মোজাম্মেল হকের উপন্যাসিকা ‘প্রস্থান’
পর্ব ৩
প্রকাশিত : মার্চ ১৮, ২০২১
বিউটিরা চলে যাবার পর হামিদা বেগমের ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। ওসমানের যশোরে বদলির খবরে তা কিছুটা কমেছে। মনে মনে ভাবছে, যশোরে গেলে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাবে। সেনানিবাসে বাসা বরাদ্দ না পেলে বাইরে বাসা করে থাকার অনুমতি নিতে পারবে ওসমান। এই বিষয়টা হামিদার জন্য অনেক স্বস্তির। বাসা বদলের কাজে সহায়তা করতে আয়নালকে বাসায় আনার পরামর্শ দেয় হামিদা। হামিদার কথা মতো রাজশাহীতে বেড়াতে আসার জন্য আয়নালকে চিঠি লিখে ওসমান। আয়নালের স্কুল ছুটি, তাই চিঠি পেয়েই ছুটে আসে রাজশাহী। মনে মনে ভাবে এবার সে ভাবীকে কাছে পাবে। তাই ভাবীকে খুশি করার জন্য তার পছন্দের পিঠা, শাড়ি আর বাচ্চাদের জন্য জামাকপাড় নিয়ে রাজশাহী আসে।
আয়নালের উপস্থিতিতে সবাই খুশি হয়। শিলা আর সজীবের সাথে কথা বলে সে বুঝতে পারে এখান থেকে ছেড়ে যেতে ওদের মন চাইছেনা। শিলার বেড়ে ওঠা দেখে অবাক হয়ে গেছে আয়নাল। মাত্র দুই-আড়াই বছরেই এত পরিবর্তন। চেহারায় অনেক লাবণ্য এসেছে। শহরের আলো হাওয়ায় সেই কালো ভাবটা নেই, শ্যমলা মেয়েকে দেখে অনেক ভাল লাগছে আয়নালের। শিলার গায়ের রঙ নিয়ে পরিবারে একটা উদ্বেগ ছিল। এখন ওকে দেখলে আর এতো উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। শিলা যেন আয়নালের মনের ভাবটা পড়তে পারছে। ও আয়নালের গা ঘেষে দাঁড়ায়। মামণিটা তো দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল ভাবী, বলেই আয়নাল শিলার থুতনিতে হাত রেখে মুখটাকে উঁচু করে ধরে কাছে থেকে দেখে।
শিলাও চাচার বুকে মাথা এলিয়ে দেয়। আয়নাল ওর কাধে হাত রাখে। শিলা আরও ঘনিষ্ট হয়। কিছুক্ষণের জন্য কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়, অদ্ভূত এক শিহরণ অনুভব করে। শরীরের ভেতর যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেল। আয়নাল ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চুলের ভেতর চাচার আঙুলের স্পর্শে কেঁপে ওঠে শিলা। আয়নালের হাত যখন শিলার ঘাড় ছুঁয়ে কাধে আসে তখন শিলা নিথর হয়ে যায়। ওর পা কেমন যেন ভারি হয়ে ওঠে। আয়নাল এসবের কিছুই টের পায় না। শিলা আয়নালকে চেপে ধরে বলে এতদিন পরে এলে? হামিদার ডাকে সবাই খাবার টেবিলে আসে। শিলা সোজা বাথরুমে ঢুকে। আয়নায় নিজেকে ভাল করে দেখে। ওর ঠোঁট কাঁপছে। শরীরও। এর আগে শিউলির কাছে শরীরে যৌন অনুভূতি নিয়ে শুনেছে। শুনেছে মাস্টারবেশনের কথা। আজ তা নিজেই উপলব্ধি করছে। শিলা যেন এক নতুন দুনিয়া আবিষ্কার করেছে এমন একটা আনন্দ অনুভূতি নিয়ে বের হয়ে আসে। ফুরফুরে মেজাজে খাবার টেবিলে যায়।
দুই কামরার ছোট বাসায় আয়নালের রাতে শোবার ব্যবস্থা নিয়ে হামিদা কথা বলে ওসমানের সাথে। বসার ঘরে বিছানা পেতে ঘুমাতে তার কোনো অসুবিধা হবে না বলে জানায় আয়নাল। আমি তো বাইরের মেহমান নই, আমাকে নিয়ে অযথা ভাবছো কেন? শিলা আয়নালকে তার ঘরে ঘুমাতে বললেও আয়নাল তা হেসে উড়িয়ে দেয়। আয়নালের উষ্ণতায় নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের পর থেকেই তার পরশ পেতে ইচ্ছে করছে শিলার। ভেতরে ভেতরে কেমন যেন অস্থির লাগছে তার। খাবার পর ছাদে যেতে পারে কিনা ভাবতে ভাবতেই তার মনে হলো শীতের রাতে ছাদে যেতে বললে যদি যেতে না চায়। মা যদি নিষেধ করে। এসব ভেবে চেপে যায় শিলা। মা বাবা ঘুমাতে গেল। চাচাও শুয়ে পরেছে।
