মেয়েদের স্রাবজনিত কিছু কথা

ডা. নাজমুল ইসলাম

প্রকাশিত : আগস্ট ২৯, ২০১৮

মেয়েদের যোনিপথে অনেক সময় বিভিন্ন রস নিঃসৃত হয়। এসব রস যোনির ক্ষুদ্র গ্রন্থি ও জরায়ু থেকে নির্গত হয়। যোনিপথ দিয়ে বের হওয়া এই তরলটি বিভিন্ন পুরাতন কোষ এবং ধ্বংসাবশেষ নিয়ে বের হয়। এজন্য যোনি এবং প্রজনন স্থান নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। তবেই সুস্থভাবে জীবনযাপন করা যায়।

যোনি থেকে নির্গত স্রাবের পরিমাণ ব্যক্তিভেদে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক হয়ে থাকে। স্রাবের রঙ, সঙ্গতি এবং পরিমাণ মাসিক চক্র থাকাকালীন সময়ে  দিন দিন পরিবর্তিত হয়। স্রাবের রং ও সঙ্গতি ঠিক স্বাভাবিক কীনা তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ স্রাব বিভিন্ন রঙের হতে পারে এবং তা থেকে সুস্থ বা অসুস্থ শরীরের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

স্রাবের বিভিন্ন রং ও অর্থ

হলুদ রঙের স্রাব: হলুদ স্রাব অস্বাভাবিক স্রাব। এটি  ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা যৌনবাহিত সংক্রমণের একটি চিহ্ন। দুর্গন্ধ পাওয়া যায় এই ধরনের স্রাবে।

বাদামি রঙের স্রাব: বাদামি রঙের স্রাব যাদের অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এধরনের স্রাব দেখা দেয়া মাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এটি অনেক সময় জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হয়ে থাকে।

সবুজ রঙের স্রাব: বাদামি রঙের স্রাবের মতো সবুজ স্রাবও স্বাভাবিক নয়। এটি জীবাণু সংক্রমণ বা যৌনবাহিত সংক্রমণের একটি চিহ্ন যেমন ট্রাইকোমোনিয়াসিস। কোনো মহিলার সবুজ স্রাব অনুভব হওয়া মাত্র ডাক্তার দেখানো উচিত। যদি সংক্রমণ চিহ্নিত হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।

সাদা রঙের স্রাব: অধিকাংশ সাধারণ স্রাব পরিষ্কার বা সাদা হয়। এটি পিচ্ছিল বা ডিমের সাদা অংশের মতো হতে পারে। একজন নারীর যৌন উত্তেজনা কিংবা গর্ভাবস্থার সময় এধরনের স্রাব হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট থাকে।

ধূসর রঙের  স্রাব: ধূসর রঙের স্রাব অস্বাস্থ্যকর এবং এটা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত একটি উপসর্গ হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে যোনিপথে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো, চুলকানি, অস্বস্তি, তীব্র দুর্গন্ধ, যোনিদ্বার বা যোনিপথ লাল হয়ে থাকে। ধূসর স্রাব হলে অনতিবিলম্বে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

পুরু ও সাদা স্রাব: ছত্রাক সংক্রমণে পুরু ও সাদা স্রাব নির্গত হয়। ছত্রাকের সংক্রমণে যোনিপথে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য লক্ষণগুলি হচ্ছে, এ স্রাব পনির মতো, চুলকানি, অস্বস্তি এবং পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি থাকবে।

মোটামুটিভাবে ৯০ শতাংশ নারী তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ছত্রাক সংক্রমণের সম্মুখীন হবে। ছত্রাক সংক্রমণ স্পর্শজনিত নয়। রোগীর ব্যবহার করার জন্য ওভার-দ্য-কাউন্টার অ্যান্টি ফাংগাল ক্রিম পাওয়া যায়। যদি লক্ষণগুলি চিকিৎসার সাথে উন্নত না হয় এবং চার বছরের অধিক সময়ব্যাপী সংক্রমণে থাকে, তবে ডাক্তার দেখতে হবে।

প্রতিরোধ: স্বাভাবিক যোনিস্রাব প্রতিরোধ করা প্রয়োজন হয় না। নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলি গ্রহণ করা গেলে অস্বাভাবিক  স্রাবকে কখনও কখনও প্রতিরোধ করা যেতে পারে:

ক. তুলোর তৈরি আন্ডারওয়্যার পরিধান করা, যা আর্দ্রতা শুষে এবং ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
খ. কনডম ব্যবহার করা। যৌনবাহিত রোগের নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা এবং নিরাপদ যৌন অনুশীলন করা।
গ. সুগন্ধিযুক্ত সাবান এবং প্যাড ব্যবহার না করা। সুগন্ধযুক্ত পণ্যগুলি যোনিকোষের ব্যাকটেরিয়ার প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ব্যাহত করে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

লেখক: মেডিকেল অফিসার, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