মাহমুদ দারবিশ

মাহমুদ দারবিশ

মাহমুদ দারবিশের কবিতা ‘পরিচয়পত্র’

অনুবাদ: রথো রাফি

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০

মাহমুদ দারবিশের জন্ম ১৯৪২ সালে। তিনি ফিলিস্তিনের মানবতাবাদী কবি। তার কবিতার প্রতিটি বর্ণ স্বর্ণছোঁয়া। তিনি ছিলেন একজন প্রতিবাদী কবি। তার বেশিরভাগ কবিতাই ফিলিস্তিনকে ঘিরে আবর্তিত। শুধু ফিলিস্তিন নয়, গোটা আরবজুড়েই তার সুখ্যাতি। তিনি ছিলেন আরবি কবিতার উন্নয়ন প্রতিভূ। তার পাঁচটি কবিতা ইংরেজি থেকে বাঙ্লায়ন করেছেন রথো রাফি

লিখে রাখুন
    আমি আরব একজন
আর আমার কার্ডের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার
আট ছেলেমেয়ে আমার
আর নবম শিশুটি আসছে গ্রীষ্মের পরেই।
তা নিয়ে রাগ দেখানোর কী আছে?
আরও লিখে রাখুন।
    আমি আরব একজন
কঠোরশ্রমী কমরেডদের সঙ্গে কোয়ারিতে পাথর কাটি।
আমার আট ছেলেপিলে
তাদের জন্য যেভাবেই পারি রুটির টুকরো বাঁচিয়ে রাখি,
পাথর কুঁদে
জামাকাপড় আর বইখাতা কিনি
তবু আপনার দরজায় এসে ভিক্ষে করি না,
    আপনার দরজার চৌকাঠে এসে মাথা নোয়াই না।
    তা নিয়ে রাগ দেখানোর কী আছে?
আরও লিখে রাখুন।
    আমি আরব একজন ।
আমার নামের সামনে কোনো খেতাব নেই,
যেখানে সবকিছু ক্ষোভের ঘূর্ণি-স্রোতে পাক খায়
সেখানে আমি বড়ো ধৈর্যধরা মানুষ।
    আমার শেকড়
    শক্ত করে গেঁথে গেছে সময়েরও জন্মের আগে
    যুগটা পুজিবাদী হওয়ার আগেই
    সাইপ্রেস আর জলপাই গাছগুলোরও আগে,
    আগাছা বাড়বাড়ন্ত হওয়ারও আগে।
আমার বাবা চাষাপরিবারেরই একজন
    অভিজাত বা ডাকসাইটে কেউ নয়।
আর আমার বাবার বাবা ছিলেন চাষা
    কোনো যোগসূত্র বা বংশপঞ্জি নেই।
অক্ষরজ্ঞানের আগেই আমাকে
     ধারণা দিয়েছেন ওই দাম্ভিক সূর্যটা সম্পর্কে
আর আমার বাড়িটা আসলে দরোয়ানেরই একটি ঘর।
    নলখাগড়া ও বেতের বেড়া-দেওয়া।
আমার কুলজি কি তুষ্ট করলো আপনাকে?
    আমি একটা নাম যার কোন খেতাব নেই।
লিখে রাখুন।
    আমি আরব একজন।
চুলের রং: ঘন কালো।
চোখের রং: বাদামি।
সনাক্তকারী চিহ্ন:
    মাথার উপর কেফিয়ের ঠিক উপরে যে ’ইকাল শিরাটি
    যেই ছুঁতে যায় তাকেই খামচে দেয়।
ঠিকানা:
    এক গ্রাম থেকে এসেছি, প্রত্যন্ত এলাকা, ভুলে গেছি
    গ্রামের অলিগলির কোন নাম নেই
    আর সব মানুষই মাঠেময়দানে আর পাথরের কোয়ারিতে।
    তা নিয়ে রাগ দেখানোর কী আছে, বলুন?
লিখে রাখুন।
    একজন আরব আমি।
আপনি আমার পিতৃপুরুষের আঙ্গুর বাগান ছিনিয়ে নিয়েছেন
    আর কেড়ে নিয়েছেন জমিজমা
    ছেলেপিলেদের নিয়ে যাতে আবাদ করতাম আমি
    আর আপনি আমাদের জন্য আমাদের নাতিপুতিদের জন্য
    কিছুই রাখেন নি, এইসব পাথুরে পাহাড় ছাড়া।
    আপনার সরকার তাও কি ছিনিয়ে নেবে
    আপনার সরকার যেমনটা বলে থাকে?
তাহলে!
    প্রথম পৃষ্ঠার একেবারে ওপরে লিখে রাখুন:
    মানুষকে আমি ঘেন্না করি না,
    কারো সম্পত্তিতে আমি নাকও গলাই না।
আর তারপরও যদি আমাকে উপোসই করতে হয়
    দখলদারদের মাংস চিবিয়ে খাবো আমি।
    আমার ক্ষুধা আর আমার ক্রোধের হাত থেকে
    সাবধান, খুব সাবধান!