মায়া এঙ্গেল্যু
মায়া এঙ্গেল্যুর কবিতা ‘নিশ্চল জেগে আছি’
প্রকাশিত : মার্চ ২৮, ২০২১
তুমি হয়তো আমার কথা লিখবে ইতিহাসে
তোমার তেতো ও বানোয়াট মিথ্যে দিয়ে
আমাকে হয়তো পদদলিত করবে আবর্জনায়
কিন্তু এরপরও আমি উদিত হবো, ধুলো যেমন।
আমার উদ্যম কি তোমায় মর্মাহত করে?
তুমি দুঃখে বিজড়িত হয়েছো ক্যানো?
আমি এমনভাবে হাঁটি বলে? যেন আস্ত এক
তেলের খনিই পেয়েছি আমার বসার ঘরে?
সূর্য আর চাঁদগুলোর অবধারিত জোয়ার-ভাটার মতো
আর ঠিক যেমন করে আশা-ভরসা লাফিয়ে চলে
তেমন করে, এরপরও আমি উদিত হবো
তুমি কি আমাকে টুকরো ভঙ্গুর দেখতে চাও?
অবনত মস্তক আর নত দৃষ্টিতে?
যেন আমার অন্তঃস্থলের কান্নায় দুর্বল হয়ে
আমার দু`কাঁধ ঝরে পড়ে অশ্রুর ফোঁটার মতো?
আমার গর্ব কি তোমাকে বিক্ষুব্ধ করে?
তুমি কি সেটাকে খুব শক্তভাবে নাও না?
কারণ আমি এমন হাস্যোজ্জ্বল থাকি যেন
বাড়ির পেছনেই খুঁজে পেয়েছি একটা আস্ত সোনার খনি!
তোমার গুলিতে ঝাঁঝরা করতে পারো আমায়,
তোমার শ্যেন দৃষ্টি দিয়ে কেটে ফেলতে পারো
ঘৃণা দিয়ে খুন করতে পারো,
কিন্তু তবু আমি উদিত হবো বাতাসের মতো।
আমার আবেদন কি তোমাকে বিমর্ষ করে?
আর অবাক করে দেয় তোমাকে? যেমন করে
নাচতে থাকি আমি, যেন ঊরু জোড়ার মাঝে
আমি পেয়ে গেছি একটা হীরা?
ইতিহাসের লজ্জার কুটির থেকে বেরিয়ে
আমি উদিত হবোই,
একটা কষ্টময় অতীতের শিকড় ছাড়িয়ে
আমি উদিত হবোই
আমি একটা কালো বিশাল অস্থির সমুদ্র
যেসব অস্থির লাফিয়ে চলা গতি
তার স্রোতে ধারণ করে রাখি।
সব আতংক আর ভয়ের রাত পেছনে ফেলে
আমি উদিত হই, সব চমৎকার দিনের বিরতিতে
আমি উদিত হই, পিতামহদের দেয়া সেসব উপহার নিয়ে
আমি হয়ে যাই স্বপ্ন, আর আশা-ভরসার কৃতদাস
আর আমি উদিত হই
উদিত হই এবং
উদিত হই।
কবি পরিচিতি: কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান কবি ও কণ্ঠশিল্পী মায়া এঙ্গেল্যুর জন্ম ১৯২৮ সালের ৪ এপ্রিল। মারা যান ২০১৪ সালের ২৮ মে। তার জীবনে ছিল বৈচিত্র্যময়। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছিলেন সেক্স-ওয়ার্কার, নাইট ক্লাবের ড্যান্সার থেকে শুরু করে পরে লেখক ও সাংবাদিক। তার লেখা সাতটি আত্মজীবনীই মূলত তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। যার
মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল প্রথম আত্মজীবনী I Know Why the Caged Bird Sings (1969)। জীবনে পঞ্চাশটর বেশি ডিগ্রি তিনি অর্জন করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পান অসংখ্য পুরস্কার। Still I rise কবিতাটি ‘নিশ্চল জেগে আছি’ শিরোনাম দিয়ে বাংলায় অনুবাদ করেছেন তরুণ কবি রিফাহ সানজিদা।