয়। তবু নিশ্চিত হতে নিউজের উৎস যাচাই করলাম। উৎস হচ্ছে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘দ্য স্টার’। না, নিউজটি ভূয়া নয়। তখন ভাবলাম, বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রণালয় যদি এরকম একটি সার্কুলার জারি করত তাহলে কী হতো? ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় সংগঠন ‘নাহদাতুল উলামা’ যেমন, আমাদের এখানে ‘হেফাজতে ইসলাম’ তেমন। এমন সার্কুলার জারি করলে হেফাজতে ইসলাম জেহাদের ডাক, আরেকটি শাপলা কান্ডের ডাক দিয়ে বসতো।

লেখা বাহুল্য, মসজিদের মাইকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ে যদি বিশ্বব্যাপী একটি জরিপ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা শহর থাকবে সর্বশীর্ষে। ঢাকাকে তো মসজিদের নগরী বলা হয়। পাড়ায় পড়ায় মসজিদ, গলিতে গলিতে মসজিদ। পারছে না কেবল প্রতি বাসার ছাদে একটি করে মসজিদ বসিয়ে দিতে। মসজিদের এই সংখ্যাধিক্যের একটা কারণ আছে। কোনো দেশে যদি মসজিদের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং নামাজির সংখ্যা কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই দেশের জনগণের হতো প্রচুর কালো টাকা। বুঝতে হবে সেই দেশের জনগণ অপরাধপ্রবণ। তাদের অপরাধ ঢাকার জন্য তারা উপসনালয়ে প্রচুর টাকা ঢালে। ভাবে, এই করলে বুঝি তাদের পাপ স্খলন হবে। বাংলাদেশের, বিশেষত ঢাকা শহরের, হয়েছে সেই দশা। প্রচুর মসজিদ। দুই তলা, তিন তলা, চার তলা। আজকে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বর পার্কে হাঁটার সময় একটা মসজিদ দেখলাম। চোখটা কপালে উঠে গেল। এ কি মসজিদ, না রাজপ্রাসাদ! সঙ্গে সঙ্গে চোখ আবার কপাল থেকে নেমেও গেল। কারণ, আমি তো জানি, যত অপরাধ তত মসজিদ। কিন্তু মসজিদে মুসল্লি নাই। এসব দোতলা, তিনতলা মসজিগুলোতে শুক্রবার ছাড়া পাঞ্জেগানায় ঠিকমতো দুই কাতার পূর্ণ হয় না।

প্রতি ওয়াক্তে এইসব মসজিদের মাইকগুলো যখন বেজে ওঠে তখন মনে হয় আমরা বুঝি খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে বাস করছি! না, ভুল লিখছি আমি। খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে এত মসজিদ ছিল না, তখন মাইকও ছিল না। ভারতবর্ষে মুসলমানদের সেই স্বর্ণযুগ সুলতানি বা মুঘল আমলেও এত মসজিদ ছিল না। আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি, যে যুগ সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘হায় রে ভজনালয়/ তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়।’

আর শীতকাল এলে তো কথা নেই। প্রতি পাড়ায় পড়ায়, প্রতি গলিতে গলিতে ওয়াজ-মাহফিল। শুধু মাহফিলস্থলে নয়, আশপাশের দু-তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসানো হয় মাইক। মাইকের শব্দে যে শিশুটির ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, অসুস্থ লোকটির যে সমস্যা হচ্ছে, অন্য ধর্মালম্বীদের যে অসুবিধা হচ্ছে―সেকথা মোল্লাদের খেয়াল থাকে না। আর ওয়াজের কথা আর কী বলব। মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী এবং নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যত রকমের উস্কানি দেওয়া যায়, চিৎকার করতে করতে সব উগরে দেয়। আর যত মিথ্যা কথা আছে সব বলে, যত আত্মগৌরব আছে সব করে। আজ ইউটিইউবে এক মওলানার একটা ওয়াজ শুনলাম। কোরআন থেকে কীভাবে ফেসবুক আবিষ্কার হয়েছে, কীভাবে কম্পিউটার আবিষ্কার হয়েছে, কীভাবে মাইক-বিমান-রেডিও-টেলিভিশন ইত্যাদি আবিষ্কার হয়েছে সেসবের বর্ণনা দিচ্ছে মওলানা। শুনছিলাম আর হাসছিলাম। হায় মূর্খ ওয়াজ ব্যবসায়ী মওলানা, বিধর্মীরা যদি সব কোরআন গবেষণা করেই আবিষ্কার করে, তবে তোমরা করেছটা কী? তোমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গবেষণা করে তোমরা তো মানবকল্যাণকর কোনো কিছুই আবিষ্কার করতে পারলে না। এসব কথা বলতে তোমাদের লজ্জা লাগে না?

