মূসা আল হাফিজের কলাম ‘ডিএনএ ভাবতে বলে’

প্রকাশিত : জুলাই ২৭, ২০২১

ক্ষুদ্র অ্যামিবা থেকে নীলতিমি অবধি সকল জীবের সমস্ত জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে যে DNA, তার প্রতি লক্ষ্য করা যাক। ডিএনএর মিনিং হলো Deoxyribonucleic acid. ডি অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। কয়েক ধরনের ভাইরাসের কথা বাদ দিলে কোনো জীবের এমন সজীব কোষ নেই, যেখানে নেই ডিএনএ। সে হচ্ছে জীবনের ব্লুপ্রিন্ট বা নীলনকশা।

কোষের মধ্যে অন্য যেসব উপাদান থাকে, তার অণুর আকারের তুলনায় DNA অণু সবচেয়ে বড়। প্রজাতি অনুসারে DNA এর আয়তনের তারতম্য রয়েছে। একটা ব্যাকটিরিয়ার কোষের DNA এর দৈর্ঘ্য 1.4 mm। একজন মানুষের দেহকোষের DNA এর দৈর্ঘ্য 174 cm।

ক্ষুদ্র এই ডিএনএ কী কাজ করে? আমাদের দেহগঠনের শুরুর দিকে তাকান। মাতৃগর্ভে একটি Ovum বা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হলো একটি Sperm বা শুক্রাণু। উভয়ের মধ্যে রয়েছে ডিএনএ। উভয় ডিএনএ মিলে তৈরি হচ্ছে একটি নতুন ডিএনএ। জন্ম নিচ্ছে একটি নতুন কোষ।

নতুন কোষটি এরপর নিজেই নিজেকে করছে বিভাজিত। এক থেকে দুইয়ে, দুই থেকে চারে, চার থেকে আটে, আট থেকে ষোলোয়... কোষের সংখ্যা বাড়ছে আর জন্ম নিচ্ছে নতুন অঙ্গ। হাত, পা, নাক, কান, চোখ, মুখ... লাভ করছে মানব আকার।

এই যে মাতৃগর্ভে নিজের গঠন ও বর্ধন, তারপর জন্ম লাভ, বড় হতে থাকা এবং এই ধারায় আমাদের আজ, আগামীকাল, মরণ অবধি শরীরের যত কাজ, সবকিছু চালিত হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিএনএ দ্বারা। সে প্রতিটি জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহকের ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেহ গঠিত হয়েছে যতসব কোষে, তাদের কেন্দ্র হচ্ছে এই ডিএনএ।

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবকোষ যত কাজ করে, সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিএনএ প্রতিটি জীবন্ত জিনিসের biological activities বা জৈবিক সকল কাজ পরিচালনা করে। সে আমাদের সুস্থতার কেন্দ্রে থাকে। ত্বক কেটে গেল, হাড় ভেঙে গেল, জোড়াটা কে লাগায়? নিরাময়টা কীভাবে আসে? ডাক্তার তো কেবল সেলাই করে দেন, হাড়ের এক অংশকে আরেক অংশের সাথে বসিয়ে দেন, জোড়া লাগা ও নিরাময় নিশ্চিত করার কাজ করে ডিএনএর মধ্যে থাকা ব্যবস্থাপনা, যা মূলত নিরাময়ের তথ্যমালা। কোনো কোষই এই সিস্টেমের বাইরে নয়।

কত কোষ মিলে গঠিত আমাদের দেহ? প্রায় ৭০ থেকে ১০০ টিলিয়ন দেহকোষ মিলে মানবদেহের গঠন। এসব কোষের বিন্যাস ও শৃঙ্খলা বিস্ময়কর। প্রতিটি কোষে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য শিরা ও ধমনীর যে পাইপলাইন, তার দৈর্ঘ ৬০ হাজার মাইল। এর সর্বত্র কাজ করে যে ডিএনএ, তার মোট দৈর্ঘ্য ২০০০০০০০০০০ কি.মি.। কিন্তু সেই ডিএনএ এত সূক্ষ্ম যে, পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষ থেকে যদি ডিএনএ-কে আলাদা করে ফেলা হয়, সবগুলোকে চায়ের চামচে রাখলে চামচের তলানিতে তা পড়ে থাকবে!

মানবদেহের সকল কোষে যেসব ডিএনএ টেপ আছে, সেগুলোর একটির সাথে আরেকটি জোড়া লাগালে যে দৈর্ঘ্য হবে, তা দিয়ে পৃথিবী থেকে সূর্য অবধি দূরত্বকে ১০০ বার প্যাঁচিয়ে দিলেও টেপ ফুরাবে না! এত অসংখ্য টেপ? হ্যাঁ। কিন্তু একটি মাত্র টেপের কথা ভাবুন। মাত্র একটি টেপে  থাকে তিন বিলিয়ন জেনেটিক কোড। এই কোডগুলোকে আপনি চাইলেন পাঠ করতে। কোনো অলৌকিক উপায়ে আররি, ইংরেজি বা বাংলা ভাষায় তাকে অনুবাদ করলেন। তাকে গ্রন্থাকার দিলে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতো কমপক্ষে হাজার খণ্ডের বিশ্বকোষের দরকার হবে।

একটি ডিএনএ টেপে যদি হাজার খণ্ডের বিশ্বকোষ থাকে, গণনাতীত ডিএনএ টেপে কতকিছু রয়েছে? ভেবেছেন? ভাবুন। ডিএনএ রহস্য নিয়ে যখন ভাবলাম, মনে পড়ে গেল আল্লাহর বাণী,  وَفِي أَنفُسِكُمْ, আল্লাহর নিদর্শন তো তোমাদের নিজেদের সত্তায় ছড়িয়ে আছে। أَفَلَا تُبْصِرُونَ এরপরও তোমরা তা তলিয়ে দ্য্যখো না? সূরা যারিয়াত ২১