শিলা নিজের ঘরে পড়তে বসেছে। পড়ায় মন বসছেনা। টেবিলে বসে শুধুই চাচার কথা ভাবছে। মাথা ঠিক কাজ করছে না। সজীবও শুয়ে পরেছে। ঘরের ভেতর পায়চারি করতে থাকে শিলা। নিজেকে যতই দূরে সরাতে চাইছে ততোই যেন চাচার সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করছে। চাচার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। মনে মনে ভয় পাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘর ছেড়ে বাইরে আসে শিলা। খাবার টেবিলে জগ থেকে গ্লাসে জল ঢালে। জল খায়। আরেক বার জল ঢেলে গ্লাস হাতেই চাচার কাছে যায় শিলা। আস্তে করে ডাকে ঘুমিয়ে পড়েছ চাচা? আয়নাল বলে, নারে ঘুম আসছেনা। চাচা জেগে আছে জেনেই পাশে বসে শিলা। আয়নালের শরীরে হাত রাখে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে বাড়ির বাইরে অচেনা জায়গা বলেই হয়তো ঘুম আসছে না তোমার। জল খাবে, বলেই গ্লাস এগিয়ে দেয়। আয়নাল উঠে বসে। আবছা আলোয় গ্লাস হাতে নিয়ে জল খায়। গ্লাস ফিরিয়ে দিতেই শিলা আয়নালের হাত ধরে বলে চলো তবে ছাদে যাই। বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে আসলে তোমার ঘুম আসবে।
আয়নাল একটু আমতা আমতা করে বলছে, এই শীতের রাতে ছাদে? কুয়াশায় ভিজে যেতে হবে, থাক বলেই শুয়ে পরতে চায়। কিন্তু শিলা কিছুটা জোর করেই টেনে তোলে আয়নালকে। তোমার শাল গায়ে চলো। আস্তে করে দরজা চাপিয়ে দুজনে বাইরে আসে। চাচাকে কিছুটা জড়িয়ে ধরে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে আসে শিলা। আয়নাল বলে, বলেছিলাম না কুয়াশায় কিছু দেখা যাবেনা। এখন দেখলি তো? দুহাত দূরেই কিছু দেখা যায়না। তবে তো ভালোই হলো তুমি হারিয়ে যাও আমি তোমায় খুঁজে বের করি আর আমাকে করবে তুমি, বলেই আয়নালের হাতে চাপ দেয়। এখন এসব করতে গেলে ঠাণ্ঠা লেগে যাবে, চল এবার বাসায় ফিরে যাই। মাত্রতো এলাম, কিছুক্ষণ থাকি। ঠিক আছে আমি না হয় তোমাকে জড়িয়ে থাকব তবেই তো আর ঠাণ্ঠা লাগবে না, বলেই আয়নালের শালের ভেতর লেপ্টে যায় শিলা।
আয়নাল চুপ করে থাকে। আয়নালের ভেতরেও উত্তাপ বাড়ছে, কিন্তু ভাইজির কথা ভেবে নিজেকে সংযত করে। শিলা আয়নালকে চেপে ধরে বুকে মুখ রেখে আস্তে করে বলছে এবার কি শীত লাগছে তোমার? আমার কিন্তু বেশ ভাল লাগছে। তোমার উষ্ণতায় আমার এই কুয়াশায় ভিজতে ইচ্ছে করছে। শিলার ঘন নিঃশ্বাস আর নরম স্তনের পরশ পায় আয়নাল। এরপর ঘরে ফিরে আসে। আয়নালের পিছু পিছু যায় শিলা। আয়নাল শুয়ে পরলে তাকে লেপ দিয়ে ঢেকে দিয়ে পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আয়নাল কিছু বলতে চাইলে শিলা বলে তোমাকে ঘুম পারিয়ে দিয়েই চলে যাব। আয়নাল পাশ ফিরে শোয়। লেপের ভেতর ঢুকে পড়ে শিলা। আয়নালকে জড়িয়ে ধরে। আয়নাল কোন রকমে শিলাকে নিবৃত করতে না পেরে ওকে কাছে টেনে নেয়। এবার ঘরে যা বলে বিদায় করে। অনন্যোপায় হয়ে শিলা নিজের ঘরে চলে যায়। সজীব বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আস্তে করে পাশেই শুয়ে পরে শিলা। কাত হয়ে শুয়েই অনুভব করলো তার ঊরুসন্ধি বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে।
সে যেন কিসের অভাব বোধ করছে। চাচাটা যেন কেমন, একটু আদর করে দিলে কি হতো। বান্ধবীদের কাছে তাদের চাচা-মামাদের নিয়ে কত কথা শুনেছে সেদিক থাকে তার চাচা যে আলাদা। চাচার সাথে এমন আচরণে নিজের কাছেই এখন লজ্জা লাগছে। চলবে