ময়ুখ চৌধুরীর চারটি কবিতা

প্রকাশিত : অক্টোবর ২২, ২০২০

কবি ময়ুখ চৌধুরীর আজ জন্মদিন। ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়া তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার ছেলেবেলা কাটে চট্টগ্রামের দক্ষিণে কর্ণফুলীর পাড়ে। তার মূল নাম আনোয়ারুল আজিম। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে তার রচিত চারটি কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

আগুন আগুন

তোমাকে দেখবো বলে একবার কী কাণ্ডটাইনা করেছিলাম
‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করে
সমস্ত পাড়াটাকে চমকে দিয়ে
তোলপাড় করে
সুখের গেরস্তালিতে ডুবে-যাওয়া লোকজনদের
বড়শি-গাঁথা মাছের মতো
বাইরে টেনে নিয়ে এলাম
তুমিও এসে দাঁড়ালে রেলিঙে

কোথায় আগুন?
আমাকে পাগল ভেবে যে-যার নিজের ঘরে ফিরে গেল।
একমাত্র তুমিই দেখতে পেলে
তোমার শিক্ষিত চোখে
আমার বুকের পাড়ায় কী-জবর লেগেছে আগুন।

নেই, থাকে না

সূর্যকে ছোঁয়ার জন্যে একা চাঁদ ঘোরে চক্রাকারে
ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ অভিমানে অমাবস্যা হয়।
চাঁদের আবেগে টান লাগে জলাশয়ে
জলের ফেনায় ফণা তোলে নদী; সূর্য নামে তাতে।

এমন নদীর তীরে কারো হাত ছিলো এই হাতে,
এনে পড়ে প্রায় প্রতিরাতে।

এখনও আগের মতো চাঁদ আছে, সূর্য আছে, আর
নদী আছে নদীর জায়গায়।
দিনেরাতে কল্লোলিত জ্যোৎস্নারৌদ্রে জ্বলে পটভূমি
শুধু নেই আমি আর তুমি।

রোহিনীর স্নান

জলের ঘটনাটুকু অনায়াসে মুছে ফেলা যেত।
জঙ্ঘাদেশে, নক্ষত্রের যুগল কম্পনে
লেপ্টে থাকা সাদা শাড়ি পায়ে পায়ে উঠে এসেছিল,
উঠে এসেছিল লুব্ধ মৃত্যুর নিকট।
কী এমন দোষ ছিল রোহিনীতে কিংবা বৃষ্টিপাতে
নিয়তির মধ্যে যার মাধ্যাকর্ষণের হাতছানি!
জলের তরঙ্গপটে আমরা কি কখনো দেখিনি
উন্নত বৃক্ষের শাখা চুম্বনকাতর ঠোঁটে
কীভাবে তৃষ্ণায় ঝুঁকে পড়ে!
এই সব দৃশ্যের আগুন নিয়ে একা জলাশয়ে
মাছের স্পর্শ পেতে রোহিনী রচনা করে অর্থহীন স্নান।
জলের লিখনটুকু অনায়াসে মুছে ফেলা যেত,
তবু মাছরাঙা সরলো না।

বিস্মরণ

কাচের টুকরো ভেবে বড় বেশি অবজ্ঞা করেছ,
ভুলে গেছ, তাকে কাটতে গেলে
হীরা লাগে।