ইন্দোনেশিয়ার সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংগঠ ‘নাহদাতুল উলামা’ মাইকে আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি জানানোকে ধর্ম অবমাননা আওতায় পড়ে না বলে ঘোষণা দিল। ইন্দোনেশিয়ার বহুত্ববাদী সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তারা মেলিয়ানার বক্তব্যকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবে দেখল। এই দেখার কারণে কি তাদের ধর্ম নাশ হয়ে গেল? তারা ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে গেলেন? না, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তারা বরং তাদের ধর্মকে মহীয়ান করে তুললেন। কিন্তু তাদের এই উদারতার কারণ কী? কারণ হচ্ছে সংস্কৃতি। আরব থেকে ইসলাম পৃথিবীর যেসব দেশে গেছে সেসব দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিয়ে ইসলামি সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দিয়েছে। পারে নি কেবল ভারতে। ভারতে পারে নি সুলতানদের, মুঘলদের এবং পীর-আওলিয়াদের অসাম্প্রদায়িক ও বহুত্ববাদী চেতনার কারণে। তারাও মুসলমান ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতিকে কখনো তারা শত্রুসংস্কৃতি জ্ঞান করেন নি। বরং ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন। আর পারে নি ইন্দোনেশিয়ায়। গৌতম বুদ্ধের অহিংস বাণী আর প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। ইসলাম এসে সেই সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে পারে নি, বরং সেই সংস্কৃতির সঙ্গে আপস করে নিয়েছে। সেই আপসের ফলাফল ইন্দোনেশিয়ার বুদ্ধিজীবী সমাজের আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান এবং ‘নাহদাতুল উলামা’র এই উদার ঘোষণা।

আর বাংলাদেশ? আরব-ইরান-তুরান থেকে আগত শত শত পীর-আওলিয়া এই দেশে ইসলাম প্রচার করতে এসে যে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার নাম সংস্কৃতি। তারা বুঝেছিলেন, এই সংস্কৃতির সঙ্গে বিরোধ নয়, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এই বঙ্গীয় সংস্কৃতিকে তারা শত্রুসংস্কৃতি জ্ঞান করেন নি। এই সংস্কৃতির সঙ্গে তারা বরং আপস করে নিয়েছিলেন, নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন। ধর্মকে রেখেছেন ধর্মের জায়গায়, সংস্কৃতিকে রেখেছেন সংস্কৃতির জায়গায়। কিন্তু বাংলায় মুসলিম শাসনের বিপর্যয়ের পর বাংলার মুসলমানদের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ও শুরু হলো। এখানকার মুসলমানরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেল―তারা কি মুসলমান, নাকি বাঙালি? জাতি এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, সেকথা তারা বুঝল না। বুঝলেও মানতে চাইল না। তার রেশ এখনো কাটে নি, বরং বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মান্ধতা, কুপমুণ্ডকতা। এই ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তির উপায় কী? উপায় হচ্ছে সংস্কৃতি। বাঙালি সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের মধ্য দিয়ে দূর হতে পারে এই অন্ধত্ব।

কিন্তু সংস্কৃতির পুনর্জাগরণটা ঘটাবে কে? দেশের রাজা? না, রাজার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। কারণটা শুরুতেই বলেছি, গল্পটার মধ্য দিয়ে যে, দেশের জনগণ যদি পাগল হয়, নেংটো হয়―রাজাকেও পাগল হতে হয়, নেংটো হতে হয়। অর্থাৎ যেমন প্রজা তেমন রাজা। নইলে রাজাকে ক্ষমতা হারাতে হয়, উৎখাত হতে হয়। তাহলে এই কাজটা করবে কে? করবে দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ। যেমনটা করেছেন ইন্দোনেশিয়ার বুদ্ধিজীবী সমাজ, আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে। যেমনটা করেছেন ইন্দোনেশিয়ার উদার ও বহুত্ববাদী ধর্মীয় সংগঠন ‘নাহদাতুল উলামা’, একটি উদার ঘোষণার মধ্য দিয়ে।

আমরাও এমনকি একটি উদার ও বহুত্ববাদী দেশের স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্ন ততক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে না, যতক্ষণ না আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ এই ব্যাপারে তৎপর হবেন।

টুকে রাখা কথামালা
২৬.০৮.২০১৮