মেহেদী উল্লাহর কলাম ‘ফোকের স্বত্ব ও সত্তা’

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০২০

বাংলাদেশের ফোকলোরের সবচেয়ে আলোচিত শাখা বোধহয় লোকগান। অন্যান্য লোক উপাদানের ধারকও নাগরিক মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এমনকি এলিট শ্রেণিও হয়। তবে তা অভ্যাস কিংবা শখের বশেই বেশি। যেমন, লোকসংস্কারগুলো অভ্যাস জাত আর ফোক মটিফের জামা, ব্যাগ ব্যবহার বিলাস ও শখে। কিন্তু লোকগানের পপুলার ফর্ম তৈরি হয়েছে। লোক উপাদানগুলোকে তাই শ্রেণি দিয়ে আমি আর দেখি না, দেখি উপাদানের চারিত্র্য দিয়ে। গ্রামে বা নগরে এর ব্যবহার।

লোক উপাদানগুলোকে বলা হয় সংহত সমাজের সৃষ্টি। তাই এর সামষ্টিক স্রষ্টাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, ব্যষ্টিক নয়। ফোক কালচারের অনেক উপাদানই পপুলার কালচারের উপাদান হয়ে ওঠে। জননন্দিত হয়ে সঞ্চারিত হতে থাকে, বিনির্মিত হয়। এরমধ্যে লোকগীতিকে ধরা যাক। এর প্রচুর পাঠান্তর। ফোক ইলিমেন্টের স্বত্বাধিকারী শুরু থেকেই আপামর জনসাধারণ। নিজেদের প্রয়োজনে সৃষ্ট, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, ফোকের গ্রহীতা ও চাহিদা থাকায় নাগরিক সমাজ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নানা লোক উপাদান ব্যবহার করছে। যেমন, ফোক ফেস্ট, গৃহসজ্জায় লোক উপাদানের ব্যবহার ইত্যাদি।

লোক উপাদান প্রয়োজনে বা বাণিজ্যিকভাবে যেকেউ ব্যবহার করতে পারে— এটা সময় ও ইতিহাসবিদিত। তাই হয়ে আসছে। সেটি শাওন আপা করুক আর কালিকা দাদা করুক। এই নিয়ে আমার কথা নাই। কিন্তু কথা আছে এই জায়গায়, ফোক এলিমেন্ট লোকসমাজ যেভাবে স্বাভাবিক প্রয়োজনে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সেই বৈশিষ্ট্য থাকে কিনা?

ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গানের কনটেক্সট নদীতে যা ফোক ফেস্টে তা নাই। নদীর কুলকুল ধ্বনি সাউন্ড সিস্টেমে আনতে হয় কৃত্রিমভাবে। ফোকের এই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যটিকে আমি বদ্রিলারের হাইপার রিয়েলিটি দিয়ে ব্যাখ্যা করি। এর একটা বিজ্ঞাপিত উদ্দেশ্য তৈরি হয়। লোকগান বলে যা খাওয়ানো হয় তা আর লোক থাকে না, যেমন লেবুর ফ্লেভার আর লেবু এক কথা নয়।

কাজেই সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে লোকগানের স্বত্ব নগরে না খুঁজে খুঁজতে হবে লোকসত্তা। ফোকের স্বত্ব থাকে না বলেই এটি ফোক। আর ফোকের সত্তা থাকে বলেই এটি ফোক। ফলে ফোকের স্বত্ব না তালাশ করে আসুন সত্তা খুঁজি।

লেখক: কথাসাহিত্যিক