মুসলমানরা আজ অন্ধকারে তাদেরই অজ্ঞতার জন্য

মারিয়া সালাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৩, ২০১৯

সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই, এটি একটি বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য। পৃথিবীর সকল অপরাধী, সকল হত্যাকারী, সকল সন্ত্রাসীর একটা ধর্ম আছে। তা হলো, তারা সবাই একটা অন্ধবিশ্বাসের দাস। তাদের অন্ধবিশ্বাস তাদের ধর্মে পরিণত হয়েছে।

এখানে আইএস জঙ্গি, তালেবান, নাৎসিবাদী, ফ্যাসিবাদী, পুঁজিবাদী, ধর্মভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত ও মদদ দানকারী, শ্বেত সন্ত্রাসবাদী, কেবলামুখী বা ভ্যাটিকানমুখী সবাই এককাতারে দাঁড়িয়ে আছে। এদের নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তা তাদের চোখে, কানে আর অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছে। তারা একেকজন কূপমণ্ডুকে পরিণত হয়েছে, তাদের সামনে কেবল অন্ধকার আর সেই অন্ধকারে তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার ভুল ছবি দেখে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবাই এককাতারে অবস্থান করলে সারা বিশ্বব্যাপী কেন মুসলমানরা কেবল নিন্দার ভাগীদার? এর বড় একটা কারণ হলো, ওই অন্ধকূপের একদম নিচের স্তরে যাদের অবস্থান, তারাই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে বেছে নিয়েছে ইসলাম নামের অস্ত্র।

ক্ষমতায় যারা বসে আছে বা বসতে চায়, তাদের সবারই কোনো না কোনো ধর্মের উপরে ভর করেই টিকে থাকতে হয়। সৌদি সাম্রাজ্য বলেন, ইজরায়েল বলেন আর পশ্চিমাবিশ্ব বলেন সবার আসল শক্তি, ধর্ম। ক্ষমতার বাসনা ছাড়া ধর্মের প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। তার প্রমাণ, স্বয়ং যিশু। যিশু মানুষের ভালো চেয়েছিলেন, ক্ষমতায় যাবার উদ্দেশ্য থাকলে তার নীতি হয়তো ভিন্ন হতো বা তাকে ক্রুশে চড়িয়ে হত্যা করা হতো না। সে হয় যুদ্ধে জিতে পুরা মধ্যপ্রাচ্যে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতো নয়তো যুদ্ধের ময়দানে মরে গিয়ে ভণ্ড নবিদের তালিকায় নাম লিখাতো। যিশুর মৃত্যু বহু পরে তার নাম ভাঙিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে খৃস্টধর্ম, গড়েছে তারাই যারা তাকে হত্যা করেছিল। বুদ্ধের কোনো ধর্ম নাই, কারণ সে রাজতন্ত্রের মিথ্যা গরিমা পায়ে ঠেলে উল্টা সিংহাসন ছেড়ে পথে নেমেছিল।

শ্রীকৃষ্ণের গীতার জন্ম ধর্ম যুদ্ধের ময়দানে। সে যুদ্ধে ধর্ম রক্ষার নামে ভাই ভাইকে হত্যা করে রাষ্ট্র পত্তন করেছিল। পালদের সরিয়ে সেনরা ক্ষমতায় এসেছিল এই ধর্মের উসিলা দিয়েই। ধর্মের নামেই হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছিল আর নারীদের বানানো হয়েছিল সেবাদাসী। ইসলামও ব্যতিক্রম না। সেটা যারা ইসলামের ইতিহাস পড়েছেন, তারা ভালই জানেন। এমনকি মোঙ্গল বর্বররাও ইসলাম বিদ্বেসের নামে হত্যা করেছিল লাখ লাখ মুসলমান, ধ্বংস করেছিল মুসলমানদের তৈরি সভ্যতা। ক্রুসেডের যুদ্ধের কথা আর নাই বা বললাম।

এইসব ধর্ম যুদ্ধে সবচেয়ে মার খেয়েছে মুসলমানরা আবার সবচেয়ে বেশি নিন্দিতও তারাই। কিন্তু কেন? কারণ, তারা মার খেয়েও নিজেদের ভুলগুলো ধরতে শেখেনি, ক্রমশ সেই অন্ধকূপের তলানিতে যেয়ে ঠেকেছে। ক্রুসেডের পরেই খৃস্টানরা বুঝে গেছিল, চার্চকে আর মাথায় তুলে রাখা নয়, তাদের সরিয়ে দিতে হবে রাষ্ট্রক্ষমতার নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে। চার্চের কাজ চার্চ করবে, তবে তা হবে যুক্তি আর বিজ্ঞানের ভিত্তিতে। তারা বুঝেছিল, জ্ঞানের চর্চা ছাড়া নিজেদের উন্নতি সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছিল আমূল পরিবর্তন, তারা ধর্মগ্রন্থ নিয়ে মুখগুজে পরে থাকেনি, বরং প্রতিটি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিল, যা এখনও অব্যাহত।

আর ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই ক্ষমতালোলি রাজারা মধ্যপ্রাচ্যে রুদ্ধ করে দিয়েছিল সকল জ্ঞান আহরণের পথ। যে ভুখণ্ড একসময় জ্ঞান, বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা আর দর্শন চর্চার লীলাভূমি ছিল, সেখান থেকেই জন্ম নিল ধর্মীয় উগ্রবাদ। নিজেদের ক্ষমতা আর গোত্রভিত্তিক রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে ফতোয়া দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল জ্ঞানচর্চার সব রাস্তা। বলা হয়েছিল, মুসলমানদের কোরআন আর হাদিসের বাইরে আর কিছু পড়ার দরকার নাই। এভাবেই কালের বিবর্তনে অন্যরা যখন এগিয়ে গিয়েছে বহুগুণ, মুসলমানরা পিছিয়ে এসেছে ঠিক ততগুণ। তাই এই মাথামোটা জাতিকে দিয়ে অনেক সহজেই সব অপরাধ করিয়ে নেয়া যায়। যে জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়েনি, সেও ইসলামের নামে অন্যের গলা কাটতে চলে যাবে।

আপনি কোনোদিন পোপকে দেখবেন না, প্রকাশ্যে নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে বা অন্যধর্মের লোকের কল্লা নামানোর আদেশ দিতে। তাদের বক্তব্য থাকে কৌশলপূর্ণ আর নিয়ন্ত্রিত। সেটা তাদের বহুদিনের জ্ঞান চর্চার ফল। অপরদিকে, ইসলামের গুরুরা কী ধরনের বক্তব্য রাখে সেটা আমি না বললেও চলবে।

আজ সারাবিশ্বে সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি মুসলমানরা, এরপিছে কোনো বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র আছে, সেই ভুল কথা ভুলে যান। মুসলমানরা আজ অন্ধকারে তাদেরই অজ্ঞতার জন্য। আল্লাহ সবচেয়ে ভয়ানক নরক বরাদ্দ রেখেছেন মূর্খদের জন্য। আমরা বুঝি সেই নরকেই রয়েছি। ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রেখে জ্ঞানচর্চায় মনোযোগ না দিলে এই জাতির ধ্বংস অনিবার্য। আমাদের মূর্খামির দায়ভার কেউ নিবে না, অন্যের প্রতি অন্তরে ঘৃণা পুষে রাখলে ঈসাও আসবেন না শেষ রক্ষা করতে।